আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাসখানেক ধরে করোনাভাইরাস মহামারিতে মৃত্যুর মিছিল চলছে ইউরোপে। প্রতিদিনই এতে সামিল হচ্ছেন হাজারও মানুষ। তবে গত কয়েকদিনে সেখানে কিছুটা কমেছে সংক্রমণের হার। আর তাতেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই কাজে ফিরতে শুরু করেছে ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ। তবে এখনও অবরুদ্ধ সংক্রমণের চূড়ায় পৌঁছানোর পথে থাকা যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্স।

স্পেনে অনাবশ্যক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় সোমবার থেকে কাজে ফিরেছেন দেশটির লাখ লাখ মানুষ। নির্মাণশ্রমিক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী, জাহাজ শিল্প সংশ্লিষ্ট- সবখানেই ফিরেছে প্রাণচাঞ্চল্য। তবে বাড়তি সতর্কতাস্বরূপ মেট্রো, ট্রেন ও বাসগুলোতে লাখ লাখ মাস্ক বিতরণ করেছে দেশটির পুলিশ।

দু’সপ্তাহ আগে একদিনে নয় শতাধিক মৃত্যুর পরপরই অনাবশ্যক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয় স্পেন। তবে টানা তিন সপ্তাহ পর গত রোববার একদিনে আক্রান্ত সাড়ে তিন হাজার ও মৃত্যুর ঘটনা ৫১৭-তে নেমে আসে সেখানে। এরপরই লকডাউন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার ঘোষণা দেন স্প্যানিশ প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ। তবে সামাজিক দূরত্ব ও অনাবশ্যক ভ্রমণের ওপর এখনও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে দেশটিতে।

করোনায় বিশ্বজুড়ে মোট মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশই হয়েছে ইতালি ও স্পেনে। তা সত্ত্বেও স্পেনের মতো ইতালিও নিষেধাজ্ঞা শিথিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই সপ্তাহ আগেও দেশটিতে একদিনে ৯১৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তবে গত সোমবার সেই সংখ্যা নেমে এসেছে ৫৬৬-তে। যদিও এদিনই ২০ হাজার পার হয়েছে সেখানে মোট মৃতের সংখ্যা, তবে দৈনিক রোগী বৃদ্ধির হার মাত্র দুই শতাংশে নেমে আসায় লকডাউন নির্দেশনা শিথিলের সাহস পেয়েছে তারা।

আজ থেকেই ইতালিতে সব বইয়ের দোকান ও শিশুপণ্য বিক্রয়কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়া হচ্ছে। তবে অনাবশ্যক ভ্রমণ ও অনাবশ্যক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলায় এখনও কড়া নির্দেশনা রয়েছে সেখানে।

ইতালিতে করোনায় মৃত্যুহার যেখানে ১৩ শতাংশ, সেখানে এর পরিমাণ মাত্র দুই শতাংশে ধরে রেখেছে জার্মানি। তা সত্ত্বেও জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মেরকেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিলের বিষয়ে চাপ বাড়ছে। সোমবার থেকেই স্কুল চালুর দাবি উঠেছে সেখানে। দেশটির বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সব দোকানপাট-ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে।

এছাড়া, ইউরোপে অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, চেক প্রজাতন্ত্রের মতো দেশগুলোও লকডাউন শিথিলের পথেই হাঁটছে। ডেনমার্কে সব স্কুল ও ডে-কেয়ার সেন্টার চালু হচ্ছে আগামী বুধবার। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরও কাজে ফিরতে অনুমতি দেয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই দোকানপাট খুলে দেয়ার কথা রয়েছে অস্ট্রিয়ায়।

তবে ফরাসি প্রেসিডেস্ট এমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ জানিয়েছেন, ফ্রান্সে লকডাউনের সময়সীমা আরও বাড়ানো হয়েছে। আগামী ১১ মে পর্যন্ত সারাদেশে থাকবে এই নিষেধাজ্ঞা।

করোনা মহামারি মোকাবিলায় ফ্রান্স প্রস্তুত ছিল না স্বীকার করে তিনি জানান, দেশটিতে এখনও মাস্ক, গ্লাভস, হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সংকট রয়েছে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সরকার। আগামী চার সপ্তাহ পর্যন্ত সেখানে কোনও নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো বা কমানো হবে না। তবে এই সময় সরকারের নির্দেশনাকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে। এটি নাগরিকদের প্রাণরক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউন, কারফিউ-এর মতো কড়াকড়ি ব্যবস্থা শিথিল করার বিষয়ে সতর্ক করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত শুক্রবার সংস্থাটির প্রধান ড. টেড্রস অ্যাধানম গেব্রেইয়েসুস বলেন, লক্ষ্য করা যাচ্ছে ইউরোপের কিছু দেশে মহামারি বিস্তারের গতি কমেছে। তবে এমন পরিস্থিতিতে লকডাউন-কারফিউ এর মতো কড়াকড়ি শিথিল করলে এই সংক্রমণের ভয়াবহ পুনরুত্থান ঘটতে পারে। এ কারণে দেশগুলোকে এখনই নিষেধাজ্ঞা তুলে না নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ডেইলি মেইল।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১৪, ২০২০)