স্টাফ রিপোর্টার : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ৩ নভেম্বর ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

বৃহস্পতিবার (২৯ অক্টোবর) ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতে এক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে সফটওয়্যারের প্রস্তাব করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর। গত ১৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের এক বৈঠকে তিনি প্রস্তাবটি করেন। এরপর এ সফটওয়্যারে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের পক্ষ থেকে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক ডাকতে ইউজিসিকে অনুরোধ করা হয়।

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর জানান, গত ৩ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সফটওয়্যারের একটি প্রেজেন্টেশন হবে। সফটওয়্যারে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া কতটা সম্ভব হবে সে বিষয়টি নিরীক্ষার জন্য কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারও যুক্ত হবেন।

নাম প্রকাশ না করে কয়েকজন ভিসি ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির মাধ্যমে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক সফটওয়্যার কেনা হয়েছে। এছাড়া এ বিশ্ববিদ্যালয়েও একাধিক সফটওয়্যার কেনা হয়েছে। সংশি­ষ্ট সফটওয়্যার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ভালো সম্পর্ক আছে বলে জানা গেছে। এছাড়া আরও কয়েকজন ভিসি সফটওয়্যার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ কারণে সিন্ডিকেটভুক্ত ভিসিরা অনলাইনের এই ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তাব করেছেন।

গত ১৭ অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় যুক্ত ভিসিরা এ বিষয়ে জানতেন না। পরে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এর থেকে সরে গেছেন এবং আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় সরে যাওয়ার চিন্তা করছে।

বৈঠকে উপস্থিত এক ভিসি জানান, যে সফটওয়্যার প্রস্তাব করা হয়েছে সেটি নতুন নয়। এ ধরনের সফটওয়্যারে চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও পরীক্ষা নেয়া হচ্ছে। কিন্তু তাতে শিক্ষার্থী সংখ্যা খুবই কম। ২০-২৫ জনের বেশি নয়। হাজার হাজার শিক্ষার্থীকে যুক্ত করে বিদ্যমান ইন্টারনেট অবস্থায় নেয়া কতটা যৌক্তিক ও নিরাপদ হবে সেটা প্রশ্ন সাপেক্ষ। বিষয়টি মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিকে ভেবে দেখার পরামর্শ দেন ওই ভিসি। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের আগামী সভায় এবং ইউজিসির সভায় তিনি এ নিয়ে কথা বলবেন বলে জানান।

নামপ্রকাশ না করে ইউজিসির দুই সদস্য জানান, ভারতে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাংলাদেশের চেয়েও বেশি। সেখানে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা হয়েছে। বাংলাদেশে অবস্থা তুলনামূলক ভালো হওয়ার পরও অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তাব ‘সুযোগ সন্ধানের’ মতো। এ কারণে সমন্বিত বা গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা পর্যন্ত হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাই এ নিয়ে বিকল্প চিন্তা করা দরকার বলে মনে করেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, কেবল একটি স্বার্থের দিকে তাকালে হবে না, শিক্ষার্থীদের স্বার্থের দিকটিও দেখতে হবে। সমন্বিত পদ্ধতিতে পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন। এর মাধ্যমে ঝুঁকি ও সময় অপচয় কম হবে। ভর্তি পরীক্ষা কোন পদ্ধতিতে হবে (অনলাইন না সরাসরি) তা নিয়ে কাজ চলছে।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ২৯, ২০২০)