সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট: দৈনিক বাংলা ৭১ পত্রিকায় ভূমিদস্যুতা, জমি দখল, অবৈধ কেমিক্যাল বাণিজ্য নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিককে হুমকি দিয়েছেন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া রাজাকার মতিউর রহমান নিজামীর সহযোগী হাজি রইস উদ্দীন।

নিজামীর জীবদ্দশায় হাজি রইসের সঙ্গে তার দহরম-মহরম ছিল। বিএনপি-জামায়াত সরকারের মন্ত্রী আলবদর নেতা নিজামীর ছত্রছায় কপাল খোলে ব্যবসায়ী হাজি রইসের। নিজামীর আশীর্বাদে সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে এখন কোটি কোটি টাকার মালিক আরমানিটোলার কেমিক্যাল ব্যবসায়ী হাজি রইস।
সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়ায় রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় গত ৯ অক্টোবর একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। জিডিতে বাংলা ৭১ এর সাংবাদিক উল্লেখ করেন, আমি গত অক্টোবর হাজি রইসের নামে একটি সংবাদ প্রকাশ করি। হাতিরঝিলের একটি রেস্টুরেন্টে অবস্থান করা কালে হাজি রইস আমাকে ফোন করে গালিগালাজ করেন। এ সময় হাজি রইস বলেন, ‘আমার লাইসেন্স করা পিস্তল আছে। তুই আমার সামনে আয় তোর হিম্মত কত দেখতে চাই।’ এ ছাড়া অশোভন আচরণসহ বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে হাজি রইস কল কেটে দেন।
হাজি রইসের বিরুদ্ধে জিডি নম্বর: ৪০৩। জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা জীবন স্ট্যালিন বলেন, ‘জিডির তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি।’
হাজি রইসের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালিয়ে জানা গেছে, তিনি ব্যবসার আড়ালে লাখ লাখ টাকা কর ফাঁকি দিচ্ছেন। সাভারের বলিয়ারপুর পুরে যমুনা ন্যাচারাল পার্ক থেকেও কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
হাজি রইস উদ্দিন ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করছেন ধানমণ্ডির ৫ নম্বর রোডের ৩৮ নম্বর বাসায়। তিনি চড়েন দামি গাড়িতে, তার নিরাপত্তায় রয়েছে একজন গানম্যান। এ ছাড়া হাজি রইসের রয়েছে লাইসেন্স করা পিস্তলও। অথচ বছর বিশেক আগেও হাজি রইস ছিলেন পুরান ঢাকার আরমানিটোলার সাধারণ একজন কেমিক্যাল ব্যবসায়ী। কিন্তু বিএনপি-জামায়াতের সময়ে আলবদর নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ছত্রছাত্রায় কপাল খোলে ওই ব্যবসায়ীর।
এই হাজি রইস এখন সাভারে শত বিঘা জমির মালিক। সাভারের বলিয়ারপুরে তার যমুনা ন্যাচারাল পার্ক ও গাবতলীতে রয়েছে একটি তেল পাম্প। আরমানিটোলায় রয়েছে বাড়ি। এ ছাড়া নামে-বেনামে আরও সম্পদের মালিক এই হাজি রইস।
তার ঘনিষ্ঠসূত্রে জানা যায়, পাবনার বেড়া উপজেলা থেকে ঢাকায় আসা হাজি রইস সাধারণ এক কৃষি পরিবারের সন্তান। ঢাকায় এসে চাকরি করতেন ১৫০০ টাকা বেতনে। থাকতেন অন্যের বাড়িতে। কেমিক্যাল ব্যবসার ধরন বুঝে হাজি রইস ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসার ফাঁক-ফোকর গলে বিত্ত বৈভবের মালিক হয়ে ওঠেন তিনি। পাশাপাশি শুরু করেন জমির ব্যবসা। নিজের আয়ত্তে নেন সাভারের বিঘার পর বিঘা জমি।
হাজি রইসের পরিবার সূত্র জানায়, বিএনপি সরকারের আমলে নাটকীয়ভাবে উত্থান ঘটে হাজি রইসের। পাবনার রাজনীতিক মতিউর রহমান নিজামীর সঙ্গে পাবনার সন্তান হিসেবে সখ্য তৈরি হয় হাজি রইসের। আলবদর নেতা ও যুদ্ধাপরাধী মতিউর রহমান নিজামী মন্ত্রী থাকায় তার সুফলও ভোগ করেন এই ব্যবসায়ী। নিজামীর সুনজর থাকায় সরকারি জায়গা নামমাত্র মূল্যে লিজ নিয়ে শুরু করে ফিলিং স্টেশনের ব্যবসা। নিজামী শিল্পমন্ত্রী থাকায় কেমিক্যাল ব্যবসাও ফুলে ফেঁপে বড় হয়ে ওঠে। সরাসরি কোনো রাজনীতি না করলেও হাজি রইস বিএনপি-জামায়াত ঘরানার বলে সূত্র জানিয়েছে।
আল বদর নেতা নিজামীর সঙ্গে ছবিও ছিল হাজি রইসের। প্রভাব খাটাতে নিজের অফিস কক্ষে সাবেক মন্ত্রীর ছবি ঝুলিয়ে রাখেন। তবে ২০১৬ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় সেই ছবি ফেলে দেন বলে জানান হাজী রইসের সাবেক একজন কর্মচারী।
অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক হাজি রইস উদ্দিন। সাভারের বলিয়ারপুরের যমুনা ন্যাচারাল পার্কে ১০০ টাকার টিকেট কেটে যে কেউ ঢুকে অবাধ বিনোদন করতে পারেন। সেখানে অসামাজিক কর্মকাণ্ডও চলে।
সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার বিষয়ে বাংলা ৭১ কে হাজি রইস বলেন, ‘রিপোর্টারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। হয়ত কিছু উচ্চবাচ্য হয়েছে। তার মানে এই নয় যে আমি তাকে হুমকি দিয়েছি। তার সঙ্গে তো আমার কোনো শত্রুতা নেই।’
আর কোন পত্রিকা কী নিউজ করে এগুলো নিয়ে মাথা ঘামানোর কোনো দরকার নেই বলে মন্তব্য করে হাজি রইস।

(ওএস/পিএস/১৮ অক্টোবর, ২০২০)