মো.আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : দেশের আরেক বরণ্য আলেম ও বহত্তর সিলেটের প্রবীণ মুরব্বী, বরুণার পীর এবং মৌলভীবাজার জেলার সবচেয়ে বড় কওমী মাদ্রাসা জামেয়া লুৎফিয়া আনোয়ারুল উলুম হামিদ নগর বরুণা মাদ্রাসার ছদরে মুহতামিম (প্রিন্সিপাল) শায়খুল হাদিস আল্লামা খলীলুর রহমান (৮০) হামিদী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিউন)। 

বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) রাত পৌনে ২টার দিকে তিনি মৌলভীবাজার সদর ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। সিলেটের সবচেয়ে শীর্ষ এই আলেমের মৃত্যুর সংবাদে মুহুর্তেই শোকের ছায়া নেমে আসে বিভিন্ন মহলে।

শুক্রবার (৯ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ৩টার দিকে লাখো মুসল্লীদের অংশগ্রহণে বাবার প্রতিষ্ঠিত বরুণা মাদ্রাসা মাঠে জনপ্রিয় এই আলেমের জানাজার নামাজ সম্পন্ন হয়েছে। এতে ইমামতি করেন তার দ্বিতীয় ছেলে মাওলানা শেখ বদরুল আলম হামিদী। জানাজা শেষে বরুণা মাদ্রাসা সংলগ্ন পারিবারিক কবরস্থান বাবা শায়খে বর্ণভী রাহ. এর কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।

এদিকে জানাজার পূর্বে সংক্ষিপ্ত আলোচনায় অংশ নেন, মৌলভীবাজার ৪ (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য,সাবেক চিফ হুইপ,আলহাজ্ব উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ এমপি, মৌলভীবাজার পৌর সভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজরুল ইসলাম। এসময় আলেমদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শেখবাড়ি জামিয়ার মুহতামিম, শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি রশিদুর রহমান ফারুক, মাওলানা হাফেজ ওলিউর রহমান, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ (বেফাকের) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুল বারি ধর্মপুরী, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাক) মহাপরিচালক অধ্যাপক মাওলানা যুবায়ের আহমদ চৌধুরী, বেফাক মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক,মাওলানা নুরুল ইসলাম ওলিপুরী,সিলেটের জামেয়া নূরিয়া ভার্থখলা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা মাজদুদ্দীন আহমদ, গহরপুর জামিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা মুসলেহ উদ্দিন রাজু, বানিয়াচং ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দাল হোসেন খান, দারুল উলুম মাদরাসার মুহতামিম শায়খুল হাদিস আল্লামা মুফতি শামছুজ্জোহা, খেলাফত মজলিসের যুগ্ন মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, বড়লেখা সরকারি কলেজের অধ্যাপক মাওলানা আব্দুস সবুর, মাওলানা সৈয়দ মুজাদ্দিদ আলী, ইসলামী ফাউন্ডেশন হবিগঞ্জ জেলার পরিচালক মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম, মোহাম্মদপুর আনোয়ারা বেগম মহিলা মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা শায়খ মুজিবুর রহমান মুজাহিদ,জামেয়া আরাবিয়ার প্রিন্সিপাল শায়খুল হাদিস মাওলানা মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমী, মৌলভীবাজার জামিয়া রাহমানিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা জামিল আহমদ আনসারী,নুরুল কোরআন মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আহমদ বেলাল, মাওলানা নুরুল মুত্তাকিন জুনাইদ ছাহেবজাদায়ে মাধবপুরী সহ শতাধিক আলেম।
এদিকে আল্লামা খলীলুর রহমানে মৃত্যুর খবরে বৃহস্পতিবার রাত ২টা থেকেই দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন লাখো ভক্ত অনুসারী। জুমআর নামাজের আগেই লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় বরুণা মাদ্রাসা প্রাঙ্গণসহ আশপাশের পুরো এলাকা। শুক্রবার সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বরুণা মাদ্রাসামুখী মানুষের ঢল নামে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের পাশাপাশি মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনস থেকে অতিরিক্ত রিজার্ভ পুলিশ মোতায়েন করা হয়।

উল্লেখ্য: আল্লামা খলিলুর রহমান দীর্ঘদিন যাবত ফুঁসফুসের সমস্যা,ডায়াবেটিস,হাই প্রেসারসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। গত ৯ সেপ্টেম্বর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সিলেটের নর্থ ইষ্ট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তীতে ফের অবস্থার অবনতি হলে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নেওয়া হয়। এবং সেখানেই তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮০ বছর। তিনি স্ত্রী, ৩ ছেলে ও ৫ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। শায়খুল হাদিস আল্লামা খলিলুর রহমান হামিদী দীর্ঘদিন বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের (বেফাকের) কেন্দ্রীয় সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি ৬০ বছর যাবৎ হাদিসের মসনদে সমাসিন ছিলেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশের শীর্ষ আলেম ও যুগশ্রেষ্ঠ বুজুর্গ এবং আধ্যাত্মিক রাহবরকে হারিয়ে সিলেটবাসী শোকাহত।

(একে/এসপি/অক্টোবর ০৯, ২০২০)