রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি মেম্বর মফিজুল ইসলামের বিরুদ্ধে বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা ও প্রতিবন্ধীভাতার অর্থ আত্মসাৎসহ ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। সরকারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি (১০ টাকা কেজি চাল)-এর কার্ড গরীবের মধ্যে বিতরণ না করে এলাকায় নিজস্ব লোক ও বিত্তশালী ব্যক্তিদের দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। মসজিদের অনুদানের টাকা আত্মসাৎ ও স্বামী-স্ত্রী তালাকের টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে মফিজের বিরুদ্ধে।

সরেজমিনে রোববার দুপুরে ঝাউডাঙা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ছাতিয়ানতলা, দত্তবাগ, যোগরাজপুর ও দেবনগরে গেলে ৭৫ বছর বয়সী মৃতপথযাত্রী মৃত পাচু সরদারের ছেলে মোঃ বাবর আলী সরদার এ প্রতিবেদককে জানান, তার প্রতিবন্ধী ভাতার ৯ হাজার টাকার মধ্যে মেম্বর মফিজ তার নিজের লোক শফি মোড়লের মাধ্যমে দিয়েছে সাড়ে চার হাজার টাকা। যোগরাজপুর গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী খোদেজা বেগম, আসাদুর রহমানের স্ত্রী ফিরোজা বেগম বলেন , তাদের প্রত্যেককে বিধবা ভাতার ছয় হাজার টাকা থেকে মফিজ মেম্বর ঘুষ বাবৎ কেটে নিয়েছেন তিন হাজার করে টাকা।

যোগরাজপুর গ্রামের ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ নুর আলী গাজী জানান, বয়স্ক ভাতার জন্য তিনি দীর্ঘূদিন ধরে মফিজের কাছে ধন্যা ধরেছেন। ঘুষ দিতে না পারায় কার্ড হয়নি।

খাদ্য বান্ধব কর্মসূচি (১০ টাকা কেজি চাউল) সরকারের নীতিমালা মোতাবেক গরীব খেটে খাওয়া পরিবারের মধ্যে বিলি না করে বিধিবহির্ভুতভাবে এলাকার বিত্তশালীব মৃত লোকমান হাজরার স্ত্রী জোহরা বেগমকে প্রতিবন্ধী কার্ড ও তার মেয়ে বিলু (হিজড়া) কে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড দেওয়া হয়েছে । একই গ্রামের আফসার আলীর ছেলে ইনসাফ আলীকে অনুরূপ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড দেওয়া হয়েছে। এরা ১০টাকা কেজিতে চাউল উত্তোলন করে গরুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করে বলে এলাকাবাসী জানায়। মৃত শহর আলী ছেলে মোসলেম আলী, মৃত আহম্মেদ আলীর ছেলে আব্দুল গফুর প্রকৃত প্রতিবন্ধী না হয়েও তাদেরকে প্রতিবন্ধী কার্ড দিয়ে মফিজ মেম্বর অর্ধেক টাকা আত্মসাৎ করে বলে অভিযোগ।

যোগরাজপুর গ্রামের মৃত লোকমান হাজরার ছেলে আলতাফ হোসেন জানান, তাদের পূর্বপাড়া জামে মসজিদে মরহুম এমপি আব্দুর জব্বার সাহেব এক লাখ টাকা অনুদান দেয়। ২০১৩ সালে ৩০ জুন, মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষর জাল করে মফিজুল মেম্বর অনুদানের এক লাখ টাকা আত্মসাৎ করার বিষয়টি প্রকাশ হলে স্থানীয় মুসল্লিদের চাপে মেম্বর সমুদয় টাকা ফেরত দিতে বাধ্য হয়। যোগরাজপুর গ্রামের আব্দুল কাদের জনসম্মুখে বলেন আমার মেয়ে মিরা খাতুনের সাথে তালা উপজেলার জেয়ালার মেহের আলীর ছেলে জহুরুলের বিয়ে হয়েছিল। স্বামী-স্ত্রীর বনীবনা না হওয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। স্থানীয় মেম্বর মফিজুলের উপস্থিতিতে শালিস বিচার হয়। মেম্বর মফিজুল, জহুরুলের কাছ থেকে এক লাখ ১৫ হাজার টাকা নিয়ে তাকে ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাকী ৫৫ হাজার টাকা মেম্বর আত্মসাৎ করেছে।( ভিডিও ফুটেজ আছে)।

যোগরাজপুর ইউয়িনের ৯নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম রাশিদুল ইসলাম ও স্থানীয় ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান জানান মেম্বর মফিজুলের দুর্নীতির শেষ নেই। এলাকার প্রত্যেক কাজে তার দুর্নীতি, স্বজন প্রতির কারণে এলাকার গরীব, অসহায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। প্রতিবন্ধীভাতা, বয়স্ক ও বিধবাভাতার টাকা অর্ধেক করে দিয়ে অবশিষ্ট টাকা আত্মসাৎ করেছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড অনিয়মের সাথে বিতরণ করেছে। ভূক্তভোগীদের কার্ড বাতিল করার হুমকি দিয়ে প্রতিবাদ করতে দেয় না মেম্বর।

সরকারি সোলার লাইট দেওয়ার নাম করে সাধারণ মানুষ, মসজিদ ও মন্দির কমিটির কাছ থেকে ২০১৯ সালে মফিজ কয়েক লাখ টাকা লুটে নিয়েছেন। গত ইউপি নির্বাচনে দেবনগরে কয়েকটি পরিবারের গ্র“প ভোট নেওয়ার জন্য টাকা দিয়ে ভোটে জেতার পর তাদের মারপিট করে সেই টাকা আদায় করে নিয়েছে মেম্বর। দু’বার মেম্বর থাকার সুবাদে সামনে আখের ব্যবসা দেখিয়ে জনগনের টাকা আত্মসাৎ করে মফিজ যোগরাজপুর, লাবসা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় কোটি টাকার জমি কিনেছেন। এক মহিলা ইউপি সদস্যকে বিধবা ভাতার একটি কার্ড তার স্বজনদের নামে করিয়ে দিয়ে বিপদে ফেলেন মফিজুল। পরে তার কথামত সবকাজ করলে তাকে সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন মফিজুল। তিনি যতই অপরাধ করুন না কেন ভোটের আগে টাকা দিলে মানুষ অপমান ভুলে যেয়ে তাকে আবারো নির্বাচিত করবে এমন হুঙ্কার ছেড়ে দিয়ে মফিজ বলেন, সেটা নির্বাচন এলেই দেখতে পারেন। দুদক কেন কোন দপ্তরে অভিযোগ করে লাভ হবে না।

এলাকাবাসী মেম্বর মফিজুলের দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতির বিচার দাবি করেছেন প্রসাশনের কাছে।

এ ব্যাপারে মেম্বর মফিজুল ইসলামের সাথে মোবাইল যোগাযোগ করলে তিনি বলেন সামনে নির্বাচন সে কারণে প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। তিনি নিয়ম বহির্ভুতভাবে কোন টাকা নেননি বলে দাবি করেন।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২৬, ২০২০)