রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ঢাকা ফেরত হোম কোয়ারেন্টাইনে করোনা উপসর্গ নিয়ে থাকা এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার ভোরে তিনি সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

মৃতের নাম হারুন অর রশিদ সুমন (২৭)। তিনি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া গ্রামের ছফেদ আলী সরদারের ছেলে। এঘটনায় স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী তাকে জানাজা শেষে কবর দেওয়া হয়েছে। ব্যানার টানিয়ে ও লাল পতাকা তুলে লক ডাউন করা হয়েছে ছয়টি বাড়ি।

কালীগঞ্জ উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের ধলবাড়িয়া গ্রামের হাফিজা খাতুন জানান, কার ছেলে হাফিজুর রহমান সুমন ঢাকার ধামরাইলে ঢাকা চিটাগাং রোডের রায়ের বাগ এলাকায় এরিকসন কোম্পানীতে কাজ করতো। পেশাগত কারনে স্ত্রী আমেনাকে নিয়ে ঢাকায় থাকতো। তাদের পার্শ্ববর্তী রঘুরামপুর গ্রামের ইব্রাহীম গাইন ঢাকায় গাড়ি চালাতো। সেকারণে ইব্রাহীম তার স্ত্রী আসমা খাতুন ও ছেলে ইছহাক রহমানকে নিয়ে খিলগাঁও ম্যারাদিয়া পোড়াবাড়ি মোড়ে ভাড়া থাকতো।

আগামী ২৭ মে আসমার সন্তান জন্ম দেওয়ার কথা। তাই করোনা পরিস্থিতি ক্রমশঃ জটিল হওয়ায় ইব্রাহীম তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ি আসার জন্য সুমনের সঙ্গে পরামর্শ করে। একপর্যায়ে তারা একটি এম্বুলেন্স ভাড়া করে গত ২০ এপ্রিল বাড়ি ফেরে। ইউপি সদস্য আব্দুর রবসহ স্থানীয়দের পরামর্শ অনুযায়ি তারা ওই দিনই কামারগাতির ছোট মিয়া সাহেবের মাজার শরীফের নীচের কক্ষে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য হন।

কয়েকদিন ধরে সুমনের তার জ¦র ও শ^াসকষ্ট বাড়তে থাকলে স্থানীয় চিকিৎসকদের নিকট থেকে চিকিৎসা নেওয়া হয়। তবে অবস্থার অবনতি হলে সুমনকে শুক্রবার রাতে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার আরো অবনতি হওয়ায় শনিবার ভোর পৌনে চারটায় সুমনকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভোর সোয়া ছয়টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সুমন মারা যায়।

সাতক্ষীরার সিভিল সার্জন ডা. হুসাইন শাফায়েত জানান, মিথ্যা তথ্য দিয়ে ওই যুবক গতরাতে সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। প্রকৃত তথ্য পেলে তাকে আমরা করোনা ডেডিকেটেড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করতে পারতাম। ওই যুবকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে বলে জানান সিভিল সার্জন।
কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. তবিবুর রহমান জানান, মৃত্যুবরণকারি ওই যুবককে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাইডলাইন অনুযায়ী জানাজা শেষে শনিবাওে দুপুরে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেল জানান, ওই যুবকের সাম্প্রতিক আবাসস্থল অর্থ্যাৎ মাজার শরীফসহ আশেপাশের ছয় বাড়ির সামনে লাল পতাকা তুলে ও ব্যানার টানিয়ে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে।

(আরকে/এসপি/এপ্রিল ২৫, ২০২০)