রাণীশংকৈল প্রতিনিধি : ঠাকুরগাঁও রাণীশংকৈল উপজেলার উৎপাদনকৃত বিভিন্ন সবজি যাচ্ছে ঢাকাসহ সারাদেশে। খরিপ-১ মৌসুমে লাগাতার ভাড়ী বর্ষণে সবজি’র আবাদে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয় স্থানীয় কৃষকরা। তবে এবার সে ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে নিজ উপজেলার চাহিদা পুরণ করে। জেলার বাইরে সহ রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশ জেলায় ফাড়িয়াদের মাধ্যমে সবজি দিচ্ছে কৃষকরা। কৃষকরা জানিয়েছে, গেলবারের তুলনায় এবারে সবজির দামও ভাল পাচ্ছে তারা। সবজির দাম বেশি পেয়ে খুশি প্রান্তিক কৃষকরা।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানিয়েছে, রবি মৌসুমে এবারে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ও ১টি পৌরসভায় চিকন ও মোটা করলা ২০ হেক্টর, ফুলকপি ৪১০ হেক্টর, বেগুন ২২০ হেক্টর ,এবং মুলা ৮৫হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। কৃষি অফিস আরো জানিয়েছে, সমগ্রহ উপজেলার পাশাপাশি হোসেনগাঁও ইউপির রাউতনগর ,উজদাড়ী ও নন্দুয়ার ইউনিয়নের সন্ধারই(সাতঘরিয়া) এলাকায় করলা, বাচোর ইউনিয়নের বাংলাগড় এলাকায় মুলা ধর্মগড় দিহট এলাকায় ফুলকপি নেকমরদ ভবানন্দপুর এলাকায় বেগুনের ব্যাপক চাষাবাদ হয়। এছাড়াও পটল টেড়শ কচুরও ব্যাপক চাষ হয়েছে এসব এলাকায়।

সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় ধমগর্ড় মন্ডলপাড়া গ্রামের ফুলকপি চাষী মুঞ্জুর আলমের সাথে তিনি জানান, এবারে ১ বিঘা জমি চাষে আমার খরচ হয়েছে সব মিলে ১৫ হাজার টাকা। এতে আমি প্রায় লাখ টাকার ফুলকপি বিক্রি করতে পারবো। গেলবারের তুলনায় এবারে সবজির দাম ভাল থাকায়, গতবারের লোকসানও এবারে পুষিয়ে নেওয়ার আশাব্যক্ত করে বলেন, যেমন গত বুধবার একজন আড়তদারকে জমি থেকেই দুই হাজার তিনশত টাকা মণে ৬মণ ফুলকপি দিয়েছি। এতে জমিতেই ফুলকপি দিয়ে এক সাথে ১৩ হাজার ৮শত টাকা নগদ বুঝে পেয়েছি।

একইভাবে উপজেলার ভবানীপুর রাউতনগর রাতোর এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন,তারাও এবারে সবজির বাম্পার ফলন পেয়েছেন,এবং চড়া দামে বিক্রিও করতে পারছেন,দাম বেশি পেয়ে তারা চরম খুশিতে রয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন।

সম্প্রতি পৌর শহরের উপজেলা পরিষদ সীমান প্রাচী ঘেষাঁ মোস্তফা কামালের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, দুইটি ট্রাক দাড়িয়ে রয়েছে। তার পাশেই বিভিন্ন সবজির বস্তা ও করলার ক্রেট ট্রাকে উঠানোর জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এতে কিছু কুলি শ্রমিক মাথায় বস্তা নিয়ে ট্রাকে তুলছে কেউ আবার করলার ক্রেট তুলছে।

এ নিয়ে কথা হয় আড়ৎদার মোস্তাফা কামালের সাথে তিনি জানান, তিনটি ট্রাকে প্রতিদিন এ উপজেলায় উৎপাদনকৃত বিভিন্ন সবজি তিনি রাজধানী ঢাকাসহ টাঙ্গাইলের মধুপুর পারেকড় বাজার ঘাটাইল হামিদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করছেন। উল্লেখিত এলাকাগুলোয় বর্তমানে বেগুন করলা মুলা ও ফুলকপির চাহিদা থাকায় তিনি প্রতিদিন এ সবজিগুলো তিনটি ট্রাক ভর্তি করে পাঠাচ্ছেন।এতে প্রতিদিন গড়ে ১৬ মেট্রিক টন সবজি পাঠানো হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন আড়তদার।

মোস্তফা কামাল আরো জানান, বর্তমানে সবজির বাজার ভালো কৃষকরা জমিতেই পাইকারী দরে মণ প্রতি মোটা করলা ৯ শত টাকা চিকন করলা ১ হাজার ৭শত টাকা, মুলা ১ হাজার ২শত টাকা, ফুলকপি ২হাজার তিনশত টাকা, বেগুন ১ হাজার ৪শত ৮০ টাকা মণে বিক্রি করছে। কৃষকদের নিকট নগদ টাকায় জমি থেকে কিনে সেখানেই বস্তা করে। ভ্যানে করে আড়তে নিয়ে পণ্যবাহী ট্রাকে লোড করা হয়। এবং এক রাতের ব্যবধানে নির্ধারিত স্থানে সবজিগুলো বাজারজাত করা হয়। এতে আড়তদারও কিছুটা লাভবান হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ গতকাল বৃহস্পতিবার জানান, আমাদের কৃষকরা দূযোগপূর্ণ আবহওয়ায় শত বাধা বিপত্তি মেনে নিয়ে পুণরায় ঘুরে দাড়িয়েছে। তারা সবজি চাষে ব্যাপক মনোনিবেশ হওয়ায় আমরা সবজি চাষাবাদে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পেরেছি। তাই বর্তমান সংকটময় মূহূর্তে নিজ জেলার বাইরেও সবজি রপ্তানি করতে পারছি।

(কেএস/এসপি/অক্টোবর ২৯, ২০২০)