রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি : ভরা মৌসুমে মেঘনা নদীতে মাছ নেই। শ্রাবন মাস শেষ হয়ে আসলেও ইলিশ মাছ ধরা পড়ছেনা জেলেদের জালে। তাই জেলে-পরিবারে চলছে হাহাকার। আধপেটা খেয়ে অথবা কখনো না খেয়ে দিন কাটালেও সপ্তাহ শেষে গুনতে হচ্ছে ঋণের কিস্তি। আর ঋণের এ কিস্তি পরিশোধের জন্যই রাতের আঁধারে জেলেরা অন্যের জাল চুরি করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দক্ষিণ চরবংশী জেলে হাশেম মাঝি (৩২) জানান, তিনি একজন মহাজনের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা দাদন ও চারটি এনজিওর কাছ থেকে আরও ৪০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। প্রতি সপ্তাহে তাঁকে ৮৫০ টাকা কিস্তি গুনতে হচ্ছে। নদীতে মাছ না থাকায় কিস্তির টাকা শোধ করতে তিনি প্রতিবেশীর কাছ থেকে ধানের ওপর সুদ দিয়ে ৬ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন। তিন মাসের মাথায় মূল টাকার সঙ্গে ৫ মণ ধান সুদ দিতে হবে।

হাশেম মাঝি বলেন, এত বড় ঋণের বোঝা মাথায় নিয়া নদীত নাইম্যাও শান্তি নাই। জাইল্যারা এহোন মাছ না পাইয়্যা রাইতের আন্ধারে অইন্য জাইল্যার জাল কাইড্যা লইয়্যা যায়। এই পইয্যন্ত তিনবারে আমার ৩৫ হাজার টাকার জাল কাইড্যা লইয়্যা গেছে।

খাসের হাট মাছঘাটের সেলিম মাঝি বলেন, নদীত মাছ পড়ে না জাইন্যাও মাছের আশায় নদীত যাইতো অয়। কিন্তুক জাইল্যারাই জাইল্যাগো জাল কাডি লই যায়। গত মাসে একবার জাল কাডি লই গেলে কুমিল¬া পলান দিছি। বস্তা টানি কিস্তির টিয়া জোগার করি হির (পুনরায়) ঋণ লই জাল কিনছি।

উপজেলার নাইয়াপাড়া এলাকার আনোয়ার (৩০) গত মঙ্গলবার ভোর থেকে বেলা একটা পর্যন্ত মেঘনা নদীতে জাল পেতে মাত্র আটটি ছোট-বড় বাটা মাছ পেয়েছেন। ওজন সর্বোচ্চ ৪০০ গ্রাম। দাম চেয়েছেন ৩০০ টাকা। কিন্তু কেউ ১০০ টাকার বেশি বলছে না। আনোয়ার বলেন, এই মাছের দাম ৬০ টাহাও না, কিন্তুক প্যাডের টানে বেশি চাইতে আছি, নদীত মাছ নাই।

গত শুক্রবার সকালের বেড়িরমাধায় মেঘনায় চার দিন পর ৭০০ গ্রাম ওজনের একটি ইলিশ পেয়েছেন রায়পুর উপজেলার হাজীমারা ইউনিয়নের জেলে সবুজ মিয়া (৩৩)। সেটি বিক্রি করেছেন ১১০০ টাকায়। তাঁর নৌকায় ভাগী পাঁচজন। একই এলাকার দেলু মাঝি (৪২) জানান, তিনি পাঁচ দিন নদীতে কোনো মাছ না পেয়ে নদীতে যাওয়া ছেড়েই দিয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: আসাদুজ্জামান আসাদ বলেন, বৃষ্টি কম হওয়ায় মেঘনায় আগের মতো ইলিশ ধরা পড়ছেনা। তবে ভারী বৃষ্টি হলে ইলিশ ধরা পড়তে পারে।

(এমআরএস/এইচআর/আগস্ট ১১, ২০১৪)