রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের  ইউপি মেম্বর ও জাতীয় পার্টির নেতা মফিজুল ইসলামের দালাল বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নাম করে নেওয়া ঘুষের টাকা ফেরৎ চাওয়ায় সোমবার সকালে বাবা ও ছেলেকে পিটিয়েছে তারা। এমনকি  মফিজ বাহিনীর অত্যাচারে বার বার নির্যাতিত সাধারণ মানুষ বিচার চেয়েও পায়নি।

ছাতিয়ানতলা গ্রামের রুপালী খাতুন জানান, বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ করিয়ে দেওয়ার নাম করে ইউপি সদস্য মফিজুল ইসলামের নাম করে চৌকিদার মাহবুবর রহমান তার শ্বাশুড়ি রহিমা খাতুনের কাছ থেকে দু’ বছর আগে ছয় হাজারজ টাকা দাবি করে তিন হাজার টাকা নেয়। সংযোগ দেওয়ার সময় বকেয়া টাকা দেওয়ার কথা ছিল। দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ সংযোগ না পাওয়ায় সোমবার সকাল সাড়ে সাতটার দিকে গ্রামের ফুলতলা মোড়ে চৌকিদার মাহবুবর রহমানের কাছে টাকা ফেরৎ চান তার স্বামী রবিউল ইসলাম। এ সময় চৌকিদার মোবাইল ফোনে মেম্বর মফিজের সাথে কথা বলেন। কথা শেষ করেই মেম্বরের নির্দেশনা অনুযায়ি রবিউলকে এলাপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করে চৌকিদার। রবিউলকে রক্ষায় তার বাবা এগিয়ে এলে সেখানে উপস্থিত হওয়া মেম্বরের দালাল একই গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে আলম, উত্তর দেবনগরের কওছারের ছেলে কবীর হোসেন তাকেও পিটিয়ে জখম করে।

দত্তবাগের নিতাই চন্দ্র দাস ও ছাতিয়ানতলার কার্তিক চন্দ্র দাস বলেন, ছাতিয়ানতলা গ্রামের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে গোপীনাথপুর গ্রামের জগদীশ গোস্বামী হত্যা মামলার আসামী রবিউল ইসলাম, রফিকুল ইসলামসহ তাদের ভাইর শফিকুল ইসলাম ও রবিউলের ছেলে আমিরুল ইসলাম এলাকায় দিনের পর দিনহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে মেম্বর মফিজুলের আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে। সাবেক সেনা সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ হাজরার স্ত্রী স্বর্ণলতা হাজরা, ছেলে মহিতোষ, পরিতোষসহ দু’ মেয়ে ওই পরিবারের হাতে স্বাধীনতার পর থেকে নির্যাতিত। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে জমি দখল করে রাখলেও মামলায় জমি ফিরে পান স্বর্ণলতা। এরপরও জমির অর্ধেকাংশ দখলে রাখায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দ ২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে ওই জমি মাপ জরিপ করে তারের বেড়া ও সীমানা পিলার নির্মাণ করতে চাইলে ইয়াকুব আলীর ছেলেদের পক্ষ নিয়ে ঘেরা দিতে প্রবল আপত্তি জানান। ঘেরা দেওয়ার পর নিতাই দাসসহ মাপজরিপে অংশ নেওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করে রবিউল। এর কয়েকদিনের মধ্যে রবিউল ও তার পরিবারের সদস্যরা সীমানা পিলার ও কাটা তারের বেড়া তুলে দিয়েছে মেম্বরের পরামর্শে।

জোর পূর্বক পুকুরের পাড় কেটে দিয়ে পানি বের করে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় গত ১০ সেপ্টেম্বর সকালে মহিতোষ হাজরাকে পিটিয়ে জখম করে রবিউল, রফিকুল, শফিকুল ও রবিউলের ছেলে আমিরুল। পরে মহিতোষকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করলে মেম্বব মফিজুল ১৪ সেপ্টেম্বর বিকেলে ফুলতলা মোড়ে এক শালিসি সভা ডাকেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দসহ দু’ শতাধিক লোক হাজির হলেও মফিজের পরামর্শ মত রবিউল ও তার ভাইয়েরা শালিসে থাকেননি। পরবর্তীতে ১০ অক্টোবর আবারো শালিস ডাকা হলেও একদিন আগে তারা শালিসে বসবে না বলে জানিয়ে দেয়। এ নিয়ে শালিসনামা করার কথা বলা হলে মফিজ কয়েকদিন ঘুরিয়ে চেয়ারম্যান আজমল হোসেনের কথামত শালিস করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন।

তারা আরো জানান, গত ৫ বছরে রবিউল ও তার দু’ ভাই ও রবিউলের ছেলে আমিরুলের হাতে জ্ঞানেন্দ্র নাথ দাসের ছেলে আনন্দ দাস, হরিপদ দাসের ছেলে রঞ্জন দাস, জনাব আলীর ছেলে শফিকুল ইসলাম, তফিলউদ্দিনের ছেলে গোলাম হোসেন, আব্দুল বারির ছেলে হাফিজুল ইসলাম, কওছার আলীর ছেলে ফিরোজ হোসেন, দিদার বক্সের মেয়ে মরিয়ম, ইয়াকুব আলীর ছেলে বজলু, ফতেমা ও দেবনগরের টক পাগলের ছেলে বাসুদেবসহ কয়েকজন নির্যাতিত হয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। মেম্বর মফিজুল শালিস করার নাম করে কালক্ষেপন করে নির্যাতিতদের হেঁকে দিয়েছেন।

এসব ক্ষেত্রে তিনি তার বাহিনীর সদস্য চৌকিদার মাহববুর রহমান, আব্দুল মালেকের ছেলে আলমগীর হোসেন, ইয়ার আলীর ছেলে আব্দুল মজিদ, আব্দুল ওহাবের ছেলে কবীর হোসেন, উত্তর দেবনগরের কওছারের ছেলে কবীর গাজী ও চকের বিলের আব্দুল জলিলের ছেলে আলতাফকে ব্যবহার করেছেন। ৪০ দিনের কর্মসুচির আওতায় প্রতিদিন অর্ধেকের কম লোককে কাজ করিয়ে ভূযযা মাষ্টাররোল বানিয়ে টাকা লুটপাটের প্রতিবাদ করায় রাজ্জাক, জালাল, কামালসহ কমপক্ষে একডজন যুবক মফিজ মেম্বর ও তার বাহিনীর সদস্যদের হাাতে লাঞ্ছিত হয়েছেন।

দেবনগরের সন্ত্রাসী মধুকে মেম্বর মফিজুলের কথামত রবিউল ও তার ভাইয়েরা শেল্টার দেওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পেতো না। যদিও ২০১৫ সালে রবিউলের বাড়িতে অভিযান চালালে পালিয়ে যাওয়ার সময় ছাতিয়ানতলা পুজা মণ্ডপের নিকটে পুলিশ মধুকে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ মধুকে পুলিশ হাসপতালে ভর্তি করে পরে জেলে পাঠায়।

এ ব্যাপারে মেম্বর মফিজুল ইসলামের সাথে মোবাইল যোগাযোগ করলে তিনি বলেন সামনে নির্বাচন সে কারণে প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২৭, ২০২০)