স্টাফ রিপোর্টার : অনুমোদন ছাড়া করোনা পরীক্ষা ও ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে প্রতারণা এবং জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেফতার সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফয়সাল আল ইসলামসহ তিনজনের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। অপর দুইজন হলেন- সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবুল হাসনাত ও ইনভেন্টরি অফিসার শাহজির কবির সাদি।

পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে সোমবার (২৭ জুলাই) তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অপরদিকে তাদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মামুনুর রশীদ তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

মঙ্গলবার (২১ জুলাই) ঢাকা মহানগর হাকিম আশেক ইমাম তাদের পাঁচদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল আল ইসলামকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব। সোমবার রাতে বনানীর একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

গত রবিবার (১৯ জুলাই) দুপুরে হাসপাতালটিতে অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে অসহযোগিতা করায় বিকেল ৫টার দিকে ডা. আবুল হাসনাতকে হেফাজতে নেয় র‌্যাব। হাসপাতালের ইনভেন্টরি অফিসার শাহজির কবির সাদিকেও হেফাজতে নেয়া হয়।

করোনা রোগীদের চিকিৎসায় যুক্ত বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে অন্যতম ৫০০ শয্যার সাহাবদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সম্প্রতি বেশকিছু অনিয়মের অভিযোগ ওঠে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে অভিযান চালায় র‌্যাব। র‌্যাবের একটি সূত্র জানায়, করোনার র‌্যাপিড কিট টেস্ট, অ্যান্টিবডি নিয়ে বেশকিছু অভিযোগ খতিয়ে দেখতে হাসপাতালটিতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এ ঘটনায় সোমবার (২০ জুলাই) রাজধানীর গুলশান থানায় র‌্যাব বাদী হয়ে মামলাটি করে। মামলায় সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল আল ইসলাম (৩৪), সহকারী পরিচালক ডা. মো. আবুল হাসনাত (৫২) এবং ইনভেন্টরি অফিসার শাহরিজ কবির সাদির (৩৩) নাম উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া মামলায় অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার অভিযোগ বলা হয়, নেগেটিভ রোগীকে করোনা পজিটিভ রোগী বলে চিকিৎসা দেয়া, পরীক্ষা না করে ভুয়া প্রতিবেদন দেয়া এবং অনুমোদন না নিয়েই র‌্যাপিড কিট দিয়ে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে আসছিল সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবুল হাসনাত নন-কোভিড ও কোভিড রোগীদের এক পরীক্ষা চারবার দেখিয়ে বিল করেছেন। একাধিকবার করোনা পরীক্ষার সনদ রোগীর ফাইলে সংযোজিত পাওয়া যায়নি।

মামলার অভিযোগে আরও বলা হয়, সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রি করে আসছিল রোগীদের কাছে। এ ঘটনায় র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম প্রতিষ্ঠাটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করেন। হাসপাতালের পাঁচটি অপারেশন থিয়েটার রয়েছে। একটিতে তল্লাশি চালিয়ে পাঁচটি মেয়াদোত্তীর্ণ সার্জিক্যাল টিউব পান। এগুলোর একটি ২০০৯ সালে, দুটি ২০১১ সালে এবং একটি ২০২০ সালের এপ্রিলে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়।

এসব টিউব সাধারণত অপারেশনে অ্যানেসথেসিয়া দেয়ার সময় রোগীর শ্বাসনালিতে ঢোকানো হয়। এ ছাড়া হাসপাতালের লাইসেন্স গত বছর শেষ হয়ে যায়। এসবের সঙ্গে সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ফয়সাল, সহকারী পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবুল হাসনাত ও ইনভেন্টরি অফিসার শাহজির কবির সাদি জড়িত।

(ওএস/এসপি/জুলাই ২৭, ২০২০)