রণেশ মৈত্র


বহুদিন পর বাংলার ছাত্র সমাজকে সংবাদপত্র অভিনন্দন জানানোর সুযোগ পেলাম। না পেরে দীর্ঘকাল বিষন্নতায় ভুগেছি। ব্রিটিশ আমলের কথা বলতে পারবো না। কিন্তু পাকিস্তান আমলের গোটা তেইশটি অন্ধকার বছরের তো প্রত্যক্ষদর্মী বটে। রাষ।ট্রটির সৃষ্টি হয়েছিল ধর্মের নামে। তাই ইসলামের স্বার্থ ও অন্যান্য শুভ দিক (কি কি আছে জানি না) সমাজে ও রাষ্ট্রে চালু থাকবে এমনটাই তো প্রত্যাশা ছিল তখনকার পাকিস্তানী নাগরিকদের। বিশেষ একটি ধর্মের নামে রাষ্ট্রটির অভ্যূদয় কোটি কোটি হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টানকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করে। ঐ ২৩টি বছরে সকল ধর্মের নারীই ছিলেন নিযর্য্যাতনের শিকার-শিকার অমুসলিমরা নারী-পুরুষ নির্বিশেষে।

প্রতিকার পাওয়া না গেলেও প্রতিরোধ গড়ে তোলা হচ্ছিল পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকেই। কঠিন ছিল প্রতিরোধ গড়ে তোলা-তবু দমে নি সেদিনের তরুণ সমাজ। অচলায়তন ভাঙ্গার কাজটি ১৯৪৮ এর মার্চ থেকেই। এই সুকঠিন কাজটির উদ্বোধক ছিলেন অকুতোভয় যোদ্ধা ধীরেন্দ নাথ দত্ত। তিনি পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। করাচীতে আসুত জাতীয় পরিষদ অধিবেশনে তিনি যোগ দিয়ে অসীম সাহসিকতা নিয়ে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মর্য্যাদা দায়ের আহ্বান জানানা। তাঁর কথা ছিল দুটি এ প্রসঙ্গে।

প্রথমত: পাকিস্তানের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মাতৃভাষা মুখের ভাষা হলো বাংলা সে কারণে পেতে অধিকারী বাংলা ভাষা।

দ্বিতীয়ত: পাকিস্তানেরপ্রচলিত ভাষাগুলির মধ্যে বাংলাই হলো সর্বাধিক খ্যাতিসম্পন্ন, সমৃদ্ধ এবং সারা বিশ্বে তা স্বীকৃত। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত, জীবনানন্দ দাস থেকে শুরু করে অসংখ্য বাঙালি কবিক, সাহিত্যিকের লেখনীর ভাষাও বাংলা। তাই এ ভাষাকে উপেক্ষা না করে এই অধিবেশনেই বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ।ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া তোক।

সরকার পক্ষ সাথে প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে। ধীরেন দত্তকে কটুক্তি করতে সকল কুৎসিত শব্দ প্রয়োগে দ্বিধান্বিতও হন নি তাঁরা কেউ। প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান থেকে শুরু করে মুসলিম লীগের সকল নেতা, মন্ত্রী ও সাংসদ তাঁকে একের পর ভারতের দালাল, পাকিস্তানের দুশমন এবং বাংলাকে হিন্দুর ভাষা, ভারতের ভাষা, ইসলাম-বিরোধী ভাষায় আখ্যায়িত করে ধীরেন দত্ত ও তাঁর প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করতে থাকে। অধিবেশনটি শেষ হতেই তিনি ফিরে এলেন ঢাকায় বিমানযোগে। ব্যাপক সম্বর্ধনা পেলেন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজের কাছে। এভাবেই প্রতিরোধের উদ্বোধন ঘটান ধীরেন দত্ত।

অত:পরে ১৯৪৮ এর মার্চে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবীতে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতির দাবীতে পথে নামলো দেশের যুব সমাজ। শুরু হলো জনতার প্রতিরোধ-প্রতিরোধ শুধু বাংলা ভাষার উপরে আঘাতকেই নয়-তা শুরু হলো দ্বিজাতিতত্ত্বের বিরুদ্ধেও। তৎক্ষণাৎ তা বিষ্ফোরণ ঘটাতে না পারলেও যে আগুণ জ্বালিয়েছিলেন ধীরেন দত্ত ছড়িয়ে দিয়েছিলেন দেশের ছাত্র যুব সমাজ সে আগুন ৪৮ এ প্রশমিত না হয়ে তা ধিকি ধিকি তুষের আগুনের মত জ্বলতে থাকলো তিন চারটি বছর ধরে।

অবশেষে বিষ্ফোরণ ঘটেই গেলো বাহান্নর একুশে ফেব্রুয়ারিতে। সেদিন ঢাকার পীচঢালা রাজপথ তরুণদের রক্থে লাল হয়ে গিয়েছিল দেশ জোড়া ১৪৪ ধারা নিষেধাজ্ঞা জারী করেছিল জনতার ভয়ে ভীত সন্ত্রাস শংকিত মুসলিম লীগের শাসকগোষ্ঠী। কিন্তু তাতে দমে নি আন্দোলন দমে নি ছাত্র যুব সমাজ। বরং তারা তা ছড়িয়ে দিয়েছে সমগ্র প্রদেশ জুড়ে-রাজধানী থেকে বিভাগে, বিভাগ থেকে জেলায়, জেলা থেকে মহকুমায়, মহকুমা থেকে থানায়-থানায়। ছড়িয়ে দিলো ব্যাপক জনতার মধ্যে।

আঘাত হানা হলো সকল প্রকার অন্ধত্বের বিরুদ্ধে, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে-নারী পুরুষের মধ্যে যুগ যুগ ধরে চলমান বৈষম্য-বিভাজনের বিরুদ্ধে। সে লাড়াই এগিয়েছে-ভাষার দাবীকে সামনে নিয়ে মেয়েরাও নেমেছেন রাজপথে-গৃহিনীরা দিয়েছেন আন্দোলনকারীদের হাতে নিজের গায়ের গহনা খুলে আন্দোলনের লিফলেট-পোষ্টার ছেপে সমগ্র প্রদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে।

বিস্ময় মানি আজও। অবকুণ্ঠনের আবরণ খুলে রাস্তায় নেমে যখন শ্লোগান দিয়েছে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মাতৃভাষার মর্য্যাদা আদায়ের মিছিলে, নাচে-গানে-নাটকে-আলাপনায় নারী শুরু করলো তার দৃপ্ত পদচারণা আজ ৮৮ বছর বয়সে এসেও তা এক বিস্ময়।

পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্র লীগ ঐ আন্দোলন গড়ে তুলেছিলো ১৯৪৮ সাল থেকে বাহান্ন পর্য্যন্ত। বাহান্নর শেষে গড়ে উঠলো পাকিস্তানের প্রথম অসাম্প্রদায়িক ছাত্র সংগঠন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন একটি আধুনিক, প্রগতিশীল ভাবধারাকে অগ্রসর করে নেওয়ার লক্ষ্যে।

যুগের প্রয়োজন মেটাতে স্বেচ্ছায় সে দাবী ঊর্ধে তুলেছিলো ছাত্র ইউনিয়ন এবং ১৯৪৮ এ গঠিত দেশের প্রতম অসাম্প্রদায়িক যুব সংগঠন গণতান্ত্রিক যুবলীগ যার দানও ভাষা আন্দোলনে অবিস্মরণীয়।

অগ্রজ গণতান্ত্রিক যুবীগের আদর্শ ও লক্ষ্য বুকে ধারণ করে ছাত্র ইউনিয়ন আরও ব্যাপ্তি অর্জন করলো ৫২-৫৩ তে। তার প্রধানতম নীতি অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষতা দ্রুতই জনপ্রিয় হতে শুরু করলো পাকিস্তানের সাম্প্রদায়িক আদর্শকে ঘৃণাভরে পরিত্যাগ করে।

দেশে সাম্প্রদায়িকতার যে জোয়ার তোলা হয়েছিল ১৯৪০ থেকে পাকিস্তান প্রস্তাবের মাধ্যমে-১৯৪৬ এর নির্বাচনে তা দৃঢ় আসন পেতেছিল এ অঞ্চলের মুসলিম মানসে-সেই মানস ও মননে আঘাত করে-তাকে পরাচিজ করেই তো অগ্রসর করে নিল গণতান্ত্রিক যুবলীগ ও ছাত্র ইউনিয়ন।

সেই পাকিস্তান আমরা যারা ছাত্র ইউনিয়ন, যুবলীগ করতাম-বারংবার নি:সংকোচে দাবী করতে পারি আমরাই সমাজ মানসকে যথেষ্ট পরিমাণে পাল্টে দিতে পেরেছিলাম-পেরে ছিলাম নারীর প্রতি সমাজের, বিশেষ করে তরুণ ও যুব সমাজের, দীর্ঘদিন যাবত লালিত পম্চাতৎপদ দৃষ্টিভগীকে পাল্টিয়ে নারীর প্রতি সম্মানজনক দৃষ্টিভংগী বহুলাংশে গড়ে তুলতে। অভিভাবকদের দৃষ্টিভংগীকেও উদার ও আধুনিক করে গড়ে তুলতে। যারা ধর্মের নামে নারীকে অর্গলাব্ধ করে রেখেছিল তাদের মুকোশ খুলে তাদেরকে বহুলাংশে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে।
ফলে কি হয়েছিল?

এক.বাঙালী জাতীয়তাবাদী চেতনা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে এক গুরুত্বর্পূণ অবদান রাখা সম্ভব হয়েছিল।

দুই. নারী সমাজ ঘরের কোণে নিজেদেরকে আব্ধ না রেখে স্কুল-কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণে যেতে সুরু করলো;

তিন. স্কুল-কলেজগুলোর আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলিতে ছেলেদের সাথে অকপটে অংশগ্রহণ করতে শরু করলো কোন প্রকার আবরণ দিয়ে মুখ, চোখ, দেহ আবৃত না করেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে যাতায়াত সুরু করলো, গান, নাচ, আবৃত্তি ও নাটকে অংশগ্রহণ করতে সুরু করলো।

চার.ধীরে ধীরে লেখাপড়া শেখার পর কিছু কিছু করে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষকতা করতে, হাসপাতালগুলিতে নারী পুরষ নির্বিশেষে রোগীকে শুশ্রুষা করতে নার্সিং শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে আসতে শুরু করলেন;

পাঁচ. আরও বিছুদিন পর দেখা গেল শিক্ষিত নারীরা ব্যাংক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজগুলিতে দু’একজন, দু’একজন করে শিক্ষকতায় ঢুকলেন।

ছয়. ছাত্র সংগঠনের সক্রিয় কর্মী ও নেতা হয়ে তাঁরা তাঁদের ছেলে সহকর্মীদের সাথে আন্দোলনে, মিছিলে অংশ গ্রহণ করতে, ছাত্র সংসদগুলিতে ভি.পি. জিএস সহ নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়ে সুষ্ঠু নেতৃত্ব দিতেও এগিয়ে এলেন।

সাত. ধীরে ধীরে, একে একে নারীর সমতা প্রতিষ্ঠা, নারীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্যের অবসান ঘটাতে, পুরুসের সাথে মা-বাবার সম্পত্তিতে উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে সমবন্টন প্রথা প্রবর্তনের দাবীতে নারী সংগঠনগুলো গড়ে উঠতে থাকলো বেগম রোকেয়ার আদর্শ ও খালা আম্মা চিরস্মরণীয় বেগম সুফিয়া কামালের নেতৃত্বে গড়ে উঠলো বাংরাদেশ মহিলা পরিষদ, গড়ে উঠলো একই দাবীতে একের পর এক এন.জিও।

আট. এঁদের সম্মিলিত বা যৌথ আন্দোলন সংগ্রামের পরিণতিতে আজ মেয়েরা বিভিন্ন স্তরের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে পুরষ প্রার্থীদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ক্ষেত্র বিশেষে বিজয়ীও হচ্ছেন। এখন তাঁরা দাবী করছেন নারীর জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা ৫০ নয়-তা ১৫০ শতে উন্নীত করে সরাসরি সকলের ভোটে নির্বাচনের নীতি গ্রহণ করা হোক;

নয়. এই আন্দোলনের ক্রম-বিকাশের ফলে আজ নারী আইনজীবী সর্বত্র বিপুল সংখ্যায় আইন পেশায় নিয়োজিত হয়েছেন, জজকোর্ট, হাই কোর্ট, সুপ্রিম কোর্টে বিচারক হিসেবেও নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে নিয়োগ পাচ্ছেন-মন্ত্রীত্ব করছেন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হচ্ছেন, চিকিৎসক, ব্যবসা উদ্যোক্তা প্রভৃতি হতে পারছেন।

নিশ্চিন্তে দাবী করা যায়, এই ধারা ক্রম-বিকশিত হয়েছে এবং হতে পারছে বলেই একাত্তরে দেশের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করতে এগিয়ে এসেছিলেন তাঁদের পুরুষ সহযোদ্ধাদের সাথে।

দশ. জেলায় জেলায় নারী ছাত্র নেতারা তঁঅদের পুরুষ সহকর্মীদের সাথে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে ট্রেনে, বাসে, ষ্টীমারে দিনে রাতে পথ চলেছেন। কিন্তু কোথাও কোন নারী নেত্রী তাঁর পুরুষ সহকর্মী দ্বারা ধর্ষিত হওয়া দূরে থাক-খারাপ চোখে কেউ কারও দিকে তাকানও নি। সে যুগে এজাতীয় একটি অভিযোগও পাওয়া যায় নি।

সেই নারী-পুরুষের সমমর্য্যাদার দৃস্টিভংগী, পরস্পর পরস্পরের প্রতি সমমর্য্যাদাশীল আচরণের দিনগুলি আজ কোথায় হারিয়ে গেল-এই ৮৮ বছর বয়সে তা ভেবে বিস্মিত হই।

দেশের বাম প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী উদার গণতন্ত্রী সবাই আমরা কখনও সম্মিলিতভাবে কখনও বা পৃথকভাবে লড়াই করেই ঐ সফলতা আনতে সক্ষম হয়েছিলাম-পেরেছিলাম সমাজ-মানসে একটা সুসভ্য ও পারস্পারিক মর্য্যাদাবোধ জাগ্রত করতে। এবার সুরু বাহান্নর ভাষা আন্দোলন থেকে এবং ধীরে ধীরে তা বিকশিত হতে হতে ঐ পর্য্যায়ে পৌঁছাতে পেরেছিলাম।

কিন্তু হঠাৎ ছেদ পড়লো পনেরই আগষ্টের মর্মান্তিক হত্যালীলার পর থেকেই। ধর্মের নামে ভ-ামীর পুনরুত্থাপন সেই তখন থেকেই।

তখন থেকেই নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকল নাগরিকের সম-অধিকার অস্বীকৃত হওয়ার সুরু হতে থাকে। কষ্টার্জিত বাংলাদেশের রাজনীতির গতিমুখ পরাজিত পাকিস্তানের দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার সুরু। আজ এই দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তা যেন ফুলে ফলে বিকশিত হয়ে সমাজের পিঠ দেওয়ালে ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছে। নারী অপহরণ, নারী নির্য্যাতন নারী ধর্ষন, নারীকে দিবারাত্র গৃহে অবরুদ্ধ করে রাখার উদ্যোগ সেই যে শুরু হলো তা আর আসছেই না। আইন ক্রমশ অনেক বাড়ানো হয়েছে এবং ব্যাপক জনদাবীর প্রেক্ষিতে সর্বোচ্চ মৃত্যু দ-ের বিধানও সম্প্রতি করা হয়েছে। কিন্তু তাতেও আকাংখিত ফলোদয় হয়েছে কি? হয়নি একেবারেই হয় নি। ঐ আইন অধ্যাদেশ হিসেবে পাশের পর থেকে এযাবতকালে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকাগুলিতে প্রকাশিত খবরগুলি স্পষ্টত:ই তা প্রমাণ করে।

কিন্তু আটচল্লিশ থেকে পঁচাত্তরের ১৪ আগষ্ট পর্য্যন্ত তো ধর্ষণে ফাঁসির বিধান ছিল না-যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধানও ছিল না-বোরকা-হিজারের এত ব্যাপক প্রচলনও ছির না তবুও তখনকার পরিবেশ এই ঘৃণ্য অপরাধগুলি থেকে মুক্ত থাকতে পারলো কিভাবে?

প্রশ্নটি যত কঠিন বলেই মনে হোক, আমার চাক্ষুষ অভিজ্ঞতায়ই বলি, সমাজ-মানস সেইভাবে গড়ে তোলা গিয়েছিল সচেতন প্রচেষ্টার মাধ্যমে-সে কারণেই সম্ভব হয়েছিল।

আজ আমরা নারী বিদ্বেষী প্রচারণা মসজিদে অবাধে চলতে দেখি, হেফাজতের নারী বিরোধী প্রচারণা বাধাহীনভাবে চলতে দিই, নারী-নীতি, শিক্ষানীতির প্রতিক্রিয়া মুখী পরিবর্তনকামীদের সাথে সখ্য গড়ে তুলি ফলে সমাজের এই কুৎসিত চেহারা দেখতে হচ্ছে।

অভিবাদন জানাই আজ আবার ঐ একই ধরণের দায়ীত্ববোধে উদ্দীপ্ত হয়ে বাম ধারার ছাত্র এবং সংগঠনগুলি পদযাত্রা সমাজের (সীমিত হলেও) করোনার দুর্য্যােগকে তোয়াক্কা না করে স্থানে স্থানে পদ যাত্রা ও সমাবেশের আয়োজন করায়। এই ধারায় যদি ছেদ না পড়ে, যদি তার ধারাবাহিকতা দৃড়তার সাথে বজায় রাখা হয়। ইস্যুর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি করে ধীরে ধীরে সমাজবদলের দাবীকে জনপ্রিয় করে তোলা যায়-আজ হোক, কাল হোক সাফল্য অনিবার্য্য।

গৌরবোজ্জ্বল অতীত সেই শিক্ষাই দেয়। শিক্ষা দেয়, ক্ষুদ্র-বৃহৎ আন্দোলনের মাধ্যমেই সংগঠনগুলি পুষ্ট হয়-ধীরে, ধীরে বড় হয়-তবে সংকীর্ণতা অবশ্যই পরিত্যজ্য। পুনরায় অভিনন্দন প্রগতিমুখী ছাত্র সমাজকে।

লেখক : সভাপতি মন্ডলীর সদস্য, ঐক্য ন্যাপ।