রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা :  পেরেক কিনতে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে বের হওয়ার ১৬ ঘণ্টা পর একটি ধানক্ষেত থেকে পুলিশ তৃতীয় শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রের লাশ উদ্ধার করেছে।  শুক্রবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ঝিটকা গ্রামের নূর মোহাম্মদের মালিকানাধীন ধান ক্ষেত থেকে এ লাশ উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় জনকে আটক করেছে।

স্বজনদের অভিযোগ,হৃদয়কে হত্যা করে লাশ ধান ক্ষেতে ফেলে রাখা হয়েছে।

নিহতের নাম হৃদয় মণ্ডল (৯)। সে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝিটকি গ্রামের বিকাশ মণ্ডলের ছেলে ও ঝিটকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র।

আটককৃতরা হলো, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝিটকি গ্রামের ইসমাইল হোসেন, তার স্ত্রী মাফিয়া, তাদের দু’ ছেলে আল আমিন ও মাসুদ, একই গ্রামের কওছার আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন ও একই গ্রামের আব্দুর রশিদের বাড়ির ভাড়াটিয়া আশাশুনি উপজেলা সদরের আব্দুল জলিলের ছেলে আল আমিন।

বিকাশ মণ্ডল জানান, তার সন্তান সম্ভবা স্ত্রী অঞ্জনা মণ্ডল আড়াই মাস আগে দেবহাটা উপজেলার গাজীরহাটে যায়। এক মাস পর তার পুত্র সন্তান হওয়ায় বর্তমানে সেখানে অবস্থান করছে। বড় ছেলে হৃদয় পার্শ্ববর্তী শিক্ষক প্রসেনজিৎ মণ্ডলের কাছে প্রাইভেট পড়ে বৃহষ্পতিবার বিকেল চারটার দিকে বাড়ি ফেরে। এরপর কয়েকটি পেরেক কেনার জন্য সে একই গ্রামের ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে যায়। ইসমাইলের ছেলে ঝিটকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র মাসুদের কাছ থেকে কয়েকটি পেরেক কিনে সে আর বাড়ি ফেরেনি। সন্ধ্যায় প্রসেনজিতের কাছে আবারো পড়তে যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে যায়নি হৃদয়। একপর্যায়ে সম্ভাব্য সকল স্থানে রাতভর খোঁজাখুজি করা হয়। স্থানীয় সৎসঙ্গ মন্দির ও ঝিটকি মসজিদ থেকে করা হয় মাইকিং।

শুক্রবার সকালে ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী মাফিয়া শামুক তুলতে যেয়ে ধান ক্ষেতে ভাসমান অবস্থায় হৃদয়ের লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়দের খবর দেন। স্থানীয়দের মাধ্যমে তিনি ছেলের লাশের সন্ধান পান। তবে খেলাধুলা করার সময় মাসুদের সঙ্গে হৃদয়ের প্রায়ই মারামারি হতো বলে জানা তিনি। খেলার সময় মারামারিকে কেন্দ্র করে হৃদয়কে হত্যা করা হতে পারে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

ঝিটকি গ্রামের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী মাফিয়া খাতুৃন বলেন, প্রতিদিনের ন্যয় তিনি শুক্রবার সকালে হাঁসের জন্য শামুক তুলতে বাড়ির পাশে ধান ক্ষেতে যান। এ সময় হৃদয়কে ধান ক্ষেতের উপর পানিতে ভাসমান অবস্থায় মরে থাকতে দেখে স্থানীয়দের খবর দেন।
ইসমাইলের ছেলে মাসুদ হোসেন জানান, তার কাছ থেকে কয়েকটি পেরেক কিনে হৃদয় কোথায় গিয়েছিল সেটা সে জানে না।

মৃতের ঠাকুর মা পুটি দাসীর অভিযোগ, ইসমাইলের ছেলে মাসুদ বিভিন্ন সময়ে চোরাই চুনি বাল্ব, কাঁচের গুলিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র হৃদয়ের কাছে বিক্রি করতো। পেরেক কিনতে যেয়ে টাকা নিয়ে কোন বিরোধের কারণে মাসুদ তাকে আচমা কোন আঘাত করলে হৃদয় মারা যাওয়ার পর সন্ধ্যার পর লাশ ধান ক্ষেতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

ঝিটকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাম্মদ মাছুরা খানম জানান, করোনার কারণে স্কুল না হলেও হৃদয় ও তার পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো।

শিবপুর ইউপি সদস্য মহাদেব সরকার জানান, ধারণা করা হচ্ছে ওই স্কুল ছাত্রকে হত্যার পর লাশ ধান ক্ষেতে ফেলে দেওয়া হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ্ উদ্দিন জানান, হৃদয়ের পেটে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছয় জনকে আটক করা হয়েছে।#সাতক্ষীরা প্রতিনিধি।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ০৯, ২০২০)