রাবি প্রতিনিধি : করোনার প্রকোপ শুরু হলে গত ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ হয় ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাস বন্ধের সাথে সাথে বন্ধ খাবারের দোকানগুলোও। উচ্ছিষ্ট খাবার নেই কোথাও। না খেয়ে দম যায় যায় অবস্থা প্রাণীগুলোর। কয়েক'শ কুকুর, বিড়াল এরই মধ্যে ঝিমানো শুরু করেছে।

তবে বন্ধ ক্যাম্পাসে প্রাণীগুলোর ক্ষুধায় কষ্ট দেখে বসে থাকেননি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা।

পোষা প্রাণী সংরক্ষণ প্রকল্প এর মাধ্যমে সেইসব প্রাণীর খাওয়ার বন্দবস্ত যেমন করছেন তেমনি চিকিৎসা দিচ্ছেন অসুস্থগুলোকে। সেই প্রকল্পের ১২০ দিন পার হয়েছে এরই মধ্যে। সেই থেকে এখনও চলছে প্রাণীদের খাবার ও চিকিৎসা দেয়ার কাজ।

যদিও একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমেই প্রকল্পটির জন্য সহযোগিতা চান বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক শাওন উদ্দীন।

তিনি জানান, ক্যাম্পাস বন্ধের পর ক্যাম্পাস ঘুরে দেখলেন কুকুরগুলো ক্ষুধায় খুব কষ্ট পাচ্ছে। গত ২৯ মার্চ এই উদ্যোগের শুরু হয়ে প্রথমে শুধু চাল ও ডাল দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে খাওয়াতেন, পরে এর সঙ্গে মুরগির মাথা ও পা দিয়ে রান্না শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য, প্রক্টরসহ অন্য শিক্ষকেরাও চাল-ডাল কিনে দিতে শুরু করেন। এরই মধ্যে ১২০ জন শিক্ষক এ প্রকল্পের সাথে যুক্ত হয়েছেন বলেও জানান তিনি। প্রতিদিন একশত স্পটে খাবার খায় প্রাণী ও পাখিগুলো বলে জানান তিনি।

এর আগে অভুক্ত কুকুরদের জন্য প্রথমে খাবার নিয়ে এগিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের প্রসেনজিৎ কুমার এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী মাহমুদ সাকী।

শুরুতে দুজন মিলে শুরু করলেও পরবর্তীতে আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এগিয়ে আসেন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পেলে শিক্ষকরা সহায়তায় এগিয়ে আসেন। বর্তমানে প্রায় শতাধিক শিক্ষক সহায়তা করছেন। এছাড়াও বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী ও বড় ভাইদের থেকে সহায়তা পেয়েছি।

প্রসেনজিৎ আরও জানান, সাধারণত ক্যাম্পাসের খাবারের দোকানগুলোর উচ্ছিষ্ট থেকেই খাবার সংগ্রহ করতো এসব প্রাণী। ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ সুযোগটা বন্ধ হয়ে যায়। মানুষ হিসেবে দেশের জাতীয় ক্রান্তিলগ্নে প্রতিটা মানুষের আলাদা একটা দায়িত্ব রয়েছে। জীব ও জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও লালনপালন করা মানুষের দায়িত্ব। সেই দায়িত্বের জায়গা থেকেই কাজটা করা। অনেক সময় অনেকেই পশুপাখির প্রতি নির্দয় আচরণ করে। তাদেরকে অনুরোধ করবো পশুপাখির প্রতি সদয় হতে।

শুধু রান্না নয়, কোনো প্রাণী অসুস্থ হলে ভেটেরিনারি বিভাগের শিক্ষকদের সহযোগিতায় চিকিৎসাও দেয়া হচ্ছে। ক্যাম্পাস না খোলা পর্যন্ত চালিয়ে যাবেন বলে জানাচ্ছেন তারা।

এরই মধ্যে আগস্ট মাসের খাবার চলে এসেছে প্রাণীগুলোর। প্রকল্পের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা জানাচ্ছেন নিয়মিত রান্না শেষে খাবার পৌঁছে যাবে নির্দিষ্ট সময়ে।

(ওএস/এসপি/জুলাই ৩১, ২০২০)