বাগেরহাট প্রতিনিধি : সাংস্কৃতিক আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার এরশাদের মসনদ কাঁপিয়ে তোলা সংগঠন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট কবি ও গীতিকার রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ৬৪তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। ১৯৫৬ সালের ১৬ অক্টোবর পিতার কর্মস্থল বরিশালে জন্ম গ্রহণ করেন করেন এই ক্ষনজন্মা কবি। দিনটির স্মরণে রুদ্র স্মৃতি সংসদ আজ দুপুরে কবির গ্রামের বাড়ি বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার মিঠাখালিতে কবির কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, বাদজুমা মিলাদ মাহফিল এবং দোয়ার আয়োজন করে। 

করোনাকালীন দুর্যোগের কথা মাথায় রেখে এবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে সীমিত পরিসরে সংসদ এ আয়োজন করে।

উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে ১৯৮০ সালে বিএ (সম্মান) ও ১৯৮৩ সালে এমএ পাশ করেন।

অকাল প্রয়াত এই কবি যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। একই সঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। দেশ ও জাতির সংকটে রুদ্রের কবিতা হয়ে উঠেছে তারুণ্যের দীপ্র হাতিয়ার। বাংলাদেশের কবিতায় অবিসস্মরণীয় এই কবির শিল্পমগ্ন উচ্চারণ তাকে দিয়েছে সত্তরের অন্যতম কবি-স্বীকৃতি।

কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ মাত্র ৩৫ বছরের (১৯৫৬-১৯৯১) স্বল্পায়ু জীবনে তিনি সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’ সহ অর্ধ শতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। পরবর্তীকালে এ গানটির জন্য তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি প্রদত্ত ১৯৯৭ সালের শ্রেষ্ঠ গীতিকারের (মরণোত্তর) সম্মাননা লাভ করেন।‘উপদ্রুত উপকূল’ ও ‘ফিরে চাই স্বর্নগ্রাম’ কাব্যগ্রন্থ দুটির জন্য ‘সংস্কৃতি সংসদ’ থেকে পরপর দু’বছর ‘মুনীর চৌধুরী সাহিত্য পুরষ্কার লাভ করেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট ও জাতীয় কবিতা পরিষদ গঠনে তিনি গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা পালন করেন।

অকাল প্রয়াত কবি তার ৩৪ বছরের স্বল্পায়ু জীবনে সাতটি কাব্যগ্রন্থ ছাড়াও গল্প, কাব্যনাট্য এবং ‘ভালো আছি ভালো থেকো’সহ অর্ধশতাধিক গান রচনা ও সুরারোপ করেছেন। তার জনপ্্িরয় কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো- ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাবলীর মধ্যে কবিতার বই রয়েছে, উপদ্রুত উপকূল (১৯৭৯), ফিরে চাই স্বর্ণগ্রাম (১৯৮১), মানুষের মানচিত্র (১৯৮৬), ছোবল (১৯৮৬), গল্প (১৯৮৭), দিয়েছিলে সকল আকাশ (১৯৮৮) এবং মৌলিক মুখোশ (১৯৯০)। এছাড়া সোনালি শিশির (ছোটগল্প), বিষ বিরিক্ষের বীজ (নাট্যকাব্য) ও মনুষ্য জীবন (গল্প) নামে গ্রন্থ রয়েছে। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে ‘মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার’ লাভ করেন রুদ্র মহম্মদ শহীদুল্লাহ।

তিনি ১৯৮১ সালের ২৯ জানুয়ারি বহুল আলোচিত নারীবাদী লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে বিয়ে করেন। তবে ১৯৮৮ সালে তাদের দাম্পত্য জীবনের অবসান ঘটে।

’ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো’ জনপ্রিয় এ গানের স্রষ্টা তারুণ্য ও সংগ্রামের দীপ্ত প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ’র ১৯৯১ সালের ২১ জুন মাত্র ৩৫ বছর বয়সে তিনি মারা যান।

(এসএকে/এসপি/অক্টোবর ১৬, ২০২০)