নিউজ ডেস্ক : 'কাদম্বরীদেবীর সুইসাইড-নোট' পুস্তক অাকারে কিছুটা পরিবর্তন এবং পরিবর্ধনের পর রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে অর্থাৎ কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর প্রায় ১২৭ বছর পর। জানা যায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের অনিবার্য অনুজ্ঞায় তার মৃত্যুর সকল প্রমাণ লুপ্ত করা হয়। কাদম্বরী দেবী অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাতৃজায়া যাকে নতুন বৌঠান বলেই সম্বোধন করতেন তিনি ১৮৮৪ সালের ১৯ এপ্রিল অাত্মহত্যার চেষ্টায় অাফিম খান এবং দু'দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২১ এপ্রিল(সোমবার) মৃত্যু বরণ করেন। তিনি ছিলেন ঠাকুর পরিবারের জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্ত্রী। তার মৃত্যুর সকল প্রমাণ লুপ্ত করা হলেও এই সুইসাইড নোট বলি কিংবা প্রাণের রবি'কে লেখা তার শেষ স্মৃতিচারণই বলি সেটা হয়তো সচেতনভাবেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সংরক্ষণ করেছিলেন এবং কালের পরিক্রমায় তার পাঠোদ্ধারও করা হয় দীর্ঘকাল পর। সেখানে একটি চাকচিক্যের অাভরণে এক অসহায় প্রাণের অাকুতি বারবার নাড়া দেয়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিবাহের ৪ মাস পর তিনি অাত্মহত্যা করেন। সেটা একাধিক বার পড়ে অামার ক্ষুদ্র অনুধাবন দৃষ্টিতে ধরা পরে নতুন বৌঠান যেন রবি'কে অাঁকড়ে ধরে বাঁচতে চেয়েছেন, তাঁর সকল স্মৃতির জগতের রবির কীরণ যে কতটা তীর্যক তা তার লেখেনিতে স্পষ্ট! সঙ্গে পারিপার্শ্বিকতা এবং পারিবারিক সংকটগুলিকেও মৃত্যুকালিন সময়ে তিনি লিপিবদ্ধ করেন। এটা যেন পূর্ণাঙ্গ এক উপাখ্যান!

তাই এই কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত 'কাদম্বরী'(২০১৫) সিনেমাটি মূলত কাদম্বরী দেবীরই বায়োপিক বলা যায়। পরিচালক সুমন ঘোষের পরিচালনায় কাদম্বরী চরিত্রে কঙ্কনা সেন এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়কে রবীন্দ্রনাথের চরিত্রে দেখা যায়। সিনেমা'টি বেশ প্রসংশিত হলেও অামার কাছে মনে হয়েছে মূল গল্পের রস'টাকেই যেন কোথায় হারিয়ে ফেলেছেন পরিচালক; রচয়িতা হিসেবেও স্বয়ং সুমন ঘোষ'ই ছিলেন। মূল রচনার ভাব প্রকাশে অামার ব্যক্তিগত অভিমত তিনি নিতান্তই অপারগ কিংবা সচেতনভাবে রবীন্দ্রনাথ'কে বাঁচাতেই তার এ অভিনব কৌশল। তবুও প্রেমের অাকুতি যেখানে অনুপস্থিত সেখানে বিচ্ছেদের রসটা ঠিক গ্রহণ করবার মানসিক অবস্থারও জন্ম দেয় না। তবে সে সময়ের গতিকে অক্ষুণ্ণ রাখবার প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় ব্যাপকভাবে তবুও শিল্পের রসবোধের পিপাসায় রচনাটি অামাকে যেরূপ নাড়া দেয় ঠিক অন্যদিকে সিনেমাটা অামাকে হতাশ করে। অামার মনন পটে যে দৃশ্যের উদয় হয়েছিল তা সিনেমাটিতে প্রকাশের পায়তারা করা হয়েছে মাত্র তবে স্পর্শ করতে পারে নি।

যে রবি তাঁর নতুন বৌঠান'কে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন,
'তোমারেই করিয়াছি জীবনের ধ্রুবতারা।'

অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিবাহের মাত্র কিছুদিনের মাথায় তাঁরই লেখনিতে ফুটে ওঠেছিল,
'হেতা হতে যাও, পুরাতন!
হেতায় নূতন খেলা অারম্ভ হয়েছে।'

এই সামান্যতম পরিবর্তন এক বিশাল লুকায়িত খেয়ালি সুপ্তভাবের রেশ রেখে যায়, যে সুরের ধ্বনি সুইসাইড নোটের মূল ভিত নাড়িয়ে দিলেও সিনেমাতে সেটা তেমন করে নাড়া দেয় নি এটাই যেন অামার বড় অাক্ষেপ! সে ভাব সৃষ্টির পরিবেশ সৃষ্টিতেও যেন খানিকটা সচেতনভাবেই পরিচালক ছিলেন রক্ষণশীল, শিল্পবোধের দায় থেকেই অামি খানিকটা হতাশ।

লেখক : প্রান্ত সাহা
শিক্ষার্থী, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

(পিএস/ আগস্ট ০৫, ২০২০ ইং)