রংপুরে কিশোরীকে ধর্ষণ-হত্যা : গ্রেফতার ২
মানিক সরকার মানিক, রংপুর : রংপুরে ৭ম শ্রেণির এক কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ ও পরবর্তীতে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে ধাপাচাপা দেয়ার চাঞ্চল্যকর ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ধর্ষক ও তার এক সহযোগীকে গ্রেফতারও করেছে পুলিশ।
গ্রেফতারের পর ধর্ষক সুরজিত চন্দ্র রায় ওরফে সুজিত পুলিশ এবং আদালতের কাছে ১৬৪ ধারার জবানবন্দীতে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। রবিবার দুপুরে রংপুরের মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শহিদুল্লাহ কাওসার পিপিএম তার কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মেট্রোপলিটন হাজিরহাট থানাধীন অভিরাম বাবুপাড়া গ্রামের ফটিক চন্দ্র রায়ের ১৪ বছর বয়সি ৭ম শ্রেণির এক ছাত্রী তার বাবার আর্থিক অনটনের কারণে সে তার ঠাকুরমার বাসায় বসবাস করত। ঘটনার দিন গত ২৫ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টায় ঠাকুরমা, জ্যাঠা এবং জ্যাঠি জমিতে কাজ করতে গেলে একই এলাকার সুরজিত চন্দ্র রায় সুজিত ওই ছাত্রীকে বাসায় একা পেয়ে ধর্ষণ শেষে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে তার গলার ওড়না পেঁিচয়ে লাশ ঘরের বাঁশে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।
পরে তার ঠাকুরমা এবং জ্যাঠা জ্যাঠি বাসায় ফিরে দেখতে পায় ঝুলন্ত লাশ। পরে সংশ্লিষ্ট হাজিরহাট থানা পুলিশকে খবর দিলে মহিলা পুলিশ ঝুলন্ত লাশ নামায় এবং তার সুরতহাল তৈরি করেন। এ সময় সুরতহালকারী মহিলা পুলিশ ছাত্রীটির গোপনাঙ্গে রক্তক্ষরণ দেখতে পায় এবং তার শারীরিক অবস্থা দেখে সে অন্ত:স্বত্বা বলে তাদের সন্দেহ হয়। এ অবস্থায় ওই ছাত্রীকে তারা রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে নিয়ে যায় এবং সেখানে তার শারীরিক পরীক্ষায় সে যে সদ্য ধর্ষিতা এবং অন্ত:সত্বা তা নিশ্চিত করেন চিকিৎসক। পরে পুলিশ লাশের ময়না তদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠায়। ময়না তদন্তের রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয় সে অনেক আগে থেকেই ধর্ষিত এবং বর্তমানে অন্ত:সত্বা ।
এ অবস্থায় পুলিশ ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনে একটি তদন্ত টীম গঠন করে কিশোরীর ঠাকুমা, জ্যাঠা, জ্যাঠি, জ্যাঠাতো বোনসহ আশপাশের বিভিন্নজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ তাদের কাছে আত্মহত্যার বিষয়টিই জানতে পারে। কিন্তু পুলিশের এক সূত্র জানায়, মেয়েটি আত্মহত্যার পর সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি সেখানে ঘোরাঘুরি করেছেন এবং ওই ব্যক্তি কিশোরীর বিছানায় থাকা একটি মোবাইল ফোন সুকৌশলে নিয়ে পালিয়ে যায়। ওই মোবাইল ফোনের নম্বর আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে সুরজিত চন্দ্র রায় সুজিতকে শনাক্ত করে এবং ওই ব্যবহৃত সীমের সিডিআর পর্যালোচনা করে ধর্ষিতার সাথে সুজিতের কথোপকথন ও এসএমএ এ গুরত্বপূর্ণ তথ্য পায় পুলিশ।
পরে পুলিশ হত্যার বিষয়গুলো উল্লেখ করে এবং সুরজিতকে আসামী করে কিশোরীর বাবা ফটিক চন্দ্রকে হাজিরহাট থানায় একটি মামলা দায়েরের পরামর্শ দেয়। মামলা দায়েরের পর তদন্তভার দেয়া হয় শাহ আলম নামের এক উপ-পরিদর্শককে। এদিকে ওই তদন্ত কর্মকর্তার ব্যাপক অভিযানের প্রেক্ষিতে সুরজিত আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। এ সময় পুলিশ তার রিমান্ড চেয়ে আদালতে আবেদন জানালে বিজ্ঞ ম্যাজিষ্ট্রেট আসামীর দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
পরে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ এবং শনিবার তাকে আদালতে তোলা হলে সুজিত স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিতে জানায়, ওই কিশোরীর সাথে তার সাত মাস আগে পরিচয় এবং পরিচয়ের সূত্রেই সে তাকে ওই সময় থেকে ধর্ষণ করে আসছিল এবং গত ২৫ জুলাই তাকে তার ঘরে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে ঝুলিয়ে রাখে। একই সঙ্গে বিছানা থেকে মোবাইল ফোন তুলে নেয়ার বিষয়ে তার বন্ধু দিবাকর রায় শ্যামলের নাম উল্লেখ করলে পুলিশ শ্যামলকেও গ্রেফতার করে। শনিবার তাদের দু’জনকেই জেল হাজতে পাঠিয়েছে আদালত।
(এমএস/এসপি/আগস্ট ০৯, ২০২০)