মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : সম্পত্তির দখল বুঝে চাওয়ায় ষাটোর্ধ আপন বোন শেফালী বেগমকে ঘরে ঢুকে নির্মম নির্যাতনের পর রড দিয়ে পিটিয়ে দুই পা গুঁড়িয়ে দিয়েছে আপন ভাই মগরব আলী খলিফা ও তার সন্তানরা। চাঁকু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে পায়ের গোড়ালী। এ সময় মাকে বাঁচাতে ছেলে ও তার স্ত্রী এগিয়ে আসলে তাদেরও পিটিয়ে আহত করা হয়। পটুয়াখালীর কলাপাড়া নীলগঞ্জ ইউনিয়নের খলিলপুর গ্রামে শুক্রবার সন্ধায় এ মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। হামলায় আহতদের আশংকাজনক অবস্থায় কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতেই উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের বরিশাল শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। তবে হামলাকারীর দাবি সে তার বোনকে মারেনি। পুলিশ জানায় খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। তবে কোন পক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি। 

হামলার শিকার শেফালী বেগম ও তার স্বজনরা জানান,স্বামী পরিত্যক্তা গৃহবধু প্রায় ত্রিশ বছর ঢাকায় ইটভাঙ্গা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলো। করোনা মহামারিতে কর্মহীন হয়ে পড়লে গত সাত মাস আগে পিতার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া জমিতে স্থানীয়দের সহায়তায় ঘর করে এক ছেলে ও পুত্রবধু নিয়ে বসবাস করে আসছিলো। পৈত্রিক সম্পত্তিতে ঘর তুললেও শেফালীর সাত কড়া জমি দখল করে রাখে ভাই মগরব আলী ফকির। এমনকি বাড়িতে আসা যাওয়ার রাস্তাও আটকে দেয়। এ কারণে গোটা বর্ষায় ধান ক্ষেত দিয়ে হাঁটু পানি পেড়িয়ে তাদের চলাচল করতে হয়েছে। এ নিয়ে গত মাসে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে সালিশ বৈঠকও হয। সালিশে মগরব আলীকে চলাচলের রাস্তার জন্য ছয় ফুট জায়গা ছেড়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু বোন ও ভাগ্নের চলাচলের রাস্তা ছাড়েনি সে।

আহত শেফালী বেগম জানায়, শুক্রবার বিকালে তাদের চলাচলের রাস্তা ছেড়ে দিতে ভাই মগরব আলীকে চাপ দেয় এবং দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি। এ ঘটনার রেশ ধরে মগরব আলী ও তার ছেলে বাবুল ফকির, কাসেম ফকির, ভাইয়ের ছেলে নাসির ফকির, রিয়াজ ফকির, মিরাজ ফকির ও পিয়ারা বেগম রডসহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ঘরে হামলা করে তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে দুই পা হাটুর নিচ থেকে রড দিয়ে পিটিয়ে গুড়ো করে দেয়। চাকু দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে পায়ের গোড়ালী জখম করে। লুট করে নগদ টাকা ও মালামাল।

মায়ের উপর আপন মামা ও মামাতো ভাইদের অত্যাচারের খবর পেয়ে ছেলে আলামিন ও তার স্ত্রী পিয়ারা বেগম এগিয়ে এলে তাদেরও পিটিয়ে জখম করে। কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে শরীরের বিভিন্ন অংশ। তাদের আর্তি, বয়সের ভারে মা ন্যুয়ে পড়েছে। বাবা থেকেও নেই। কিন্তু নানার সম্পত্তি দখল নিতে আপন মামা তার মা ও তাদের উপর এ হামলা চালায়।

তবে এ হামলার কথা অস্বীকার করেছে মগরব আলী ফকির। উল্টো তাকে তার বোন লাঠি দিয়ে পিটিয়ে মাথায় আঘাত করেছে দাবি করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। তার দাবি সে হামলা করেনি। তার বোন ও তার ছেলেরা তাকে পিটিয়ে আহত করেছে। আর সে কোন জমি দখল করেননি।

এ ঘটনার সালিশে উপস্থিত নীলগঞ্জ ইউনিয়নের প্রবীন শিক্ষক মো. শাহআলম বলেন, কাগজপত্র দেখে তারা সালিশে শেফালী বেগমের চলাচলের জন্য রাস্তা ছেড়ে দেওয়ার জন্য বলেছেন। কিন্তু রাস্তা না ছেড়ে আজ উল্টো মধ্যযুগীয় কায়দায় তাকে পিটিয়ে দুই পা গুড়িয়ে দিয়েছে।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীসহ স্থানীয়রা বলেন, জীবনের শেষলগ্নে শেফালী বেগম বাবার দেয়া সম্পত্তিতে আশ্রয় নিলেও তার ভাই দীর্ঘদিন সম্পত্তি দখল করে রেখেছে। তারা এ বর্বরোচিত হামলার দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি এবং শেফালী বেগমের জমির দখল বুঝিয়ে দেয়ার দাবি করেন।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডা. মাহমুদুর রহমান বলেন, শেফালী বেগমের দুই পায়ের একাধিক হাড় ভেঙ্গে গুড়ো হয়ে গেছে। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রেফার করা হয়েছে।
কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, পুলিশ খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে গেছে। কোন পক্ষই এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ করেনি।

(এমকে/এসপি/অক্টোবর ১০, ২০২০)