নোয়াখালী প্রতনিধি : নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের পর এবার স্বামী এবং শশ্বর বাড়ীর লোকজনের হাতে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক গৃহবধূ। নিজের নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে কান্না জড়িত কন্ঠে ঘটনার পুরো বর্ণনা দিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন ঐ গৃহবধূ। মুহুর্তেই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে যায়। ভিডিওটি ১১ হাজার ফেসবুক
ইউজার শেয়ার করে এবং ২ লক্ষ মানুষ দেখে। এতে প্রতিবাদের ঝড় উঠে সোস্যাল মিডিয়ায়।

এ বিষয়ে ৫ জনকে আসামি করে চরজব্বার থানায় ১ টি লিখিত অভিযোগ করেন ঐ নারী। অভিযোগের ৭২ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও কোন আসামিকে গ্রেফতার না করায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে নির্যাতিতা গৃহবধূ।

অপরাধীরা গৃহবধূকে বিভিন্ন মাধ্যমে গুম খুনের হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন নির্যাতিতা নারী। মামলার অভিযোগে জানাযায়, ২০১৫ সালে সুবর্ণচরউপজেলার চরক্লার্ক ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের দক্ষিন চরক্লার্ক গ্রামের মৃত
মনির আহম্মেদের পুত্র জয়নাল আবেদিন(৩৭) এর সাথে একই উপজেলার ৭ নং পূর্বচরবাটা ইউনিয়নের চরনাঙ্গুলিয়া গ্রামের নাসির উল্যার কণ্যা শামসুন্নার (২১) এর সাথে বিয়ে হয়।

বিয়ের পর শামসুন্নাহার জানতে পারেন তিনি এর আগে আরো ১ টি বিয়ে করেছেন ঐ ঘরে ২ টি সন্তানও রয়েছে। বিয়ের ৩ মাস পর থেকে ব্যবসা করার নাম করে নির্যাতিতা নারীর কাছ থেকে একাধিকবার ৮০ হাজার টাকাও নেন অভিযুক্ত জয়নাল।

নির্যাতিতা শামসুন্নাহার বলেন"গত এক বছর ধরে তাকে যৌতুকের দাবীতে জয়নাল আবেদিন ও তার বড় ভাই মাঈন উদ্দিন(৪০), জসিম উদ্দিন(৪৩), মাঈন উদ্দিনের পুত্র তারেক(১৯) একাধিকবার অমানুষিক নির্যাতন করে। গত ৫ অক্টোবর পূনরায় তাকে যৌতুকের জন্য মারধর করে স্বামী জয়নাল আবেদিন নির্যাতনের চিত্র শামসুন্নাহার পুরো শরীর জুড়ে ।

শামসুন্নাহার আরো বলেন"গত ৩/৪ মাস ধরে নদী থেকে তার পরিচিত লোকের সাথে টাকার বিনিময়ে রাত কাটাকে বাধ্য করার চেষ্টা করেন, এতে সে রাজি না হলে শুরু হয় নির্মম নির্যাতন। মেয়ের ওপর এমন নির্যাতনের খবর পেয়ে
শামসুন্নাহারের মা মেয়েকে স্বামীর বাড়ী থেকে নিয়ে আসতে গেলেও অভিযুক্তরা তাকেও পিটিয়ে আহত করে। পরে কৌশলে তারা জয়নালের বাড়ী থেকে পালিয়ে এসে চরজব্বার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ৭ অক্টোবর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে বাড়ীতে গেলে সেখানেও তাকে পূনরায় মরধর করে আহত করেন
জয়নাল। লিখিত অভিযোগের পর ৭২ ঘন্টা পার হয়ে গেলেও অভিযুক্তদের গ্রেফতার মনা করায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে নির্যাতিতা শামসুন্নাহার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী বলেন, জয়নাল এলাকায় জুয়া খেলা, মাদক বিক্রীসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত রয়েছে একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় থাকার কারনে তার ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলেনা, তারা আইন কানুনেন ধার ধারেনা" খোঁজ নিয়ে জানাযায় জয়নালের বিরুদ্ধে চরজব্বার থানায় আরো একটি মামলা রয়েছে মামলা নং ৯-২৭/০৫/২০। এছাড়াও জয়নালের বিরুদ্ধে নোয়াখালী ডিবি অফিসে আরো একটি মামলা রয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেন।

অভিযোগের বিষয়ে জয়নালের সাথে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে তিনি নির্যাতনের ঘটনা স্বীকার করে বলেন, আমি যে তাকে মারধর করেছি সেটা সবাই জানে, প্রয়োজনে আরো মারবো" পরে একাধিকবার ফোন করেও তার সাথে কন্টাক্ট করা সম্ভব হয়নি।

লিখিত অভিযোগের বিষয়ে চরজব্বার থানার (ওসি তদন্ত) ইব্রাহিম খলিল এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "লিখিত অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছ, মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে এবং মামলা কোর্টে প্রেরণের প্রস্তুতি চলছে এবং আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলমান আছে"।

(এস/এসপি/অক্টোবর ০৯, ২০২০)