স্টাফ রিপোর্টার : সব ধরনের ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদ ৬ শতাংশ বাস্তবায়নে সরকার কঠোর বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আগামী এপ্রিল থেকেই এটি বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বুধবার (১ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠেক শেষে এ কথা বলেন তিনি।

১ জানুয়ারি থেকে ব্যাংক খাতে শিল্প ঋণে সুদহার ৯ শতাংশ বাস্তবায়নের কথা ছিল কিন্তু সেটা এপ্রিল পর্যন্ত গেল- এমন প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ এবং আমানতের সুদ ৬ শতাংশ বাস্তবায়নের বিষয়টি প্রথম থেকেই ছিল। কিন্তু প্রথম দিকে এটি আমরা ফেইজ ওয়াইজ বাস্তবায়ন করবো বলে ধারণা ছিল।’

তিনি বলেন, কিন্তু পরে দেখলাম যে, শুধু আমরা ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ঋণে সুদহার ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করি তাহলে অনেক ইন্ডাস্ট্রি বাদ পড়বে, অনেক খাত বাদ পড়ে যাবে। এদের বলা হবে তোমাদেরটা ম্যানুফ্যাকচারিং না, কবে বসিয়েছ, লাইসেন্স চাই বিভিন্ন কথাবর্তা বলবে।

এটাকে এলিমিনেট করার জন্য প্রধানমন্ত্রী বললেন যদি সফলতা পেতে চাও তাহলে সব ঋণগ্রহীতাকে এ সুবিধা দাও। কোন সেক্টর ঋণ নিলো সেটা তার ব্যাপার। ঋণগ্রহীতা যাই করবেন তাতেই দেশের লাভ হবে। ট্রেড করলেও দেশের লাভ হবে, একটি ইন্ডাস্ট্রি, সেলুন করলেও লাভ হবে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন যে, সব খাতেই এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। সে জন্য কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

তিনি বলেন, এরপর যখন আমরা ব্যাংকারদের সঙ্গে বসলাম তখন তারা বললেন যে, যেহেতু একরকম আইডিয়া নিয়েছিলাম, এখন আরেকটা আইডিয়া দিচ্ছেন…। পাশাপাশি আমাদের কিছু শর্ট টার্ম ডিপোজিট আছে যেগুলো দু-তিন মাসের মধ্যে ম্যাচিউর করবে তাই আমরা এটি বাস্তবায়নে তিন মাস সময় চাচ্ছি। তবে এটি তারা বাস্তবায়নে একমত, এটা বাস্তবায়ন করা উচিত বলেও জানিয়েছেন তারা। এ জন্যই আমরা তাদের তিন মাস সময় দিয়েছি। আগামী এপ্রিল থেকেই আশা করি এটি বাস্তবায়ন হবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ জন্য সার্কুলার ইস্যু করা হবে, না হলে মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হবে। এটা অলরেডি সিদ্ধান্ত হয়েছে, সার্কুলার ইস্যু না করলেও তারা (ব্যাংকাররা) এটি বাস্তবায়ন করবে। তারাও তো সরকারের অংশ। সুতরাং এটা করবে।’

সব ক্ষেত্রেই কী ডিপোজিট ৬ শতাংশ হবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ডিপোজিটের জন্য কোনো ব্যাংকই কাউকে ৬ শতাংশ বেশি সুদের অফার করতে পারবে না। সিঙ্গাপুর কিংবা মালয়েশিয়ায় ব্যাংকে টাকা রাখলে যিনি টাকা রাখেন তাকেই ব্যাংকে টাকা দিতে হয়। আমাদের মতো দু-একটি দেশে ব্যাংকে টাকা রাখলে হয়তো ডিপোজিটে দু-তিন পার্সেন্ট ইন্টারেস্ট বেশি সুদ দেয়া হয়। এটা আর সইতে পারছি না। সে কারণে কঠিন সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।

অর্থমন্ত্রী বলেন, এটা আমিও ফিল করি যে, ওভার নাইট অথবা তিন বা ছয় মাসের ভেতরে এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। কিন্তু উপায় ছিল না। না হলে এ শিল্পায়ন হবে না। এ দেশে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানো যাবে না।

সরকারি ডিপোজিট ফিফটি ফিফটি থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সরকারি ডিপোজিট সরকারি-বেসরকারি উভয় ব্যাংককে দেব। পাবলিক ব্যাংকগুলো সবই প্রায় বড়। কিন্তু প্রাইভেট সেক্টরে অনেক বড় ব্যাংকও আছে আবার ছোট ব্যাংকও আছে। তাই এ ব্যাংকগুলোকে যার পেইড অব ক্যাপিটাল বেশি তাকে একটু বেশি দেয়া হবে, যার কম সে কম পাবে। বেসরকারি ব্যাংক খাতকে মোট ডিপোজিটের যে ৫০ শতাংশ দেয়া হবে সেটা থেকে ভাগ করে দেয়া হবে।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘যদি সরকারি-বেসরকারি উভয় ব্যাংকে ডিপোজিটের ক্ষেত্রে সুদহার ৬ শতাংশ করে দেয়া হয় তাহলে সবাই সরকারি ব্যাংকে টাকা রাখবে। তাই সরকারি ব্যাংকে ডিপোজিটের সুদহার হবে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকে ডিপোজিটের ক্ষেত্রে সুদহার হবে ৬ শতাংশ। যদি দুই জায়গায় ৬ শতাংশ করি তাহলে বিভিন্ন কারণে সবাই চলে যাবে সরকারি ব্যাংকে। এ জন্য আমরা এ ক্ষেত্রে আধা পার্সেন্ট গ্যাপ রাখছি।’

এর আগেও এটি বাস্তবায়নের কথা ছিল কিন্তু ব্যাংকগুলো সেটি করেনি -এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকাররা যদি ৬ শতাংশ সুদে ডিপোজিট পায় তাহলে ৯ শতাংশে ঋণ দিতে পারবে না কেন? আগে করেনি, সেজন্য সরকার এবার অনেক বেশি কঠোর। আগে তাদের (ব্যাংকগুলোর) ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছিল, কেউ কেউ বাস্তবায়ন করেছে, কেউ কেউ করেনি। কিছু পেতে হলে কিছু দিতে হবে। সুতরাং এবার আমরা বলছি অপেক্ষা করবো সাত দিন তবুও বাস্তবায়ন করবো।’

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ০১, ২০২০)