নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালী সুবর্ণচরে যৌতুকের দাবীতে মধ্যযুগীয় কায়দায় স্ত্রীকে মারধরের অভিযোগে চরজব্বার থানায় মামলা করেছে নির্যাতিতা নারী, মামলা নং ১১-২৩ জুলাই২০২০।  এ ঘটনায় অভিযুক্ত মাদরাসা শিক্ষক জসিম উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে চরজব্বার থানা পুলিশ।

যৌতুকের জন্য মধ্যযুগীয় কায়দায় একাধিকবার স্ত্রীকে নির্যাতন, শ্বশুরকে আটকিয়ে জোর পূর্বক স্ট্যাম্পে সাক্ষর নেয়া, একই কৌশলে তার আগের স্ত্রীকে অমানুষিক নির্যাতন করে কাবিন লুকিয়ে ঐ নারীকে বিদায় করাসহ নানা অন্যায় অনিয়ম উঠে আসে শিক্ষক জসিমের বিরুদ্ধে।

ঘটনাটি ঘটে সুবর্ণচর উপজেলার ৭ নং পূর্ব চরবাটা ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের চরমজিদ গ্রামে।

মামলার এজাহারে জানাযায়, চরমজিদ গ্রামের মোঃ ছেরাজল হকের কণ্যা শারমিন আক্তার এর সাথে ফয়েজ আহাম্মেদের পুত্র চরজব্বর রব্বানিয়া ফাজিল মাদরাসার ইংরেজি শিক্ষক জসিম উদ্দিনের সাথে গত ৩ মাস আগে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের জন্য শারমিনকে ঘরে বেঁধে রেখে অমানুষিক নির্যাতন চালায়।

যৌতুকের টাকার বাদীতে মেয়ের বাবা ছেরাজল হককে জিম্মি করে একটি স্ট্যাম্পে সাক্ষর নেন জসিম। মেয়ের বাবা তাকে টাকা দেয়ার জন্য কিছুদিন সময় নেয়, ঐ সময়ের মধ্যে টাকা না দেয়ায় পূনরায় আবারো শুরু হয় শারমিনের ওপর অমানুষিক নির্যাতন। কখনো ঘরের মেঝে পেলে মারধর, কখনো ঘরের পালার সাথে বেঁধে মারধর করে, গত ৫ জুলাই আবারো একই কায়দায় মারধর করলে শারমিন অজ্ঞান হারিয়ে পেলে, খবর পেয়ে ছেরাজল হক তার মেয়েকে উদ্ধার করতে গেলে তাকেও এলোপাতাড়ি পিটিয়ে আহত করে। পরে এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে নোয়াখালী ২৫০ শয্যা বিশিষ্ঠ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসা শেষে শারমিন আক্তার বাদী হয়ে স্বামী জসিম উদ্দিন, স্বামীর ভাই এমরানসহ ৩ জনকে আসামী করে চরজব্বার থানায় মামলা দায়ের করেন।

স্বরজমিনে গেলে একাধিক এলাকাবাসী বলেন, জসিম উদ্দিন পূর্বেও একটি বিয়ে করে কিন্তু বিয়ের কাবিন মানা সে লুকিয়ে পেলে, বিয়ের পর থেকে ঐ নারীকে যৌতুকের জন্য বহুবার মারধরসহ অমানুষিক নির্যাতন চালায়, নির্যাতন সইতে না পেরে এলাকার গন্যমাণ্য ব্যক্তি বর্গের মাধ্যেমে ১ লক্ষ টাকার ওপর ঐ সম্পর্কটি মিমাংশা করে দেয়া হয়। কিন্তু এখনো ঐ মেয়েকে একটি টাকাও দেয়নি চতুর জসিম উদ্দিন, এখনো সে টাকার জন্য ধারে ধারে ঘুরছে মেয়েটির বাবা।

গত ৩ মাস আগে শারমিনের বাবাকে হাতে পায়ে ধরে এলাকার ব্যক্তিবর্গকে ম্যানেজ করে ইসলামি শরিয়াহ মোতাবেক বিয়ে করে শারমিনকে। সুবর্ণচরে বিয়ে হলেও হাতিয়ায বিয়ের কাবিন মানা করেন জসিম। বিয়ের কিছুদিন না যেতেই শারমিনের ওপর শুরু হয় নির্মম অত্যাচার, পূর্বের কৌশলে শ্বশর ছেরাজল হককে যৌতুক হিসেবে হুন্ডা কিনে দেয়ার জন্য চাপ সৃস্টি করে, নদগ ১ লক্ষ টাকা দেয়ার জন্য একটি অলিখিত স্ট্যাম্পে সাক্ষর ছেরাজল হক। টাকা দিতে না পারায় আবারো শুরু হয় শারমিনের ওপর নির্যাতন।

অভিযুক্ত জসিমের সাথে আলাপ করতে চাইলে তিনি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করারও হুমকি প্রদান করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাবাসী বলেন, জসিম এলাকায় প্রভাবিস্তার করায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলেনা, বিভিন্ন জায়গায় সুবর্ণচর উপজেলা আওয়মি লীগের সভাপতি এডভোকেট ওমর ফারুকের নাম ভাঙ্গিয়ে মানুষকে হুমকি প্রদান করে এবং নিজকে এডভোকেট পরিচয় দিয়ে মিথ্যা মামলা করে জেলে পাঠানোর হুমকি দেন অভিযুক্ত শিক্ষক জসিম উদ্দিন।

সুবর্ণচর উপজেলা আওয়ামি লীগের সভাপতি এডভোকেট ওমর ফারুক বলেন, আমি কখনো অন্যায়কে পশ্রয় দেইনা, জসিম অত্যান্ত চতুর তার অত্যাচারে আগের সংসারটাও টিকেনি, সেটাও আমি মিমাংশা করে দিয়েছি, বর্তমানে সে শারমিনের ওপর যে অন্যায় করেছে তা দুঃখ জনক।

চরজব্বর থানার ওসি(তদন্ত) ইব্রাহিম খলিল বলেন, অভিযোগ পেয়ে আমরা অভিযুক্ত জসিমকে গ্রেফতার করি, এবং এ বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে।

(এস/এসপি/জুলাই ২৪, ২০২০)