চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধারা বাঁশখালীর এমপি মোস্তাফিজুর রহমানের সংসদ সদস্য পদ বাতিল ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবিসহ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন। অন্যথায় সারাদেশের জেলা-উপজেলা থেকে একযোগে ঢাকামুখী লংমার্চসহ সড়ক অবরোধ করা হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (৩ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা কমিটি আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা এ দাবি জানান। সমাবেশ শেষে এমপি মোস্তাফিজের কুশপুত্তলিকা দাহ করে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। মিছিলটি প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর ও মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত বলেন, 'প্রেসক্লাব চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার নির্দেশদাতা বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত ফয়সালা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'মোস্তাফিজ ও তার পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীনতাবিরোধী ছিল। না হলে একজন আওয়ামী লীগের সাংসদ হয়ে তিনি বাঁশখালীতে মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, এমন মন্তব্য করতে পারে না। স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় একজন সাংসদ স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে পার পেয়ে যায়, তাহলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পৌঁছাবে না। তাই সরকারের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারী এই সাংসদের বিরুদ্ধে দ্রুত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দাবি জানাচ্ছি।'

সমাবেশে মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ বলেন, 'গত ২৪ আগস্ট আমরা মুক্তিযোদ্ধারা শান্তিপূর্ণভাবে মানববন্ধন করছিলাম। এমন সময় বাঁশখালীর কুলাঙ্গার সাংসদ মোস্তাফিজের পেটোয়া বাহিনী মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অতর্কিত হামলা করে। বাঁশখালীর সাংসদের এই কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েছে। দেশের প্রতিটি জেলায় মুক্তিযোদ্ধারা আজ রাজপথে নেমে এসেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত মোস্তাফিজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হবে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা রাজপথ ছাড়বো না। প্রয়োজনে আমরা সারাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে নিয়ে বাংলার রাজপথে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।'

মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, 'আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ হয়েও মোস্তাফিজ বারবার বলেছেন, বাঁশখালীতে কোনো মুক্তিযুদ্ধ হয়নি। বাঁশখালীতে যদি মুক্তিযুদ্ধ না হয় তাহলে মৌলভী সৈয়দ, সুলতানুল কবির চৌধুরী ও আবু ইউসুফ চৌধুরীরা কোথায় মুক্তিযুদ্ধ করেছেন সেটা আমি সাংসদ মোস্তাফিজের কাছ থেকে জানতে চাই। আমি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় এবং দক্ষিণ জেলা নেতৃবৃন্দের কাছে অনুরোধ করছি, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারী এমন ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগে রাখা ঠিক না। অনতিবিলম্বে তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করা হোক।'

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারবর্গের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, 'মোস্তাফিজ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি। তাই তিনি বীর বাঙালির বাঘের গর্জন শোনেননি। এ কারণে প্রেসক্লাবের মত একটি জায়গায় মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা করেছেন তিনি। আমি তাকে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ জানাচ্ছি। অন্যথায় চট্টগ্রামসহ সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।'

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি সাহেদ মুরাদ সাকুর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সদস্য মো. সরওয়ার আলম চৌধুরী মনির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন সেক্টর কমান্ডার ফোরাম চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আলম মন্টু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের অন্যতম সাক্ষী কাজী নুরুল আবছার, সেক্টর কমান্ডার ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগরীর সভাপতি সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী বাবুল, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মো. শহীদুল হক চৌধুরী ছৈয়দ, জেলা সংসদের সহকারী কমান্ডার আবদুল রাজ্জাক, মহানগর সংসদের সহকারী কমান্ডার সাধন চন্দ্র বিশ্বাস, খোরশেদ আলম (যুদ্ধাহত), সাতকানিয়া কমান্ডার মো. আবু তাহের এলএমজি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল ইসলাম ভেদু, আবু মো. সরওয়ার হোসাইন চৌধুরী, নূর উদ্দিন, সেক্টর কমান্ডার ফোরামের জেলার সাধারণ সম্পাদক নুরে আলম সিদ্দিকী, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শওকত বাঙালি প্রমুখ।

(ওএস/পি/সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২০ইং)