রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ভাটা থেকে ইট নিয়ে টাকার পরিবর্তে  চেক এর মাধ্যমে টাকা পরিশোধ না করায় দায়েরকৃত মামলায় কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ার এক বছর সাড়ে নয় মাসেও গ্রেপ্তার করা হয়নি সাতক্ষীরা জেলা তাঁতী লীগের সাবেক সভাপতি মীর আজাহার হোসেন শাহীনকে। মামলার বাদি দীর্ঘদিন ধরে মামলা চালিয়ে আদালতের রায় পেয়েও প্রশাসনের দারে দারে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন।

মামলার বিবরণে জানা যায়, সাতক্ষীরার আশাশুনির শোভনালী ব্রীজ সংলগ্ন মেসার্স গাজী ব্রিকস এর ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন সাতক্ষীরা শহরতলীর চালতেতলা মেঝমিয়ার মোড়ের আব্দুল মান্নান। আব্দুল মান্নানের কাছ থেকে ইট নিয়ে টাকা লেনদেন এর একপর্যায়ে শহরের মুনজিতপুরের মীর নেছার আলীর ছেলে জেলা তাঁতী লীগের তৎকালিন সভাপতি মীর আজাহার হোসেন শাহীন এর কাছে ২০১৪ সালের পহেলা জুলাই পর্যন্ত এক কোটি ১০ লাখ টাকা পাওনা হয়। টাকা দিতে গড়িমসি করায় আব্দুল মান্নান বিষয়টি সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ এর ভাই মাহি আলম, শাহীনের ভাই খুলনায় ডিবি পুলিশে কর্মরত তুহিনসহ বিভিন্ন মানুষের দ্বারস্ত হন। বসাবসি হয় মাওয়া চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে। টাকা পরিশোধ করার জন্য সময় নিয়েও শাহীন টাকা না দেওয়ায় বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুনসুর আহম্মেদকে জাননো হয়।

একপর্যায়ে ২০১৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মুনসুর আহম্মেদের বাসায় এক শালিসি বৈঠকে শাহীন সাড়ে ৩১ লাখ টাকা দিতে রাজী হয়ে একটি শালিসনামায় সাক্ষর করে। সে শালিসনামা অবমাননা করায় তার জমি লিখে দেওয়ার কথা বলেও বারবার কথা খেলাপ করে শাহীন। একপর্যায়ে ওই বছরের পহেলা অক্টোবর মীর আজাহার হোসেন শাহীন টাকা দিতে না পেরে ২০১৪ সালের পহেলা অক্টোবর স্টাণ্ডার্ড ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার এক কোটি ১০ লাখ টাকার একটি চেক আব্দুল মান্নানকে দেন। ১২ নভেম্বর ব্যাংকে যেয়ে টাকা না পেয়ে ১৮ নভেম্বর মীর আজাহার হোসেন শাহীনকে লিগ্যাল নোটিশ দেন আব্দুল মান্নান।

এরপরও এক মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করায় আব্দুল মান্নান ওই বছরের ২৩ ডিসেম্বর সাতক্ষীরার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম ২য় আদালতে শাহীনের বিরুদ্ধে এনআইএক্টের ১৩৮ ধারায় মামলা(সিআর- ২২০/১৪) দায়ের করেন। মামলাটি পরে বিচারের জন্য সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে পাঠানো হয়(মামলা নং সেশন- ১০৭/১৫)। শাহীন মামলাটি মহামান্য হাইকোর্টে ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। এরপর টাকা দেওয়ার পরও মিথ্যা মামলা করার অভিযোগ এনে শাহীন সাতক্ষীরার যুগ্ম জেলা জজ প্রথম আদালতে দেঃ ০৮/১৭ নং মামলা করেন। মামলাটি পরবর্তীতে খারিজ হয়ে যায়।

মামলার বিবরনে আরো জানা যায়, বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তী চেক এর দাবিকৃত টাকার পরিবর্তে মুনসুর আহম্মেদ এর বাড়িতে শালিসনামায় উল্লেখিত সাড়ে ৩১ লাখ টাকাকে যথার্থ মনে করে ২০১৯ সালের পহেলা জানুয়ারি আসামী মীর আজাহার হোসেন শাহীনকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও সাড়ে ৩১ লাখ টাকা জরিমানা ধার্য করেন। ২০১৯ সালের ৬ মার্চ ১৯৫ নং স্মারকে আদালত থেকে পুলিশ সুপারের মাধ্যমে সদর থানায় মীর আজাহার হোসেন শাহীনের নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা পাঠানো হয়।

আব্দুল মান্নানের অভিযোগ, এক বছর সাড়ে নয় মাস আগে সাজা ও এক বছর সাত মাস ২৩ দিন আগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলেও পুলিশ প্রভাবশালী তাঁতীলীগ নেতা শাহীনকে গ্রেপ্তার করেনি। শাহীন প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে এমনটি জানিয়ে সদর থানা থেকে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে বেড়ালেও কোন ফল পাননি। এমনকি শাহীনকে মোবাইলে যোগাযোগ করার পরও সে বিভিন্ন অজুহাতে মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে।

জানতে চাইলে বৃহষ্পতিবার বিকেল পৌনে ৬টার দিকে মুঠোফোনে মীর আজাহার হোসেন শাহীন এ প্রতিবেদককে বলেন, মান্নান চাচা তার কাছে টাকা পাবেন এটা সত্য। আদালত তাকে সাজা দেওয়ার পর তিনি তার অংশের জমি বিক্রি করে মান্নান চাচার টাকা পরিশোধ করার চেষ্টা করছেন। এমনকি চাচা আব্দুল মান্নান বাজার মূল্যের চেয়ে কিছু টাকা কম দিয়ে ওই জমি রেজিষ্ট্রি করে নিলে তার কোন আপত্তি নেই। তবে তিনি আপোষের মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে চান।

সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামানের সঙ্গে বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা ৫টা ৫৮ মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২৯, ২০২০)