ইন্দ্রজিৎ কুমার সাহা, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : গাজীপুরের কালিয়াকৈরে উজান থেকে বয়ে আসা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে নিন্মাঞ্চল। হু হু করে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। গত কয়েকদিন পানির অব্যাহত বৃদ্ধি। সেই সঙ্গে ভারি বৃষ্টিপাতে দ্রুত প্লাবিত হতে শুরু করেছে নিচু ও চর এলাকাগুলো। তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চলের বহু মৌসুমী ফসলি জমি ও মৎস খামার। পানি বৃদ্ধিতে তলিয়ে গেছে আঞ্চলিক সড়কগুলোও।

কালিয়াকৈর পয়েন্টে তুরাগ নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর দুই পাশে বহু ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন। নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে ঘরবাড়ি রাস্তা-ঘাট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার কালিয়াকৈর পৌরসভার সাহেব বাজার, শ্রীফলতলী জমিদার বাড়ী এলাকার নিন্মাঞ্চল, সদরের গোলামনবী স্কুল, মুক্তিযোদ্ধা মার্কেট, সহ চাপাইর, শ্রীফলতলী, মৌচাক, মধ্যপাড়া, বোয়ালী, আটাবহ, ঢালজোড়া ইউনিয়নের বড়ইবাড়ী, খালপাড়, বোয়ালী, গাবতলী, কুন্দাঘাটা, গোলয়া, রঘুনাথপুর, টালাবহ, চান্দাবহ, বলিয়াদী, সেওড়াতলী সাদুল্লাপুর, ভৃঙরাজ এলাকাসহ বেশকিছু অঞ্চল বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়াও দ্রুত পানি বৃদ্ধিতে প্রতিদিন প্লাবিত হচ্ছে আরও নতুন নতুন গ্রাম ও আঞ্চলিক সড়কগুলো। বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিয়েছে নানা দুর্ভোগ। গবাদী পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে গ্রামবাসীরা। চলাচলের সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে নৌকাতে চলাচল করছে ওই সব এলাকার পানিবন্দী মানুষ।

বন্যা কবলিত ওই সব এলাকার শতশত বিঘা ফসলি জমি ও মৎস্য খামার তলিয়ে যাওয়াতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন স্থানীয় বহু কৃষক। স্থানীয় মৎস চাষীরা জানিয়েছেন, লক্ষ লক্ষ টাকা পুঁজি খাটিয়ে মাছ চাষ করছে তারা, কিন্তু হঠাৎ করে বন্যার পানি এসে খামার তলিয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকেরই বড় ধরনের লোকশানের মুখে পড়তে হবে।র পানিতে সবজি, আউশ ধানের মাঠসহ ছয় হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। সেই সঙ্গে শতাধিকেরও বেশি পরিবারের সবজি বাগান প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কালিয়াকৈর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আশীষ কুমার কর।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রবীর কুমার সরকার জানান, বন্যা কবলিত এলাকায় দেখা দিতে পারে পানিবাহিত নানা রোগ। এছাড়াও বিশাক্ত সাপ ও পোকা মাকড়ের শিকারও হতে পারে মানুষ। বন্যাদুর্গত এলাকাগুলোতে রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা দিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উদ্যোগে একটি মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশে মেডিকেল টিম পৌঁছে যাবে।

কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাজী হাফিজুল আমীন জানান, বন্যার পানিতে কয়েকটি গ্রামের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে, যার কারণে মানুষের চলাচলে ভোগান্তি রয়েছে। তবে ঘরবাড়ি তলায়নি। আর বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে এখনো পর্যন্ত খাদ্যের অভাব দেখা দেয়নি। তবে প্রত্যেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের জানানো হয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(আইএস/এসপি/জুলাই ২৮, ২০২০)