আবীর আহাদ


সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও লুটপাটের জন্যে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা এদেশ স্বাধীন করিনি । অথচ আমাদের ত্যাগ ও বীরত্বে অর্জিত স্বাধীন দেশটি আজ দুর্নীতিবাজ লুটেরা মাফিয়া ও স্বেচ্ছাচারীদর অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে, আর অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের মধ্যে মানবেতর জীবনযাপন করছেন । তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই । চিকিৎসার অভাবে নানান রোগে ধুকে ধুকে মরছে । তেমন অবস্থা তাদের সন্তানদের । অর্থের অভাবে তাদেরকে লেখাপড়া শেখাতে পারেননি । যদিও বা কেউ কেউ কায়ক্লেশে কিছু সন্তানদের উচ্চশিক্ষা লাভ করাতে পেরেছে কিন্তু তাদের বেশির ভাগই বেকার । মুক্তিযোদ্ধা কোটা যখন ছিলো তখনো তাদের চাকরি হয়নি, আর এখন তো সেই কোটাটি নেই । বিশাল অর্থই চাকরি প্রাপ্তির একমাত্র কার্যকরি যোগ্যতা ! সে-যোগ্যতা তো মুক্তিযোদ্ধাদের নেই ।

মুক্তিযোদ্ধারা পিছিয়ে আছে প্রকৃতপক্ষে তাদের সততা ও দেশপ্রেমের কারণে । একদিন এ দেশটি তাদের কবলে ছিলো । মুক্তিযুদ্ধের সময় তারা ইচ্ছা করলে কয়েক লক্ষ স্বচ্ছল স্বাধীনতাবিরোধী লোকদের অর্থসম্পদ দখল করে রাতারাতি ধনী হয়ে যেতে পারতেন । কিন্তু তারা তা করেননি বলেই আজ তাদের কপালে দারিদ্র্যের অভিশাপ নেমে এসেছে । অথচ সেই স্বাধীনতাবিরোধী এবং অন্যান্য পেশার লোকজনসহ সুবিধাবাদী রাজনৈতিক টাউট, দুর্নীতিবাজ আমলা ও লুটেরা ব্যবসায়ীরা মুক্তিযোদ্ধাদের দেশটাকে লুটেপুটে খাচ্ছে । দেশ থেকে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে ।

মুক্তিযোদ্ধারা আজ তাদেরই সৃষ্ট দেশে পরবাসী । তাদের ত্যাগ ও বীরত্বের মর্যাদা নেই । সরকার করুণা করে একটি যৎকিঞ্চিত মাসিক ভাতা দেন, এটিই যেনো তাদের একমাত্র খয়রাতি প্রাপ্য ! সর্বোপরি প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কানে বাজে বিভিন্ন সরকারের গোঁজামিলের সংজ্ঞায় তৈরি মুক্তিযোদ্ধাদেরই বীরত্বে ভাগবসানো প্রায় আশি/পঁচাশি হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অট্টহাসি । এসবই মুক্তিযুদ্ধের অপমান, স্বাধীনতার অপমান, বাঙালি জাতির অপমান । মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্বিসহ জীবন----এটা সভ্যতার অপমান !

লেখক :চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।