সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) : নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ী ফাজিল মাদ্রাসার এক ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ সাইদুর রহমানকে তার পদ থেকে অপসারণ করে নোটিশ দিয়েছেন। এদিকে ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে কেন্দুয়া থানায় এই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু ১০ দিনেও পুলিশ সাইদুর রহমানকে গ্রেফতার করতে পারেনি। তবে অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান ধর্ষন চেষ্টার ঘটনা অস্বীকার করে ওই ছাত্রীকে তার বিবাহিতা স্ত্রী দাবী করে নিজ বাড়িতে নিয়ে যেতে ময়মনসিংহ আদালতে একটি পাল্টা মামলাও করেছেন।

ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান ময়নসিংহের নান্দাইল উপজেলার ঝাউপাড়া গ্রামের মৃত আবেদ আলী মুন্সির ছেলে। তিনি মাদ্রাসার নিকটবর্তী কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি তাতিপাড়া গ্রামের ওমর ফারুকের বাড়িতে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে বসবাস করতেন।

ছাত্রীর মা অভিযোগ করে বলেন, চলতি বছরের গত ১৮ জুলাই উপবৃত্তির ফরমে স্বাক্ষর নেয়ার কথা বলে তার কন্যাকে ভাড়া করা বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। পরে কৌশলে নিকাহ্ নামা ফরমে স্বাক্ষর দিতে বলেন। বিষয়টি আচ করতে পেরে ওই ছাত্রী ফরমে স্বাক্ষর দিতে অস্বীকৃতি জানালে অধ্যক্ষ সাইদুর রহমান ঘরের দরজা বন্ধ করে ছাত্রীকে ধর্ষনের চেষ্টা চালান। পরে ছাত্রীটির চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। লোক লজ্জার ভয়ে বিষয়টি গোপন রেখে গত ১০ আগস্ট ওই ছাত্রীটিকে পরিবারের লোকজনের সহায়তায় অন্যত্র রেজিস্ট্রী কাবিন মূলে বিয়ে দেয়া হয়। ওই খবর পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে সাইদুর রহমান ছাত্রীকে স্ত্রী দাবী করে আদালতে একটি মামলা করেন।

এদিকে অধ্যক্ষের হুমকী ধমকী ও নির্যাতন সইতে না পেরে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে কেন্দুয়া থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন ছাত্রীটির মা।

রবিবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ছাত্রীকে ধর্ষন চেষ্টার অভিযোগে মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটি গত ২২ সেপ্টেম্বর এক সভা আহবান করেন। ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক নৈতিক স্কলনের অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইদুর রহমানকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে সিনিয়র সহকারী অধ্যাপক শামসুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি এডভোকেট মোঃ নূরুল আলম বলেন, ছাত্রীকে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির তদন্ত রিপোর্ট ও পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইদুর রহমানকে তার পদ থেকে অপসারন করে চিঠি দেয়া হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কেন্দুয়া থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুল্লাহ খান জানান, মামলাটি গভীর ভাবে তদন্ত চলছে, মাদ্রাসার ছাত্রীকে ধর্ষন চেষ্টার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(এসবি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০)