স্টাফ রিপোর্টার : মোটা অঙ্কের লোকসানে পড়ার তথ্য আসায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ওষুধ ও রসায়ন খাতের কোম্পানি এসিআই লিমিটেডের শেয়ারের দামে বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) বড় ধরনের পতন হয়েছে।

একদিনে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম কমেছে ১৪ টাকা ৬০ পয়সা বা ৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এতে দুই বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম সর্বনিম্নে নেমেছে। যা সার্বিক শেয়ারবাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্য সূচক ঋণাত্মক করতে যে কয়টি প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে তার মধ্যে স্থান করে নিয়েছে এসিআই। শুধু এসিআইয়ের কারণে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক কমেছে ১ দশমিক ১৫ পয়েন্ট।

এদিন সকালে ডিএসইর মাধ্যমে ২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর সময়ের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে এসিআই। তিন মাসের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে ছয় টাকা ৯৮ পয়সা লোকসান করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

বড় ধরনের এই লোকসানের তথ্য আসায় লেনদেনের শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারের দাম কমতে থাকে। কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন শুরুর দাম ১৯৫ টাকা হলেও এক পর্যায়ে তা ১৮০ টাকায় নেমে আসে। তবে লেনদেন শেষে শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ১৮২ টাকা ৯০ পয়সায়।

এর আগে নিয়মিত মুনাফা করা এবং শেয়ারহোল্ডারদের মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দেয়া এসিআই ২০১৮ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে বড় ধরনের লোকসান দেখায়। কোম্পানিটি ওই প্রান্তিকে পাঁচ কোটি ৪৪ লাখ টাকা লোকসান দেখায়। এরপর থেকেই প্রতিষ্ঠানটির লোকসানের পাল্লা দিন দিন ভারী হচ্ছে।

এসিআইয়ের লোকসান নিয়ে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে সমালোচনাও করা হয়েছে। ২০১৮ সালের লোকসান নিয়ে ডিএসইর একাধিক বোর্ড সভায় আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে এসিআই লিমিটেডের আর্থিক তথ্য বিশেষ নিরীক্ষার দাবি জানায় ডিএসই।

ডিএসইর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, এসিআই গত ১০ বছর ধরে তার রিজার্ভ থেকে লোকসানের বিপরীতে ভর্তুকি দিচ্ছে। ৩৬ কোটি টাকা মূলধনের কোম্পানিটি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের লোকসানের নামে প্রায় ৯০০ কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে।

তবে ডিএসইর অভিযোগের বিষয়ে বিএসইসি পরবর্তীতে আর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অপরদিকে এসিআইয়ের লোকসানের পাল্লা প্রতিনিয়ত ভারী হচ্ছে। সেই সঙ্গে সম্পদ মূল্য দেখা দিয়েছে নেতিবাচক প্রভাব।

চলতি হিসাব বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (২০১৯ সালের অক্টোবর-ডিসেম্বর) ব্যবসায় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান করেছে ছয় টাকা ৯৮ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি লোকসান ছিল ৮০ পয়সা। তবে তার আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় পাঁচ টাকা ৪৪ পয়সা।

আর চলতি হিসাব বছরের জুলাই-ডিসেম্বর এ ছয় মাসে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১২ টাকা ২০ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি মুনাফা পাঁচ পয়সা। পরিচালন ব্যয় এবং আর্থিক ব্যয় বেড়ে যাওয়া লোকসানে পড়ার কারণ হিসেবে জানিয়েছে কোম্পানিটি।

লোকসানের পাশাপাশি কোম্পানিটির সম্পদ মূল্যেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৪৪ টাকা ৭৬ পয়সা, যা ২০১৯ সালের ৩০ জুন শেষে ছিল ১৬৬ টাকা ৯৮ পয়সা।

এদিকে কোম্পানিটির পরিচালন নগদ প্রবাহের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো বা পরিচালন নগদ প্রবাহ দাঁড়িয়েছে ঋণাত্মক ২৪ টাকা ১৩ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি নিট অপারেটিং ক্যাশ ফ্লো ছিল ঋণাত্মক ২০ টাকা ১৮ পয়সা।

সাম্প্রতিক সময়ে লোকসান করলেও এসিআই লিমিটেড নিয়মিত ভালো মুনাফা করে আসছিল। ফলে প্রতিবছরই শেয়াহোল্ডারদের মোটা অঙ্কের লভ্যাংশ দিয়েছে। ২০১৯ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারহোল্ডারদের ১০০ শতাংশ নগদ ও ১৫ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দেয়।

এর আগে ২০১৮ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটি শেয়ারহোল্ডারদের ১১৫ শতাংশ নগদ এবং সাড়ে তিন শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে দিয়েছে। এছাড়া ২০১৭ সালে কোম্পানিটি থেকে শেয়ারহোল্ডাররা ১১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে পেয়েছে। তার আগের বছর ২০১৬ সালে শেয়ারহোল্ডাররা ১১৫ শতাংশ নগদ ও ১০ শতাংশ লভ্যাংশ হিসেবে পেয়েছে।

৫৭ কোটি ৩৭ লাখ ৩০ হাজার টাকার পরিশোধিত মূলধনের এ কোম্পানিটি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ১৯৭৬ সালে। প্রতিষ্ঠানটির মোট শেয়ার সংখ্যা পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ ৭২ হাজার ৯৫৭টি। এর মধ্যে ৩৫ দশমিক ২৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ২৪ দশমিক ১৩ শতাংশ রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। আর প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৪০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ৩০, ২০২০)