রূপক মুখার্জি, নড়াইল : নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গন্ডব খেয়াঘাটে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তুষখালি দোয়ার ওপর সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলেও সংযোগ সড়কের অভাবে সেতুটি ব্যবহার করতে পারছেন না ৩২ গ্রামের মানুষজন। জমি জটিলতায় সংযোগ সড়ক নির্মিত না হওয়ায় গ্রামবাসীদের দূর্ভোগ আর দূর্দশায় যেন শেষ নেই।

এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালে স্থানীয় জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গন্ডব খেয়াঘাটে ১০ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৭৫ দশমিক ২০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হয় । নির্মাণকাজ পান গোপালগঞ্জের পিপিএল ও এনএকে নামে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৭ সালের ২২ অক্টোবর কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতার কারণে আড়াই বছর পর গত ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে মূল সেতুটির নির্মান কাজ শেষ হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে ওই সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সেতুটির মূল কাজ শেষ হয়েছে । রাস্তা থেকে সেতুটিতে উঠতে গেলে অন্তত ২০ ফুট উচ্চতা দিয়ে উঠতে হচ্ছে। একটি বাইসাইকেল চালিয়েও সেতুতে ওঠার উপায় নেই। ইঞ্জিনচালিত কোনো যানবাহনই সেতু দিয়ে যেতে পারে না। আলাপকালে স্থানীয় গ্রামবাসী জানিয়েছেন, দু’পাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় দূর্ভোগ বেড়েই চলেছে।

কাশিপুর ইউপির ২ নং ওয়ার্ডের মেম্বর ছলেমান শেখ জানান, সেতুটির সংযোগ সড়কের অভাবে ৩২ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের জন্য মারাত্বক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এলাকাবাসীর সহজ যোগাযোগের পরিবর্তে ৩০/ ৩৫ কিলোমিটার পথ ঘুরে জেলা সদরে যেতে হচ্ছে। সমাজ সেবক মুজিবর রহমান বলেন, সংযোগ সড়ক নির্মান না করায় সেতুটি মানুষের কোন উপকারে আসছে না। স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষের দাবী সংযোগ সড়কের জন্য জমির জটিলতা নিরসন করে দ্রুত গন্ডব সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মান করে সর্বসাধারণের চলাচলের উপযোগী করা হোক।

তবে ওই এলাকার রাজ্জাক মোল্যা, তসির মোল্যা ও ইব্রাহীম মোল্যা বলেন, তাদের জমির ওপর দিয়ে সংযোগ সড়ক নির্মান করা হলে তাদের ক্ষতি পূরণ দিতে হবে এ অভিযোগ এনে তারা আদালতের শরনাপন্ন হয়েছে। এতে করে, জমি জটিলতার কারণেই গন্ডব সেতুটি মানুষের উপকারে আসছে না বলে গ্রামবাসীদের অভিমত।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দুটি জানায়, সেতুটির মূল কাজ শেষ হয়েছে। দুপাশের ২৫০ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ বাকি। কিন্তু সেতুটির দক্ষিণ পাশে যেখানে ১২৫ মিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে হবে, সেখানে স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি তাদের নিজেদের জমি দাবি করে কাজে বাধা দেন। এজন্য সেতুটির সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এলজিইডি বিভাগ জমি বুঝিয়ে দিলে কয়েক দিনের মধ্যে সেতুটির শতভাগ কাজ শেষ করা সম্ভব।

এলজিইডি বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, স্থানীয় ব্যক্তিদের দাবি অযৌক্তিক। যেখানে ১২৫ মিটার সংযোগ সড়ক করার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্তত ৩০ বছর আগে থেকেই ১৮ মিটার রাস্তা রয়েছে। ওই এলাকায় রেললাইনের জন্য জমি অধিগ্রহণ হওয়ায় স্থানীয় ওই ব্যক্তিদের ধারণা, কাজে বাধা দিলে সরকার জমি অধিগ্রহণ করে সংযোগ সড়ক করবে। এতে তারা টাকা পাবেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী বিধান চন্দ্র সমাদ্দার বলেন, এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল গন্ডব খেয়াঘাটে সেতু নির্মাণের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেখানে সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, সেতুটির ডিজাইন যখন করা হয় তখন কেউ জমির মালিকানা দাবি করেনি। বর্তমানে যারা কাজে বাধা দিয়ে জমির মালিকানা দাবি করছেন, তাদের দাবি অযৌক্তিক। বিষয়টি নিয়ে উপর মহলে চিঠি দেয়া হয়েছে।

(আরএম/এসপি/অক্টোবর ০৬, ২০২০)