স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : দিনাজপুরের পার্বতীপুরে হাত পা বাধা, ক্ষতবিক্ষত অজ্ঞাত নারীর লাশের পরিচয় মিলেছে। নির্মম হত্যার শিকার ওই নারীর নাম রুখিয়া রাউত (২৩)। তিনি পাশর্ববর্তী রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের আদিবাসী পল্লী মিশন পাড়ার দিনেশ রাউত (বাবা) ও সুমতি (মা) রাউতের মেয়ে। রংপুর কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের অনার্স (ইতিহাস) শেষ বর্ষের ছাত্রী ছিলেন তিনি।

রুখিয়া হত্যাকান্ডের মুল আসামিসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ । আনিসুর রহমান (২৫), আশিকুজ্জামান(৪০) ও রাজু (২৬) নামে ৩ জনকে বুধবার রাতে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা আনিসুর রহমান রংপুর জেলার বদরগঞ্জ উপজেলার খোদ্য বাগবাড় গ্রামের আবদুল গফুরের ছেলে , ইজিবাইক চালক রাজু একই গ্রামের বাচ্চু’র ছেলে ও আশিকুজ্জামান পার্বতীপুর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের দূর্গাপুর নয়াবাজার গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ইজিবাইকটি পুলিশ জব্দ করেছে।ইতোমধ্যে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটন করছে পার্বতীপুর মডেল থানা পুলিশ।

গত মঙ্গলবার সকালে পার্বতীপুর-মধ্যপাড়া-মিঠাপুকুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের পাঁচপুকুরিয়া শাল বাগানে একটি নারীর লাশ পড়ে থাকতে দেখে এলাকাবাসী পুলিশে খবর দেয়।খবর পেয়ে মধ্যপাড়া তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ওড়না দিয়ে হাত পা একসাথে করে বাধা অবস্থায় লাশটি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। লাশটির মুখে ও শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। দাঁত ভেঙ্গে ফেলা হয়। রাতে মেয়েটির পরিচয় পাওয়া যায়।পার্বতীপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা জানায়,রুখিয়ার সাথে দীর্ঘদিন ধরে আনিছুরের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একাধিকবার তাদের যৌনমিলনও হয়। কিছুদিন আগে আনিছুর অন্যত্র বিয়ে করে। এতে রুখিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে আনিছুরকে বিভিন্ন হুমকি দিতো। এ অবস্থায় আনিছুর তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে গত সোমবার একই গ্রামের রাজ এর ইজিবাইক ভাড়া করে। বিকেল ৫টার দিকে মোবাইলফোনে রুখিয়াকে ডেকে নিয়ে ওই ইজিবাইকে করে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করে।

ওইদিন রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে আনিছুর ইজিবাইকের মধ্যেই চালক রাজ এর সহায়তায় রুখিয়াকে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যা করে। পরে ওই ওড়না দিয়ে তার হাত পা বেধেঁ পার্বতীপুর-মধ্যপাড়া-মিঠাপুকুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে পার্বতীপুর উপজেলার হরিরামপুর ইউনিয়নের পাঁচপুকুরিয়া শালবনে ফেলে যায়। এরপর আনিছুর ভ্যানচালক আশিকুজ্জামানকে ডেকে নিয়ে নিজ বাড়ীতে যায়। তিনি আরও বলেন, হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল আনিছুর ও রাজ।

তথ্য প্রযুক্তি সহায়তায় নিজ নিজ বাড়ী থেকে ঘাতকদের গ্রেফতার করা হয়। আনিছুর ও রাজ হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। ১৬৪ ধারায় জবাব বন্দি দিতে রাজি হওয়ায় তাদেরকে দিনাজপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে পরিদর্শক সোহেল রানা জানান।

তবে, রুখিয়ার বাবা দিনেশ রাউত সাংবাদিকদের জানান, তার মেয়েকে পাশবিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে। আনিছুর প্রায় রুখিয়াকে উক্তত্য করতো। সোমবার বিকেলে রুখিয়াকে অপহরণ করা হয়। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রুখিয়ার মা সুমতি মেয়ের সাথে সর্বশেষ কথা বলেন। এরপর থেকে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে হরিরামপুর ইউনিয়নের গ্রাম পুলিশ আবরাহাম মিঞ্জি বাদী হয়ে পার্বতীপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরে পুলিশ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যা রহষ্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়।

(এস/এসপি/অক্টোবর ০৯, ২০২০)