আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : রাখে আল্লাহ মারে কে? এসত্যটি আরেকবার প্রমানিত হল আগৈলঝাড়ায় ১২ঘন্টা মাটির নীচে চাপা দেয়া সদ্যজাত এক নবজাতকের জীবনে। দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে চাঞ্চল্যকর এঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৩ মহিলাকে আটক করেছে পুলিশ।

আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় শনিবার রাংতা গ্রামের শাহ আলম মোল্লার বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী মুকুলী বেগম ও বিবাহিতা মেয়ে নুরুননাহারের সাথে কথা বলে নবজাতক কন্যা শিশু ভুমিষ্ট ও হত্যার জন্য মাটি চাপা দেয়ার ঘটনার লোমহর্ষক কাহিনী জানতে পারেন। তাদের উদ্দৃতি দিয়ে তিনি আরও জানান, পরিচয় পাওয়া গেছে ওই শিশুর গর্ভধারিনী মায়ের।

উপজেলার রাংতা গ্রামের শাহ আলম মোল্লার মেয়ে নুরুননাহারের সাথে পাশ্ববর্তি মাদারীপুর জেলার কালকিনীর উপজেলার কাজী বাকাই ইউনিয়নের দক্ষিণ ভাউতলী গ্রামের আরজ আলীর সাথে বিয়ে হয়। আরজ আলী বর্তমানে নেপাল প্রবাসী। আরজ আলীর বড় ভাই ট্রাক চালক আবুল ঢালীর মেয়ে ও স্থানীয় মেদাকুল স্কুলের ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া মেয়ে মাহমুদা। গত রোজার সময় মাহমুদা তার বড় দুলাভাই রতন মিয়ার ময়মনসিংএর বাড়িতে বেড়াতে যায়। এসময় রতনের ছোট ভাই শামীম মাহমুদাকে ধর্ষন করে। ওই ধর্ষণের ফলে মাহমুদা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পরে। পরে সন্তানের পিতৃ পরিচয় দেয়ার জন্য মাহমুদা শামীমকে চাপ প্রয়োগ করলেও শামীম বিয়ে করতে অস্বিকার করায় লোক জানাজানির ভয়ে গত ১৭ এপ্রিল মাহমুদা তার মা মনোয়ারা বেগমকে সাথে নিয়ে সন্তান প্রসব করাতে রাংতা গ্রামে আত্মীয় শাহআলম মোল্লার বাড়িতে আসে। বৃহস্পতিবার রাতে শাহ আলমের বাড়িতে সাবেক সেনা সদস্য স্থানীয় আমহেদ হাওলাদারের স্ত্রী ফরিদা বেগম ও গৌরনদীর মৌরী ক্লিনিকের এক চিকিৎসক মাহমুদার অবৈধ সন্তান প্রসব করান। প্রসবের পরই নবজাতক মেয়ে শিশুকে রাংতা-চেঙ্গুটিয়া রাস্তার পার্শ্বে মোবাশ্বের বেপারীর গম ক্ষেতে জীবন্ত মাটি চাপা দেয় গর্ভধারিণী মা মাহমুদা ও তার মা মনোয়ারা বেগম। পরদিন গত শুক্রবার সকালে ন’টার দিকে মাহমুদা তার মাকে নিয়ে নাঠৈ গ্রামে দুলাভাই রুহুল বেপারীর বাড়ি যায়। সেখানে মাহমুদাকে রেখে নিজ বাড়িতে মেদাকুলে যান মনোয়ারা। পুলিশ শনিবার দুপুরে রাংতা গ্রাম থেকে শাহ আলম মোল্লার স্ত্রী মুকুলী বেগম, মেয়ে নুরুননাহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে। তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ি মাহমুদার মা মনোয়ারা বেগমকে নিজ বাড়ি ভাউতলী থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। সন্ধ্যায় শিশুটির গর্ভধারিণী মা মাহমুদাকে নাঠৈ থেকে আটক করেছে পুলিশ। এঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
প্রসংগত, বরিশালের আগৈলঝাড়ায় উপজেলার রাংতা-চেঙ্গুটিয়া রাস্তার পার্শ্বে মোবাশ্বের বেপারীর গম ক্ষেতের পাশ দিয়ে জমিতে যাওয়ার সময় রাংতা গ্রামের আনোয়ার হোসেন ফকির নবজাতকের কান্না শুনে এগিয়ে গিয়ে গলা পর্যন্ত মাটি চাপা দেয়া অবস্থায় এক দিনের নবজাতক মেয়ে শিশুকে উদ্ধার করেন। হাসপাতালে চিকিৎসায় সুস্থতার পর তার ঠাই হয়েছে বরিশাল বিভাগীয় বেবী হোম গৈলায়।


(টিবি/এএস/এপ্রিল ১৯, ২০১৪)