শরীয়তপুর প্রতিনিধি : শরীয়তপুর জেলার গোসাইরহাট উপজেলার সরকারি সামসুর রহমান কলেজের ছয়জন ছাত্রীকে কলেজ ক্যাম্পাসে যৌন হয়রানীর অভিযোগ পাওয়ায় কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সহ দশ ছাত্রের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। ঘটনার সাথে জরিত সন্দেহে পুলিশ ১ জনকে আটক করেছে। এদিগে কলেজ প্রশাসন অভিযুক্তদের ছাত্রত্ব বাতিলের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত সুপারিশ করেছেন এবং কলেজ হোষ্টেল ত্যাগ করতে নোটিশ দিয়েছেন।

মামলার বিবরণ ও কলেজ অধ্যক্ষ সূত্রে জানা গেছে, ১৭ ফেব্রুয়ারী সোমবার দুপুরে এই ঘটনার সূত্রপাত। সরকারি সামসুর রহমান কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইয়ামিন শিকদার জয় (২৫) ও মারুফ হোসেন (২০) সহ আরো ১০/১২ জন ছাত্র মিলে দুপুরে কলেজ ক্যান্টিনে যাওয়ার সময় ছয়জন ছাত্রীর পথরোধ করে।

এ সময় তারা ছাত্রীদের বাজে ধরেনর অঙ্গভঙ্গি করে এবং অশালিন ভাষায় কথা বলতে থাকে। এদের মধ্যে একাদ্বশ শ্রেনীর এক ছাত্রীকে তারা প্রেমের প্রস্তাব দেয়। তাদের অশালিন কাজগুলোকে তারা মোবাইলে ভিডিও চিত্র ধারণ করে। এ ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর লিখিত অভিযোগ করে ছাত্রীরা।

অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, “সোমবার দুপুরে আমরা কলেজের ক্যান্টিনে খাওয়ার জন্য যাচ্ছিলাম। পথের মধ্যে ইয়ামিন ও মারুফের নেতৃত্বে কয়েকজন ছেলে এসে আমাদের পথ রোধ করে দাঁড়ায়। তখন একজন ছেলে বলে দোস্ত কোনটাকে প্রপোজ করবো, বোরকা পড়াটাকে নাকি ড্রেস পড়াটাকে। এগুলো বলে হাসাহাসি শুরু করে তারা। তারা এমনভাবে দাঁড়িয়েছিল আমরা কোন ভাবেই যেতে পারছিলাম না। পরে আমাদের একজনকে ডাক দেয় এবং প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে তা মোবাইলে ভিডিও করে। এতেও তারা থামেনি, আমাদের পিছনে যেতে যেতে মোবাইল দিয়ে ভিডিও করতে থাকে । তারপরও আমরা ভয়ে কিছু বলিনি।

অভিযোগে আরো বলা হয়, পরের দিন মঙ্গলবার কলেজ ক্যাম্পাসে ঢোকার পথেও ইয়ামিনের নেতৃত্বে কয়েকজন ছাত্র বিভিন্ন ভাষায় আমাদের বাজে মন্তব্য করেন, যা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। মেহেদী মিরাজ নামের একটা বহিরাগত ছেলে আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয়। আর বলে বোম মেরে ফাটিয়ে দিবে। এ নিয়ে আমাদের পরিবারও এখন উৎকন্ঠা ও ভীতির মধ্যে রয়েছেন”।

যৌন হয়রানীর শিকার ছাত্রীদের লিখিত অভিযোগ পেয়ে কলেজ অধ্যক্ষ ফজলুল হক জরুরী ভিত্তিতে শিক্ষক পরিষদের সভা আহবান করেন এবং ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দুই কর্ম দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। কমিটি কলেজের সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে ঘটনার সত্যতা পেয়ে যান। এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে অধ্যক্ষ অবহিত করেন। সকলের সিদ্ধান্ত মতে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সহ প্রত্যেকের ছাত্রত্ব বাতিরের জন্য কলেজ প্রশাসন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত সুপারিশ প্রেরণ করেন।

এদিকে যৌন হয়রানীর শিকার এক ছাত্রী ১৯ ফেব্রুয়ারী গোসাইরহাট থানায় দশ ছাত্রের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১২। এজাহারভুক্ত আসামীরা হলো ১.ইয়ামিন শিকদার, পিতা- আব্দুর রাজ্জাক শিকদার, ২. মারুফ শাহরিয়ার, পিতা- জাকির হেসেন, ৩. মেহেদী মিরাজ, পিতা – শাহালম ফকির, ৪. আবুল কালাম আজাদ আরিফ, পিতা-আব্দুস সালাম চৌকিদার, ৫. শিমুল পাথার, পিতা- মনিন্দ্রা পাথার, ৬. রাসেল, পিতা- আজিজ ঢালী, ৭. শিশির মৃধা, পিতা- খোকন মৃধা, ৮. আরিফুল ইসলাম, পিতা- আনোয়ার হোসেন, ৯. নাইমুল ইসলাম, পিতা অজ্ঞাত এবং ১০. সাইফুল ইসলাম, পিতা অজ্ঞাত। মামলা দায়েরের পর গোসাইরহাট থানা পুলিশ এজাহারভূক্ত আসামী আবুল কালাম আজাদকে আটক করেছেন।

গোসাইরহাট উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম মোস্তফা এবং সাধারণ সম্পাদক আজমন হোসেন নয়ন বলেছেন, ২০১৬ সালে আমরা কলেজ কমিটি গঠন করে ইয়ামিন শিকদারকে সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্বে বসিয়েছিলাম। কলেজের ঘটনার পর আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। রিপোর্ট পাওয়ার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।

এদিকে, জেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক মোহসীন মাদবর বলেছেন, যতটা জেনেছি কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন। আমরাও একটি কমিটি গঠন করেছি। যথাযথ তদন্তে প্রমানীত হলে ইয়ামিন শিকদারকে আমরা সংগঠন থেকে বহিস্কার করব।

গোসাইরহাট থানার ওসি মোল্যা শোয়েব আলী জানান, ঘটনার সাথে জরিত এজহারভ’ক্ত এক আসামীকে আমরা আটক করেছি। বাকি আসামীদের আটক করার জন্য পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

গোসাইরহাট সরকারি শামসুর রহমান কলেজের অধ্যক্ষ মো. ফজলুল হক বলেন, আমি ছাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথেই জরুরী শিক্ষক পরিষদের সভা ডেকে তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। যথাযথ তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন কমিটির সদস্যরা। শিক্ষক পরিষদের সুপারিশের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের ইতিমধ্যেই কলেজের হোষ্টেল ছারার নোটিশ দিয়েছি। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের ছাত্রত্ব বাতিলের জন্যও সুপারিশ প্রেরণ করছি। এ বিষয়ে আমি সার্বক্ষনিক মাননীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছি।

তিনি আরো বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতি ও পরিবত্রতা যারা ক্ষুন্ন করবে, তাদের প্রতি কোন ভাবেই দয়া কিংবা অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই।

(কেএনআই/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০)