মো.আব্দুল কাইয়ুম, মৌলভীবাজার : সরকার দেশব্যাপী খুচরা বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ টাকা পুনর্র্নিধারণ করলেও মৌলভীবাজারে বর্তমানে খুচরা বাজারে যে দামে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে তার সাথে সরকার নির্ধারিত দামের কোন মিল নেই।

বুধবার (২১ অক্টোবর) মৌলভীবাজার শহরের আলুর আড়ৎ ও খুচরা দোকান গুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, সরকার প্রতি কেজি আলুর খুচরা দাম নির্ধরাণ করেছে ৩০ টাকার পরিবর্তে ৩৫ টাকা কেজি দরে কিন্তু মৌলভীবাজার শহরের দোকান গুলোতে প্রতি কেজি আলু খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকা কেজি দরে। আর শহর থেকে দূরের গ্রামাঞ্চলের দোকান গুলোতে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি আলু ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে। আর খোলা বাজারে ট্রেডিং কর্পোরেশন (টিসিবি) কর্তৃক ট্রাকে করে আজ থেকে ২৫ টাকা দামে প্রতি কেজি আলু বিক্রির খবর গণমাধ্যমে প্রচার হলেও মৌলভীবাজার শহরে টিসিবির অন্যান্য পণ্য বিক্রি হলেও সেখানে আলু পাওয়া যায়নি।

জানা যায়, দেশব্যাপী আলুর অতিরিক্ত দাম বৃদ্ধির ফলে মৌলভীবাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত দামে আলু ক্রয় করতে না পারায় অনেকটা লোকশানের আশঙ্কায় গত দু’দিন যাবত ব্যবসা বন্ধসহ আলু বিক্রি প্রায় বন্ধ রাখেন। এতে করে গত দু’দিনে এসব ব্যবসায়ীরা বেশ লোকশানের মুখে পড়েছেন। শহরে আলুর পাইকারী আড়ৎ হাসান বাণিজ্যালয় গিয়ে যায়, যেখানে প্রতিদিন ১৫হাজার কেজি আলু বিক্রি হতো সেখানে আড়ৎ ফাঁকা রেখে আড়ৎ এর ম্যানেজার ও স্টাফরা বেকার সময় কাটাচ্ছেন। ওই আড়ৎে সর্বশেষ যে পরিমাণ আলু মজুদ ছিল তা সকালেই শেষ হয়ে গেছে।

জানতে চাইলে হাসান বাণিজ্যালয়ের ম্যানেজার আবুল হোসেন বলেন, সরকার প্রতি কেজি আলুর দাম খুচরা পর্যায়ে ৩৫টাকা নির্ধারণ করে দিলেও আমরা তো সেই দামে পাচ্ছিনা। ওই বাণিজ্যালয়ে রাজশাহী,রংপুর,বগুরা ও মুন্সিগঞ্জ থেকে প্রতিদিন ট্রাক বোজাই করে আলু সর্বরাহ করা হলেও বর্তমানে সরকার নির্ধারিত দামে এসব আলু ক্রয় করা যাচ্ছেনা।

আবুল হোসেন বলেন, আমাদের আড়ৎে যে পরিমান আলু ছিলো সেগুলো খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে ৩৮টাকা দামে বিক্রি করতে হয়েছে, বর্তমানে সরকার দাম নির্ধারণ কওে দেয়ার কারনে ওই দামে আলু পাওয়া যাচ্ছেনা, ফলে আলু সর্বরাহ অনেকটা বন্ধ রাখতে হয়েছে।

মৌলভীবাজার শহরের পশ্চিম বাজারের প্রবেশ পথের আয়াৎ উল্লাহ মসজিদের সামনে দীর্ঘদিন যাবত খোলা বাজারে খুচরা দামে আলু বিক্রি করে আসছেন খুচরা ব্যবসায়ী লিঙ্কন আহমদ। তিনি মূলত শহরের আড়ৎ থেকে পাইকারী দামে আলু সংগ্রহ করে এখানে খুচরা দামে বিক্রি করেন, তবে আজ তার দোকানে গিয়ে দেখা যায় প্রতি দিন যে পরিমান আলু মজুদ থাকতো আজ আর তার উল্টো চিত্র। জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত দামে আলু পাওয়া যাচ্ছেনা তাই আলু বিক্রি বন্ধ রাখতে হয়েছে।

এদিকে ঢাকা, চট্রগ্রাম, খুলনা, পটোয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল, শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ দেশের অর্ধেকেরও বেশি জেলা গুলোতে আলু সর্বরাহ করে থাকে বগুরার সবচেয়ে বড় কোল্ডস্টোরেজ ও আলুর বৃহৎ আড়ৎ মেসার্স মাহি ট্রেডার্স। প্রতিদিন তাদের আড়ৎ থেকে দেশের নানা প্রান্থের আড়ৎ গুলোতে হাজার হাজার কেজি আলু সর্বরাহ করা হয়।

ওই আড়ৎের স্বত্তাধিকারী মো. ফটু মিয়ার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে এ প্রতিবেদককে তিনি জানান, কৃষকরা অতিরিক্ত লাভের আশায় আলু মজুদ করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করছেন,যে কারনে বাজারে আলুর সর্বরাহে ঘাটতি রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি জানান, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও আমরা যে আলু কৃষকের কাছ থেকে ৩৪ টাকা দামে সংগ্রহ করছি সে আলু বিভিন্ন খরচ শেষে বিক্রি করতে হয় ৩৭ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানান, সরকার নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি নিশ্চিতের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজার মনিটরিংয়ে মাঠে সক্রিয় আছেন। তিনি বলেন,সরকার নির্ধারিত দামে যাতে আলু বিক্রি হয় সে কারনে আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করবেন।

উল্লেখ্য: গত মঙ্গলবার (২০ অক্টোবর) রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষি বিপণন অধিদফতরে এক মতবিনিময় সভায় সরকার আলুর সর্বশেষ খুচরা ও পাইকারী এ দাম নির্ধারণ করা হয়। ওইদিন কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। মঙ্গলবার সভায় সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আলুর দাম কোল্ডস্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি ২৭ টাকা, পাইকারি পর্যায়ে কেজি ৩০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩৫ টাকা পুনর্র্নিধারণ করা হয়েছে। এই নির্ধারিত মূল্যে কোল্ডস্টোরেজ, পাইকারি এবং খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা যেন আলু বিক্রি করেন সেজন্য কঠোর মনিটরিং ও নজরদারির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সব জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেছে কৃষি বিপণন অধিদফতর।

(একে/এসপি/অক্টোবর ২১, ২০২০)