রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া পৌর এলাকার অসহায় ও দরিদ্র মানুষের নির্ভরতার প্রতিকে পরিনত হয়েছেন মাহফুজুর রহমান মাসুদ। সরকারী চাকুরী করেও যে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায়,তা তিনি কাজের মাধ্যমে প্রমান করেছেন। আসলেই তিনি মানবতার বাতিঘর। করোনাকালে অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল।

লোহাগড়া পৌর এলাকার মশাঘুণি গ্রামের শিক্ষক দম্পতি শহিদুর রহমান-রোকেয়া বেগমের ঘরে ১৯৮০ সালের ১৪ ই এপ্রিল মাহফুজ জন্ম গ্রহণ করেন। তাদের চার সন্তানের মধ্যে মাহফুজ জ্যেষ্ঠ। ঐতিহ্যবাহী লক্ষীপাশা আদর্শ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে মাধ্যমিক ও যশোর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। সেখান থেকে লোক প্রশাসন বিভাগে লেখাপড়া শেষ করে কর্মের খোঁজে ঢাকায় পাড়ি জমান । সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী মাহফুজ নিজের পরিশ্রম ও মেধা গুণে আজ ভালো একজন উদ্যোক্তা হিসেবে সর্বমহলে পরিচিতি লাভ করেছেন। শিক্ষার্থীদের জব ক্যারিয়ার গঠনে রাখছেন ইতিবাচক ভূমিকা।

বিসিএস ক্যাডার তৈরীতেও তার অবদান কম নয়। তার পরামর্শ ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় অনেকেই আজ নিজস্ব অবস্থান তৈরী করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা গরীব,অসহায় ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করে তাদের পাশে থেকেছেন। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে সামনে এগিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন। শুধু তাই নয়, প্রচারবিমুখ মানুষটি তার জন্মস্থান নড়াইলের সাথে নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখেছেন। ছুটি পেলেই ছুটে আসেন নিজের জন্মভুমি নড়াইলে। অসহায় ও দরিদ্রদের খোঁজ-খবর নিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

২০১২ সালে মাহফুজ বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং ফিন্যান্স কর্পোরেশনে সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার হিসেবে যোগদান করেন। এলাকার অনেক অভিভাবক যখন তাদের সন্তানদের ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তিত,তখন ক্যারিয়ার স্পেশালিস্ট মাহফুজ তাদেরকে পরামর্শ দিয়ে আলোর পথ দেখান।

মাহফুজের বাবা-মা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা শেষে দু’জনেই অবসরে গেছেন। অনেক কষ্ট করে চার সন্তানকে মানুষের মতো মানুষ করেছেন। আলোকিত মানুষ হিসেবে তাদের পিতা-মাতার খ্যাতিও রয়েছে। এতো কিছুর পরেও মাহফুজ নিজের পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালনে অবিচল থেকেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা পিতা ও রত্নগর্ভা মায়ের আদরের ধন মাহফুজ তার দু'ভাইকে বাংলাদেশের প্রখম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে গড়ে তুলেছেন।

মাহফুজের ছোট দু'ভাই শেখ মোঃ রাসেল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পড়ালেখা শেষ করে বর্তমানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কর্মকর্তা হিসেবে খুলনা বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ে কর্মরত রয়েছেন। অপর ছোট ভাই মাহমুদুর রহমান মামুনও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মেসী বিভাগে পড়ালেখা শেষ করে বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের কেন্দ্রীয় শাখার উপপরিচালক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। একমাত্র ছোট বোন রোমানা শারমিন রেশমা ইডেন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করেছেন।

গত মার্চ মাস থেকে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়লে মাহফুজ-চামেলী দম্পতি এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। নিজেদের পরিশ্রমে অর্জিত অর্থ দিয়ে ভালবাসার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। করোনাকালে অসহায় মানুষদের মাঝে আট টন চাল, ঈদ উপলক্ষে ঈদ সামগ্রী, বিপুল পরিমান মাস্ক, হ্যন্ডস্যানিটাইজার, পৌর এলাকার এক বছর বয়সী শিশুদের মাঝে শিশুখাদ্য ও প্রত্যেক মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, কর্মহীন নরসুন্দর, চা দোকানী ও পৌর এলাকার দু’শতাধিক স্বেচ্ছাসেবীদের মাঝে দুপুরের খাবার বিতরণ করে সর্বমহলে প্রসংশিত হয়েছেন। সদা বিনয়ী ও মাদক বিরোধী মাহফুজ এবার করোনায় আক্রান্ত মানুষের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছেন ঝুঁড়ি ভর্তি ফল।

মাহফুজের এ মহতি কাজের সঙ্গী তার সহধর্মিনী তিন সন্তানের জননী রোজিয়া সুলতানা চামেলী। স্বামীর প্রতিটি কাজে সহয়োদ্ধা চামেলী যশোর মহিলা কলেজ থেকে বাংলা সাহিত্যে এম.এ ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেছেন। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আনিসা এন্টারপ্রাইজ ও আদৃতা প্রকাশনীর কর্নধার প্রতিষ্ঠা করেছেন। সংসার দেখাশোনার পাশাপাশি তিনিও অসহায় মানুষের জন্য নিবেদিত প্রাণ। এক কথায়, আর্ত মানবতার সেবায় নিবেদিত প্রাণ মাহফুজ-চামেলী দম্পতি।

মাহফুজ-চামেলী দম্পতির জনসেবামূলক কর্মকান্ড নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব নেটিজেনরা। এ প্রসঙ্গে সাবেক উপজেলা শিক্ষা অফিসার নড়াইলের সন্তান লুৎফর রহমান বলেন, ’যোগ্য বাবা-মা’র যোগ্য সন্তান। প্রাথমিক শিক্ষার গর্ব’। ঢাকা জেলা জজ কোর্টের সিনিয়র জজ তসরুজ্জামান বলেন, ’মাহফুজ একজন দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ভালো সংগঠক ও মেধাবী চিন্তার মানুষ’।

মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মাঝে। বিনয়ী, আত্মপ্রত্যয়ী ও সৃজনশীল মাহফুজ-চামেলী দম্পতির মানবিক কার্যক্রম আলোকিত সমাজ গঠনে অনুকরণীয় হয়ে থাকবে-এমনি প্রত্যাশা সাধারণ মানুষের।

(আরএম/এসপি/জুলাই ২৪, ২০২০)