লালমনিরহাট প্রতিনিধি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের JU Solidarity এবং সামাজিক সংগঠন Inspire Care & Cultivate Human Aid-ICCHA/ইচ্ছা এর উদ্যোগে ৮ সেপ্টেম্বর  ২০২০ মঙ্গলবার  লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, সানিয়াজান ও সিংগীমারী ইউনিয়েনের ৫০টি বন্যার্ত পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এদিন সকালে নৌকাযোগে তিস্তার নদী পেড়িয়ে চরের বানভাসী মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়।

'JU Solidarity : Jahangirnagar University Ex-students’ and their friend's unity. এর আকবর উদ্দিন আহমেদ মিলন (জাবি-৯ম ব্যাচ) বলেন, 'গত ২৯ জুলাই থেকে শুরু করে এ যাবত ২৪টিরও বেশি বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ হয়েছে ১৫০০'র বেশি পরিবারে। সম্পূর্ণ স্বেচ্ছাশ্রমে এই দূরূহ কাজটি করছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৯ থেকে ৪৮ ব্যাচের ছেলেময়েরা। নিজস্ব এলাকায় বলে এবং অত্যন্ত সাগ্রহে বড় ভাইদের সাথে সমন্বয় করে অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে JU Solidarity ও ICCHA'র কর্মকাণ্ড চলছে। আর এই দাতব্য কাজে সহায়তা সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে সহায়তা দিয়েছেন ও দিচ্ছেন প্রাক্তন জাবিয়ানরা ও জাবিয়ান নন কিন্তু জাবিয়ানদের সাথে সম্পর্কিত অনেক শিক্ষার্থী, তাদের পরিবার ও আত্নীয় স্বজনেরা। বিদেশ থেকেও পাঠিয়েছেন কেউ কেউ। চলুক আমাদের এই কর্মধারা। আর জাবির এই মানবতার সৈনিকদের কৃতজ্ঞতা পাশাপাশি সহায়তা নিয়ে যারা এটিকে সাফল্যমন্ডিত করেছেন তাঁদের প্রতিও বিনম্র শ্রদ্ধা ও অশেষ কৃতজ্ঞতা।'

জাবির সামাজিক সংগঠন Inspire Care & Cultivate Human AID-ICCHA (ইচ্ছা) এর সভাপতি নুরুজ্জামান শুভ (ইতিহাস, ৪৫ ব্যাচ) বলেন, 'দেশের এই বন্যা সংকটকালে আমাদের জাবির সেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন 'ইচ্ছা' দেশের বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে গত দেড়মাস ধরে। যারা ফান্ড দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। ইতিমধ্যে আমরা প্রায় ১২টি জেলায় প্রায় ২৫ টি এলাকায় প্রায় ১৫০০শ পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছি।'

ইচ্ছার সহ-সভাপতি এস এন সোহেল রানা (ইতিহাস, ৪৫ ব্যাচ) বলেন, 'বন্যার সময় যারা বিভিন্নভাবে মানুষকে হেল্প করেছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা । এখন আপনার, আমার, আমাদের সামান্য আর্থিক সহযোগীতা আমাদের এই কার্যক্রমকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে সহযোগীতা করবে। নিজেদের সামর্থ্যানুযায়ী সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানাচ্ছি।

লালমনিরহাটের টিম লিডার শাহিনুর রহমান শাহিন (জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ, ৪৪ ব্যাচ) বলেন, 'উত্তর জনপদের তিস্তার পাড়ের মানুষ প্রতিবছর বন্যার কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম নয়। বসতভিটে, গৃহপালিত পশুপাখি ও ফসলি জমি হারিয়ে অর্ধহারে অনাহারে দিনাতিপাত করছেন হাজারো পরিবার। এবার কায়ক্লেশে দিনগুজরানো এসব মানুষগুলোর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন' প্রিয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন প্রাক্তন ও বর্তমান সিনিয়র-জুনিয়র ভাই ও আপুরা। তাদের প্রতি আমি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। বরাবরই হতদরিদ্র, মেহনতী মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে ভালো লাগে। নিজ এলাকার অসহায় মানুষের মুখে দু'মুঠো দু'বেলা খাবার তুলে দিতে পেরে মানসিক প্রশান্তি পাচ্ছি। আমার এ সামান্য প্রচেষ্টাকে সফল করেছেন জাবির JU Solidarity এবং সামাজিক সংগঠন Inspire Care&Cultivate Human AID-ICCHA/ইচ্ছা। তাদের প্রতি রইল অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শুভ কামনা। এছাড়াও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরা উপস্থিত ছিলেন।


জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নামে দেশের স্বনামধন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হামার পাশে দাঁড়াইছে। হামরা আজ দু’টা ভাত খেয়ে বাচমো বাহে। হামরা প্রায় না খায়া আছি আজ কয়দিন থাকি। কয়দিন থাকি যা পাছি তা প্রায় শ্যাষ। তোমরা আসি আজ বাঁচাইলেন হামাক বাহে। আল্লাহ্ তোমাক মেলাদিন বাঁচি রাখুক। দুই হাতে ছলছল চোখে ত্রাণের বস্তাটি হাতে নিয়ে এমনি করে বিড়বিড় গলায় বলে যাচ্ছিলেন গড্ডিমারী ইউনিয়নের তিস্তার চরের বিধবা নছিরন মাওয়া। লাঠির ওপর ভর দিয়ে কুঁজো হয়ে মুখের কোণে হাসি নিয়ে ছুটলেন বাড়ির পানে।

পাশেই দাঁড়িয়ে চুল দাড়িতে পাক ধরা বৃদ্ধ জোবেদ মিয়া। ত্রাণ পেয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, 'হামার বারো মাস কপালত দু:খ। দেখার কেউ নাই বাহে। জাহাঙ্গীরগর বিশ্ববিদ্যালয় থাকি কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী সামাজিক সংগঠন থাকি হামার জন্য খাবার দিছে। হামরা আজ খুব খুশি হইছি।' নৌকার হাল ধরে নদীর কিনারে বসা ত্রিশ বছরের যুবক আব্দুল জলিল বলেন, ‘প্রত্যেক বৎসর হামার দুঃখ। বন্যার পানি আসি ঘড়-বাড়ি, গরু ছাগল, ক্ষেতের খামার সব নিয়া যায়। প্রায় অর্ধহারে, অনাহারে থাকি। ইউনিয়ন পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসন যা সহায়তা দেয় তা দিয়া কয়দিন যায় তারপর কষ্টে দিনাতিপাত করি। তবে প্রায় তোমরার মতো অনেকজন আসি কিছু খাবার দিয়া যায়। তাতেই হামরা খুশি।’

শুধু বিধবা নছিরন মাওয়া কিংবা বৃদ্ধ জোবেদ মিয়া ত্রাণ পেয়ে তৃপ্তির দীর্ঘশ্বাস ফেলেন নি। খুশি হয়েছেন অত্র তিস্তার পাড়ের কয়েক‘শ মানুষ। তিস্তার পাড়ের বসতভিটে ছাড়া এসব মানুষের মুখে দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে গঠিত স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠন JU Solidarity ও ইচ্ছা এর কয়েকজন নিবেদিত মানবসেবক।


উল্লেখ্য, জাবির JU Solidarity এবং ইচ্ছা যৌথ আয়োজনে (২৯ জুলাই ২০২০) গাইবান্ধার ফুলছড়ি, ৩০ জুলাই ২০২০ কুড়িগ্রামের উলিপুরে, ৩১ জুলাই ২০২০ সুনামগঞ্জে, ৩ আগস্ট ২০২০ টাঙ্গাইলের কালিহাতি, ৫ আগস্ট ২০২০ কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী, বগুড়াতে, কুড়িগ্রামের ভোগডাঙ্গাতে, ৬ আগস্ট ২০২০ জামালপুরে, ৮ আগস্ট ২০২০ মানিকগঞ্জে, ১০ আগস্ট ২০২০ সিরাজগঞ্জে, ১২ আগস্ট ২০২০ কুড়িগ্রামের চিলমারী, ১৩ আগস্ট ২০২০ ঢাকার দোহারে, ১৪ আগস্ট মাদারীপুরে, ১৬ আগস্ট ২০২০ ফরিদপুর, ১৮ আগস্ট ২০২০ গাইবান্ধার মালিবাড়ি, কামারজানীতে, ২২ আগস্ট ২০২০ টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর, ২৪ আগস্ট ২০২০ ঢাকার ধামরাই, ২৬ আগস্ট ২০২০ সাতক্ষীরার আশাশুনি, ২৮ আগস্ট ২০২০ সিরাজগঞ্জের কাজিপুর, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ সাতক্ষীরার শ্যামনগরে, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ খুলনার কয়রায় এবং ইচ্ছা গতবছর(২০১৯ সালে) মানিকগঞ্জে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছিল।

(পি/সেপ্টেম্বর ০৯, ২০২০ইং)