আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সরকারের সমালোচক একটি অনলাইন টেলিভিশন স্টেশনের সম্প্রচার স্থগিতের নির্দেশ দিয়েছে থাইল্যান্ডের আদালত। দেশটিতে তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলে আসা বিক্ষোভ-প্রতিবাদের অবসানে সরকারের নেয়া জরুরি পদক্ষেপ লঙ্ঘন করায় ওই টেলিভিশন স্টেশন স্থগিত করা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স।

দেশটির ডিজিটাল মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র পুচাপং নোদথাইসং বলেছেন, ভুয়া তথ্য আপলোডের মাধ্যমে অনলাইন সম্প্রচার মাধ্যম ভয়েস টিভি থাইল্যান্ডের কম্পিউটার ক্রাইম অ্যাক্ট লঙ্ঘন করেছে।

থাইল্যান্ডে রাজতন্ত্রের অবসান, সংবিধান সংশোধন এবং ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী প্রায়ূত চান-ওচার পদত্যাগের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন দেশটির হাজার হাজার মানুষ; যাদের বেশিরভাগই তরুণ-তরুণী।

দেশটিতে গত কয়েকদিন ধরে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকার গণমাধ্যমে বিক্ষোভের সংবাদ প্রকাশ এবং পাঁচজনের বেশি মানুষের সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এমনকি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেশটিতে জরুরি অবস্থাও জারি করা হয়। যদিও বিক্ষোভকারীরা সরকারের জরুরি অবস্থা উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন।

দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা থাইল্যান্ডের সরকারের বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণ চেষ্টার নিন্দা জানিয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে দেশটিতে বিক্ষোভের ৩ লাখের বেশি কনটেন্ট থাইল্যান্ডের আইন লঙ্ঘন করেছে বলে মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা জানিয়েছেন। তবে সরকারের এমন পদক্ষেপকে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টা বলে মন্তব্য করেছে দেশটিতে অনলাইনে বাক- স্বাধীনতার জন্য আন্দোলন করে আসা সংস্থা দ্য মানুশিয়া ফাউন্ডেশন।

সংস্থাটির পরিচালক এমিলি পালামি প্রাদিচিৎ বলেন, বিক্ষোভের ওপর সরকারের নিষেধাজ্ঞায় কোনও কাজ না হওয়ায় সেনা-সমর্থিত সরকার সত্য প্রকাশে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টির পায়তারা করছে। আমরা মুক্ত গণমাধ্যম রক্ষার আহ্বান জানাই।

ভয়েস টিভির প্রধান সম্পাদক রিত্তিকর্ন মহাখাচাভর্ন বলেন, আদালতের নির্দেশনা হাতে না পাওয়া পর্যন্ত তারা সম্প্রচার অব্যাহত রাখবেন। তিনি বলেন, সাংবাদিকতার নীতিমালার ওপর ভিত্তি করেই আমরা সম্প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছি এবং এই কাজ অব্যাহত থাকবে।

সোমবার থাইল্যান্ড বলছে, সরকারি বিধি-নিষেধ লঙ্ঘন করায় আরও তিনটি গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

সরকারের সমালোচক ভয়েস টিভির মালিকানা রয়েছে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রা ও তার বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা পরিবারের হাতে। ২০১৪ সালে এক অভ্যত্থানে থাকসিন সিনাওয়াত্রা ক্ষমতাচ্যুত হন। পরে তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা দায়ের হলে দেশ ত্যাগ করেন। যদিও দুর্নীতির মামলাকে ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে থাইল্যান্ডের রাজা মহা বাজিরালংকর্ন ও প্রায়ূতের নেতৃত্বাধীন রাজতন্ত্র। গত জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে দেশটিতে রাজতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন করে আসছেন হাজার হাজার মানুষ।

অন্যদিকে, প্রধানমন্ত্রী প্রায়ূত চান ওচার বিরুদ্ধে গত বছরের নির্বাচনে জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার অভিযোগ তুলে তার পদত্যাগের দাবি করছেন বিক্ষোভকারীরা। যদিও প্রায়ূত বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২০, ২০২০)