কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি : ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বিল অভিমুখে মানুষের ঢল। কারও কাঁধে পলো, আবার কারও হাতে ঠেলা 

জাল, খুইরা জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানা উপকরণ। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ জড়ো হচ্ছে এক স্থানে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সববয়সী মানুষের উপস্থিতিতে বিলপাড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। এরপর দল বেঁধে বিলের পানিতে নেমে মাছ শিকারের আনন্দে মেতে ওঠেন তারা। এই চিত্র জেলার কটিয়াদী উপজেলার মুমুরদিয়া ইউনিয়নের পুরুষবধিয়া বিলে বাঙালি ঐতিহ্যের প্রতীক মাছ ধরা উৎসবকে কেন্দ্র করে।

স্থানীয়ভাবে মাছ ধরার এই উৎসবকে বলা হয় ‘হাউত উৎসব’। প্রতি বছর এ উৎসব আয়োজন করে থাকেন গ্রামবাসীরা। মুমুরদিয়া ইউনিয়নসহ আশে পাশের গ্রামের মুরুব্বিরা বৈঠকে বসে মাছ ধরার উৎসবের তারিখ নির্ধারণ করেন। এ বছর বুধবার (২১ অক্টোবর) উৎসবের দিন ধার্য করা হয়।

নির্ধারিত দিনে কটিয়াদী উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার লোক কাকডাকা ভোর থেকে মাছ শিকার করতে আসেন পুরুষবধিয়া বিলে। সঙ্গে করে নিয়ে আসেন পলোসহ মাছ ধরার বিভিন্ন উপকরণ।

উৎসবে অংশ নেওয়া মৎস্য শিকারিরা বলেন, মাছ পাই আর না পাই এটি আমাদের অন্যতম শখ। হাজার হাজার মানুষের সাথে মাছ ধরার আনন্দই আলাদা। তাই শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রতি বছর এই দিনে পুরুষবধিয়া বিলে চলে আসি উৎসবে যোগ দিতে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় আট থেকে দশ হাজার লোক যোগ দিয়েছে মাছ ধরার এই উৎসবে। পলো দিয়ে পানিতে একের পর এক চাপ দেওয়া আর হইহুল্লোড় করে সামনের দিকে অঘোষিত ছন্দের তালে তালে এগিয়ে যাওয়া চিরচেনা গ্রামবাংলার অপরূপ দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। তবে বিলে মাছ মিলছে না। বিভিন্ন কারণে বিলের মাছ কমে যাওয়াই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অধিকাংশ মৎস্যপ্রেমীদের।

মুমরদিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম টিটো বলেন, প্রতিবছরই ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মাছ ধরার উৎসব উদযাপিত হয়ে থাকে। গ্রামবাসীদের নিকট এটি একটি আনন্দ উৎসব। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে ‘হাউত উৎসব’ কে টিকিয়ে রাখতে হবে।

(ডিএস/এসপি/অক্টোবর ২১, ২০২০)