মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : দেশ স্বাধীনের ৪২ বছর পর পটুয়াখালীর কলাপাড়ার শহীদ সুরেন্দ্র মোহন চেীধুরীর স্মরণে নামকরণ করা হয় পৌর শহরের মনোহর পট্রি থেকে ভূমি অফিস সড়কটি। সড়কের দুই প্রান্তে বসানো হয় নামফলক। কিন্তু গত দুই মাস ধরে এভাবে ভেঙ্গে পড়ে আছে তাঁর নামফলকটি। 

এ সড়ক পথে প্রতিদিন উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাসহ প্রবীন মুক্তিযোদ্ধা, জনপ্রতিনিধিরা চলাচল করেন। কিন্তু নামফলকটি সংস্কারে নেয়া হচ্ছে না কোন পদক্ষেপ। ফলকটি কীভাবে ভাঙ্গলো, কারা ভেঙ্গেছে এ বিষয়েও কোন অনুসন্ধান কিংবা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়নি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে।

কলাপাড়ার প্রবীন রাজনীতিবিদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সম্মুকযুদ্ধে শহীদ হন সুরেন্দ্র মোহন চেীধুরী। কলাপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়ে এ বিষয়ে কোন নথি না পাওয়া যায় নি। ২০১৩ সালে কলাপাড়া পৌরসভার পক্ষ থেকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সুরেন্দ্র মোহন চেীধুরী ও শওকত হোসেনের নামে দুটি সড়কের নামকরণ করে তৎকালীন পৌর মেয়র ও মুক্তিযোদ্ধা এস এম রাকিবুল আহসান দুটি সড়কে নামফলক বসান। কিন্তু শহীদ সুরেন্দ্র মোহন চেধিুরীর নামে নামফলকটি ভেঙ্গে পড়ে আছে।

নতুন প্রজন্মের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী , সেীরভ, ন¤্রতা মুন ও তমাল জানায়, বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে শহীদ সুরেন্দ্র মোহন চেীধুরী কে আমরা জানতেও পারতাম না এ সড়কের নামফলক নির্মান না হলে। আমরা শুধু বিভিন্ন দিবস এলেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সম্মান করি। তাদের জন্য দেয়া প্রার্থণা করি। কিন্তু বাস্তবে এভাবে দর্ঘিদিন একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নামফলক ভেঙ্গে পড়ে থাকলেও কেউ বিষয়টি দেখছেন না। এটি খুবই দুঃখজনক।

কলাপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বদিউর রহমান বন্টিন বলেন, নামফলকটি এভাবে ভেঙ্গে পড়া দেখে কষ্ট হচ্ছে। স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এটা ভেঙ্গে ফেলতে পারে।

প্রবীন মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক হাবিবুল্লাহ রানা বলেন, নামফলকটি কীভাবে ভেঙ্গে পড়েছে তাঁর অনুসন্ধান করা হচ্ছে। বিষয়টি মৌখিকভাবে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে।

কলাপাড়া নাগরিক উদ্যোগের আহবায়ক ও প্রবীন রাজনীতিবিদ নাসির তালুকদার বলেন, যাদের ত্যাগের বিনিমিয়ে আমরা স্বাধীনতা পেলাম আজ তাঁদের স্মৃতি গড়াগড়ি খাচ্ছে। শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সুরেন্দ্র মোহন চেীধুরীর ত্যাগ কলাপাড়াবাসী জানে না, কিন্তু তাঁকে তাঁর পরিবারকে দেয়া হয়নি যথার্থ সম্মান।

কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক পৌর মেয়র এস এম রাকিবুল আহসান বলেন, নতুন প্রজন্মের শিশুদের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচিত করতে তৎকালীন সময়ে দুটি সড়ক দুই শহীদ মুত্তিযোদ্ধার নামে নামকরণ করেছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন সুরেন্দ্র মোহন চেীধুরীর ভেঙ্গে পড়ে থাকা নামফলকটি দেখে কষ্ট হচ্ছে।

কলাপাড়া পৌরসভার মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, ভেঙ্গে পড়া নামফলকটি তিঁনি দেখেছেন। কীভাবে এটি ভেঙ্গে পড়ে আছে তা না জানলেও ভেঙ্গে পড়া ফলকটি দ্রুই নতুনভাবে নির্মাণ করা হবে বলে জানান।

কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও কলাপাড়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, নামফলক ভেঙ্গে পড়ার বিষয়টি তাঁকে কেউ জানায় নি। জরুরী ভিত্তিতে ভেঙ্গে পড়া ফলকটি নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হবে।

(এমকেআর/এসপি/সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২০)