শিতাংশু গুহ


ট্রাম্প নির্বাচন পেছানোর প্রস্তাব করেছেন! কিছু মিডিয়া বলেছে, হেরে যাবার ভয়ে তিনি নির্বাচন পেছাতে চাচ্ছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন পেছাতে পারেন না, ট্রাম্প তা ভালোই জানেন। নির্বাচন পেছানোর ক্ষমতা কংগ্রেসের। হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস ডেমক্রেটদের দখলে। তাঁরা নির্বাচন পেছাবেন না, এটা জেনেও ট্রাম্প কেন একথা বলেছেন? মার্কিন ইতিহাসে নির্বাচন পেছানোর খুব একটা দৃষ্টান্ত নেই? তবু ট্রাম্প মাত্র একবার একথা বলে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন। একদিন পর আবার তিনি যথাসময়ে ভোটের কথা বলেছেন, সাথে যোগ করেছেন, পোষ্টাল ভোটে গণতন্ত্র ব্যাহত হয়? এটা রাজনীতি। ট্রাম্প খেলছেন। 

ট্রাম্প স্মার্ট প্লেয়ার। সদ্য ডেমক্রেট কেউ একজন বিতর্ক বন্ধের কথা বলেছেন। ট্রাম্প সাথে সাথে বলেছেন, বাম ডেমক্রেটরা বাইডেন-কে বাঁচাতে বির্তক বন্ধ করতে চায়? বিতর্কে বাইডেন ধরাশায়ী হবেন? প্রথা অনুযায়ী নির্বাচনের আগে প্রধান প্রার্থীদের মধ্যে (সচরাচর ২জন) তিনটি বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়। এ মাসে ডেমক্রেট কনভেনশন। বাইডেন এখনো তাঁর ভাইস-প্রেসিডেন্ট ঘোষণা দেননি। এ সপ্তাহে দেবেন। ক্যালিফর্নিয়ার সিনেটর কমলা হ্যারিস’র নাম শোনা যাচ্ছে। তবে ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত কিছুই চূড়ান্ত নয়। বাইডেন আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, তাঁর রানিং মেট হবেন একজন মহিলা। কে সেই ভাগ্যবতী? বাইডেনের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী যথেষ্ট স্মার্ট ও গ্রহণযোগ্য না হলে এবারকার নির্বাচন ‘পানসে’ হয়ে যাবে।

বাইডেন প্রায় সব জরীপে এগিয়ে। হয়তো তিনি এগিয়ে থাকবেন, কারণ মিডিয়া তাঁর পক্ষে। নির্বাচনে জিতবেন ট্রাম্প। ২০১৬-তে তাই ঘটেছিলো। প্রায় সকল জরিপে হিলারী ডবল ডিজিট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। হেরেছেন। ট্রাম্প এসব জরিপকে ‘ফেইক পোল’ আখ্যায়িত করেন। ডেমক্রেটরা ‘ইলেক্টরাল কলেজ’ পদ্ধতি বাতিল করতে চান? নির্বাচন এলে এমন সব কথাবার্তা উঠে। সাম্প্রতিককালের নির্বাচনে হিলারী ক্লিন্টন এবং আল গোর পপুলার ভোটে জিতেও নির্বাচনে হেরেছেন, ‘ইলেক্টরাল কলেজ’ পদ্ধতির কারণে। ডেমক্রেটরা তাই এর বিপক্ষে। মার্কিন রাষ্ট্রের রূপকাররা ছোট-বড় ষ্টেটের সমান গুরুত্ব বজায় রাখতেই এ পদ্ধতি চালু করেন এবং এটি উঠে যাওয়ার কোন সম্ভবনা নেই!

‘ব্ল্যাক লাইফ মেটার্স’ আন্দোলন এখনো ঢিমেতালে চলছে। এর কোন শেষ নেই? সাথে চলছে, ‘এন্টিফা’ আন্দোলন। হয়তো নভেম্বর পর্যন্ত চলবে। ডেমক্রেটরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। একই সাথে অরাজকতা বাড়ছে। ডেমক্রেটরা পুলিশ ডিফেন্ডিং এর পক্ষে। বাইডেন বিপক্ষে। ডেমক্রেটদের পুলিশের বিপক্ষে অবস্থান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জন্যে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করছে। ট্রাম্প এখন ঘনঘন চীনের বিরুদ্ধে বলছেন। করোনা ভাইরাসকে তিনি স্পষ্টভাবে ‘চীনা ভাইরাস’ বলছেন। মার্কিনীরা ধীরে ধীরে এন্টি-চীন হচ্ছেন। ট্রাম্প পুরোপুরি এন্টি-চীন অবস্থানে? ডেমক্রেটরা সম্ভবত: এখনো হাওয়া বুঝতে পারেননি। চীন এবারকার নির্বাচনে একটি প্রধান ইস্যু হবে?

রিফ্যুজি অনুপ্রবেশ, ইসলামী সন্ত্রাসবাদ, অবৈধ এলিয়েন এন্ট্রি, ইন্টারেষ্ট রেট, শিক্ষার্থী ঋণ, নারী অধিকার, ক্লাইমেট চেঞ্জ, মাস্ক পরা বা না পরা; করোনায় এত মৃত্যু; ব্ল্যাক লাইফ মেটার্স, চীন -এ সবই নির্বাচনী ইস্যু। স্টিম্যুলাস, ওয়াল ষ্ট্রীট তো আছেই। অর্থনীতি ভালো থাকলে ট্রাম্পের জন্যে সুবিধা। বিপদে পড়ে মানুষ যখন পুলিশে কল দেয়, তখন কাউকে বুঝিয়ে দিতে হয়না, পুলিশের গুরুত্ব কতটা। চলমান পুলিশ বিরোধী আন্দোলন বাইডেনকে পথে বসিয়ে দিচ্ছে। কালোদের প্রতি সহানুভূতি থাকলেও মাঝে মধ্যে অরাজকতা বা নিত্যদিন আন্দোলনে মানুষ বিরক্ত। সবাই জানতে চাইছে এর শেষ কোথায়? ডেমক্রেটরা ভাবছে, এই আন্দোলন তাঁদের হোয়াইট হাউসে নিয়ে যাবে। বাস্তবে উল্টো হয়ে যাবে?

লেখক : আমেরিকা প্রবাসী।