স্টাফ রিপোর্টার : চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (চসিক) ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের দলীয় সমর্থন পাওয়া একাধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে মিথ্যা পদ-পদবি ও দলীয় নাম ভাঙানোর অভিযোগ উঠেছে। 

এমনকি অতীতে কখনো আওয়ামী রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন না। এরপরেও ওয়ার্ড কমিটিতে উপদেষ্টা কিংবা দলের সদস্য পদ দেখিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নেওয়ায় নানা প্রশ্ন উঠেছে।

বিতর্কিত এসব কাউন্সিলরদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন- জামালখান ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী শৈবাল দাশ সুমন, আলকরণ ৩১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আব্দুস সালাম, বক্সিরহাট ৩৫নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী নুরুল হক, লালখানবাজার ১৪নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আবুল হাসনাত বেলাল এবং সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর (৯, ১০ ও ১৩নং ওয়ার্ড) তছলিমা বেগম নুরজাহান ছিলেন অন্যতম। এদের প্রত্যেকেই কেউ না কেউ উপদেষ্টা ও দলীয় সদস্য পদ দেখিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নেওয়ায় হতাশ আর বিস্মিত তৃণমূল!

অনেকের অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে সাইড লাইনে সরিয়ে রাখা হয়েছে যোগ্য ও পরীক্ষিতদের। রাজনীতিতে পোড় খাওয়া দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হচ্ছেন। এ নিয়ে ভেতরে ভেতরে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। ফলে এই কাউন্সিলর মনোনয়নের ক্ষেত্রে নিজ দলেই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন ক্ষমতাসীন দলটির নীতি-নির্ধারকরা।

সূূত্র বলছে, দলীয় সমর্থন না দেওয়া দুর্দিনের ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতা-কর্মীদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ সৃষ্টি হয়েছে। এতে উপেক্ষিত রয়ে গেছেন ত্যাগী ও দীর্ঘদিন নৌকার গুণ টানা নেতারা।

ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য পদ দেখিয়ে শৈবাল দাশ সুমন ২১ নং জামালখান ওয়ার্ডে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন। অথচ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ন সম্পাদক মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন অভিযোগ করেছেন। শৈবাল দাশ সুমন আওয়ামী লীগের কোন পদ পদবীতে নেই।

৩১নং আলকরণ ওয়ার্ডের তৃণমূল কর্মীরা বলছেন, ‘ওয়ান ইলেভেন কিংবা দলের দুঃসময়ে জেলে গিয়েছিলো তারেক সোলায়মান সেলিম। যিনি চার বারের বিজয়ী প্রার্থী। তাকে বাদ দিয়ে মনোনয়ন দেওয়া হলো নতুনকে। এতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং ত্যাগী নেতা-কর্মীরা রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন।’

তাঁর পরিবর্তে আলকরণ ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য দাবিদার মো. আব্দুস সালাম। জানতে চাইলে ৩১নং আলকরণ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান বলেন, ‘মনোনয়ন পাওয়া মো. আবদুস সালাম কমিটির সদস্য ছিলেন না। তবে গত বছর সে ওয়ার্ডে দলীয় সদস্য ফরম পূরণ করেছেন।’

এ ব্যাপারে কথা বলতে মো. আব্দুস সালাম কে একাধিকবার ফোন করা হলেও পাওয়া যায়নি নতুন এই কাউন্সিলর প্রার্থীকে। মোবাইল ফোনটি খোলা রাখলেও ফোন রিসিভ করেননি।

অপরদিকে লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিক আহমেদ বলেন, ‘১৪নং ওয়ার্ডে দল না করেও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন আবুল হাসনাত বেলাল। যিনি আওয়ামী লীগে কোনো অংঙ্গসংগঠনের পদেও নেই।’

বক্সিরহাট ৩৫নং কাউন্সিলর হাজী নুরুল হকের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ, তিনি কখনো আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না এবং মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাও নন। জানতে চাইলে কাউন্সিলর প্রার্থী হাজী নুরুল হক বলেন, ‘মনোনয়ন না পেয়ে অনেকে ষড়যন্ত্র করছেন।’

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণার করলে, তালিকা দেখে এসব বির্তক উঠে। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন পাওয়া প্রার্থীদের নিয়ে নানা আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। কেনোনা বাদ পড়া তালিকায় মধ্যে ছিলো চার বারের হেভিওয়েট প্রার্থী তারেক সোলায়মান সেলিমও।

বিভিন্ন ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দরা জানান, আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত যেকোনো প্রার্থীকে মনোনয়ন দিলে জনগণ খুশি হতো। দলের সাধারণ সদস্য পদ তো দূরের কথা। যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কখনো জড়িত ছিলেন না। এমন কাউকে মনোনয়ন দেওয়ায় স্বাভাবিক ভাবে বির্তক উঠছে।’

বেগম নুরজাহান বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, নগর আওয়ামী লীগে মহিলা সদস্য আছে একজন। তিনি হচ্ছেন-জুবাইদা নার্গিস। আমার জানা মতে, তছলিমা বেগম নুরজাহান নামে কোনো মহিলা সদস্য নেই।

স্থানীয় রাজনীতি সচেতনমহল জানিয়েছেন, প্রার্থী মনোনয়নে এমন কর্মকান্ডে বিব্রত দল, যারা প্রার্থী নির্ধারণ করতে গিয়ে অনৈতিক কৌশল, স্বজনপ্রীতি, ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিচারের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে পুরনোদের মধ্যে মনোনয়ন পেয়েছেন ২৭ জন। আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বাদ পড়েছেন পুরোনো ১৯ কাউন্সিলর।

জানা গেছে, দলীয় সমর্থন না পেলেও ‘এলাকাবাসীর দাবির মুখে’ ১৪ সাধারণ কাউন্সিলরের মধ্যে সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র, চারবারের নির্বাচিত জনপ্রিয় কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিমসহ অন্তত ১১ জন স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে লড়বেন।

(জেজে/এসপি/ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০)