বড়লেখা (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় শবে কদর ও ঈদুল ফিতরের দিনে দিনরাত বিদ্যুৎ না থাকায় গ্রাহকদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে ,ধর্মপ্রান মুসল্লীরা এবাদত-বন্দেগী করতে পারেন নাই।

এছাড়া ঘন ঘন বিদ্যুত বিভ্রাট ও লোডশেডিংয়ের কারনে জন দূর্ভোগ চরমে উঠেছে। বিশ্বকাপ ফুটবল খেলার সময়ও বিদ্যুৎ না পেয়ে উত্তেজিত বিদ্যুৎ অফিসে আক্রমন করে ব্যাপক ভাংচুর করলে বিদ্যুৎ সরবরাহের কোন উন্নতি হয়নি। বিদ্যুৎের এ অচলাবস্থা কতদিনে দূর হবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ তা সঠিক করে বলতে পারছেনা। বিদ্যুৎ বিভাগের চরম গাফলতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ মোঃ শাহাব উদ্দিন।

বড়লেখা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সহ একাধিক সূত্রে জানা গেছে ,মৌলভীবাজার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতাধীন বড়লেখা জোনাল অফিসে বর্তমানে ২৭হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক থাকলেও গ্রাহকরা প্রকৃত বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ঘন ঘন বিদ্যুত বিভ্রাট ও লোডশেডিং বড়লেখায় নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি সপ্তাহের শবেকদর ও ঈদুল ফিতরের দিনরাত টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুত না থাকায় ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা এবাদত-বন্দেগী করতে পারে নাই। বিদ্যুৎের লুকোচুরিতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে, যে কোন সময় বড় ধরনের কোন অনাকাংখিত ঘটনা ঘটতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। বিশ্বকাপ খেলার সময়ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারনে উত্তেজিত জনতা বড়লেখা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে। আরইবি ও পিডিবির দ্বন্দের কারনে গ্রাহকদের ভোগান্তি পোহাতে হয় বলে জানা গেছে।

পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যুৎের সমস্যা সমাধানের জন্য কুলাউড়ার পিডিবির সাবষ্টেশনের কাছে পাওয়ার গ্রীড অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) নতুন গ্রীড স্থাপনের পাশাপাশি বড়লেখার পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কুলাউড়া বড়লেখা পর্যন্ত ৩০কিলোমিটার ৩৩কেভির নতুন লাইন নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। তবে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতিরি নতুন ৩৩ কেভি লাইনে ত্রুটি ধরা পড়ায় বিদ্যুৎের অচলাবস্থা কবে দূও হবে তা সঠিক কওে কেউ বরতে পারছেনা।

গত শুক্রবার শবে কদরের দিন পিজিসিবির নতুন সাবষ্টেশন থেকে পল্লী বিদ্যুৎের ৩৩ কেভির নতুন লাইন দিয়ে পরীক্ষামুলক ভাবে সংযোগ চালু করলেও বিভিন্ন স্থানে ইনসুলেটর ফেটে গিয়ে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। পুনরায় পুরাতন ফেঞ্চুগঞ্জের ৩৩কেভির লাইনে বড়লেখা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সংয্গো স্থাপন করলে ঈদুল ফিতরের আগের রাত (২৮ জুলাই) আবার টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ বিপর্যয় ঘটে। শুরু হয়ে বিদ্যুৎ আসা-যাওয়ার খেলা । ফলে বাসা-বাড়ীতে টিভি ফ্রিজ সহ ব্যবহৃত বহু ইলেকট্রিক জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে গেছে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, নিম্নমানের জিনিসপত্র দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের ৩৩কেভির নতুন লাইন নির্মান করায় ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেছে। ফলে পল্লী বিদ্যুৎের নবনির্মিত লাইন থেকে বর্তমানে গ্রাহকরা কোন সুবিধা পাচ্ছেন না।

বড়লেখা পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক ডাঃ দিগ্রেন্দ্র দেবনাথ, মসরুল আলম চৌধুরী, জুনেদ রায়হান রিপন উত্তম নাথ, সামছুল ইসলাম, মাওলানা আব্দুস সোবহান সহ অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, ‘বিদ্যুৎের উন্নতি সাধন না হলে বড়লেখার সকল গ্রাহকদের নিয়ে কঠোর কর্মসুচী গ্রহন করা হবে। প্রয়োজনে বিদ্যুৎের উন্নতি সাধন না হলে বিদ্যুৎের বিল প্রদান বন্ধ রাখা হবে।’

এ ব্যাপারে বড়লেখা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ডিজিএম নীল মাধব বণিক শবে কদর ও ঈদুল ফিতরের দিনরাত টানা ঘণ্টার পর ঘন্টা বিদ্যুত না থাকার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ‘বড়লেখায় প্রতিদিন নয় মেগাওয়াট বিদ্যুৎের চাহিদার বিপরীতে প্রতিদিন পিডিবি থেকে চার থেকে পাঁচ মেগাওয়াট পাওয়ায় নিয়মিত লোডশেডিং করতে হচ্ছে। প্রায় ৬০কিলোমিটার পথ মাড়িয়ে হাওর ও পাহাড়ী এলাকার মধ্য দিয়ে ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে ৩৩ কেভি বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন আসায় বিদ্যুৎের ইন্টারেপশন হয়ে থাকে। ফলে বিদ্যুৎের বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটছে। নবনির্মিত ৩৩ কেভি লাইনের ত্রুটি সারিয়ে পিজিসিবির গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ এবং বড়লেখা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সাবষ্টেশনে ১০ মেগাওয়াটের স্থলে ১৫ মেগাওয়াট চাহিদা সম্পন্ন সাবষ্টেশন ষ্টেশন নির্মান করা হলে বিদ্যুৎ বিপর্যয় কমে আসবে, লোডশেডিংও কমবে। তবে সময় লাগবে।

বিদ্যুৎ বিভাগের চরম গাফলতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় এমপি, জাতীয় সংসদের হুইপ মোঃ শাহাব উদ্দিন। এ ব্যাপারে হুইপ মোঃ শাহাব উদ্দিন বিষয়টি সুরাহার জন্য ঢাকায় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলবেন বলে এ প্রতিনিধিকে জানিয়েছেন।

(এলএস/এটিআর/আগস্ট ০১, ২০১৪)