চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি : ‘দীর্ঘ ২২ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের সুফল হিসেবে খাসজমির স্থায়ী বন্দোবস্তের দলিল পেতে যাচ্ছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার বিলকুড়ালিয়ার ১ হাজার ৩১৩টি ভূমিহীন পরিবার। যার মধ্যে ১৮০টি স্বামী পরিত্যক্তা ও বিধবা পরিবার রয়েছে।

গত জুলাই মাসে চাটমোহর উপজেলা কৃষি খাসজমি বন্দোবস্ত কমিটি কর্তৃক ভূমিহীন পরিবারগুলোর খাসজমির দরখাস্ত অনুমোদিত হয়ে বর্তমানে জেলা প্রশাসকের কাছে চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।’
বৃক্ষরোপন অভিযান-২০১৪ উপলক্ষ্যে মঙ্গলবার সকালে উপজেলার হরিপুর দূর্গাদাস স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে আয়োজিত ভূমিহীনদের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান কৃষি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মো: মকবুল হোসেন এমপি।
ভূমিহীন উন্নয়ন সংস্থা (এলডিও)’র নির্বাহী পরিচালক মুক্তিযোদ্ধা কেএম আতাউর রহমান রানা মাষ্টারের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট সামসুদ্দিন খবির, পৌর মেয়র মির্জা রেজাউল করিম দুলাল, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রওশন আলম, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুব্রত কুমার সরকার, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব এলাহী বিশু, হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মকবুল হোসেন।
এলডিও’র প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর নুরে আলম সিদ্দিকী মঞ্জুর সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে ভূমিহীন নেতা আনোয়ার হোসেন, ভূমিহীন নেত্রী রমেছা খাতুন, ভূমিহীন সংগঠক ইসরাইল আলম, সাবেক ভিপি আব্দুল আলিম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশন (বিএনএফ)’র সহযোগিতায় এবং ভূমিহীন উন্নয়ন সংস্থা (এলডিও)’র উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে ‘স্থানীয় সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে দারিদ্রতা বিমোচন প্রকল্প’র আওতায় ১ হাজার ৩১৩টি ভূমিহীন পরিবারকে একটি করে পেয়ারা ও একটি করে মেহগনি গাছের চারা বিতরণ করা হয়। এছাড়া হরিপুর স্কুল এন্ড কলেজের তিন শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকেও চারা দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সাল থেকে বিলকুড়ালিয়ার ৩৭০ একর খাসজমিতে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে নানা চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে ভূমিগ্রাসীদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে একসনা লীজ নিয়ে চাষাবাদ করে আসছে ভূমিহীনরা। প্রায় প্রতিবছরই এই খাসজমি থেকে ২৫ হাজার মণ ধান উৎপাদন করে নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। একসময় অর্ধাহারে অনাহারে থাকা ভূমিহীনরা আজ তিনবেলা পেটপুরে খেতে পারছেন। একইসাথে নিজেদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ঘটিয়ে সন্তানদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করাতে পারছেন। এই দীর্ঘ ২২ বছরে ভূমিগ্রাসীদের প্রায় ৪০টি মামলা মোকাবেলাসহ বহু হামলা প্রতিরোধ করে খাসজমি দখলে রেখে সরকারী স্বার্থ রক্ষা করে সফল হয়েছে ভূমিহীনরা। এই প্রতিরোধ করতে গিয়ে খুন হয়েছে কাশেম নামের এক ভূমিহীন। আহত হয়েছে হানিফ, মতিজান সহ শতাধিক ভূমিহীন। আর মামলায় হাজতবাস করেছে তিন শতাধিক ভূমিহীন নারী-পুরুষ।
(এসএইচএম/এএস/আগস্ট ০৫, ২০১৪)