আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন নির্বাচনের আর কয়েকদিন বাকি। জোর প্রচারণা চলছে। কিন্তু ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও পেনসিলভেনিয়ার মতো দোদুল্যমান রাজ্যগুলোতে (সুইং স্টেট) বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। সবশেষ জরিপগুলোতে এমনটাই দেখা যাচ্ছে।

এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্যগুলো নিয়ে নির্বাচনের আগ মুহূর্তে মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য হিল ও হ্যারিসের যৌথভাবে করা নতুন এই জরিপের এমন তথ্য রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য অশনিসংকেতই বলা চলে। কেননা, ২০১৬ সালের নির্বাচনে এই তিন রাজ্যেই জয় পেয়েছিলেন তিনি।

জনমত জরিপ পরিচালনাকারী মার্ক পেন বলছেন, ‘নির্বাচনের কয়েকদিন আগে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এসব রাজ্যে বাইডেনের এগিয়ে থাকার অর্থ এই যে, ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের সঙ্গে এই ব্যবধান কমিয়ে আনার মতো যথেষ্ট সময় রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে আর নেই।’

তিনি আরও বলছেন, এই তিন রাজ্য এখন টস আপ ক্যাটাগরির মধ্যে চলে গেছে। অর্থাৎ এসব রাজ্যে উভয়ের জয়ের সম্ভাবনা ফিফটি-ফিফটি। বরং এসব রাজ্যে করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি এবং নির্বাচনী প্রচারণায় বাইডেন প্রচুর ব্যয় করায় কারণে রাজ্যটিতে ট্রাম্পের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফিরে আসাটা খুব কঠিন হয়ে যাবে।’

ফ্লোরিডা

কট্টরপন্থীদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ফ্লোরিডা। কিন্ত সবশেষ এই জরিপে দেখা যাচ্ছে, ট্রাম্পের চেয়ে এই রাজ্যে তিন পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বাইডেন। জরিপে অংশ নেয়া ৫০ শতাংশ নিবন্ধিত ভোটার বাইডেনের পক্ষে এবং ৪৭ শতাংশ ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। বাকিরা ভুগছেন সিদ্ধান্তহীনতায়।

সানশাইন স্টেট নিয়ে করা সাম্প্রতিক জরিপেও একই আভাস মিলছে। কুইননিপিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহস্পতিবার প্রকাশিত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ফ্লোরিডায় বাইডেনের পক্ষে ৪৫ শতাংশ এবং ট্রাম্পের পক্ষে ৪২ শতাংশ সমর্থন রয়েছে। রিয়াল ক্লিয়ার পলিটিক্সের জরিপে তো বাইডেন এগিয়ে আছেন ৭.৭ পয়েন্টে।

হিস্পানিক ভোটারদের মধ্যে বাইডেন এগিয়ে রয়েছে। তার নির্বাচনী প্রচারণাও এখন আরও হিস্পানিকের ভোট পাওয়ার লক্ষ্যে চালানো হচ্ছে। সবশেষ জরিপ অনুযায়ী, রাজ্যটির ৫৪ শতাংশ হিস্পানিক আমেরিকান বলছেন, তারা বাইডেনকে সমর্থন করেন। এদিকে ট্রাম্পকে ভোট দেবেন বলে জানিয়েছেন ৪৩ শতাংশ হিস্পানিক।

জনমত জরিপ পরিচালনাকারী মার্ক পেন বলছেন, ‘ফ্লোরিডায় সংখ্যাগরিষ্ঠ লাতিন ভোট রয়েছে ট্রাম্পের। তবে মহামারি করোনা নিয়ে তার প্রতি উদ্বেগ রয়েছে বয়োজ্যেষ্ঠ নারীদের।’

বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বাইডেন উভয়ই ফ্লোরিডায় সমাবেশ করেছেন। রাজ্যটিরে গুরুত্বপূর্ণ ওয়ান-ফোর করিডরের শেষপ্রান্তে টাম্পা নামক স্থানে সমাবেশ করেছেন তিনি। সাবেক এই ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্লার ব্রোওয়ার্ড কাউন্টিতেও সমাবেশ করেছেন। তিনি করোনাভাইরাসকে নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি দেন সেখানে।

এবারের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে মহামারি করোনা মোকাবিলা। ভাইরাসটি মোকাবিলায় বাইডেনের প্রতি যে আমেরিকানদের আস্থা বেশি, তা বেশিরভাগ জনমত জরিপেই প্রকাশ পেয়েছে। ফ্লোরিডাও ব্যতিক্রম নয়। এখানেও এই ইস্যুতে বাইডেনের ৫৫ শতাংশের বিপরীতে ট্রাম্পে প্রতি আস্থা ৪৫ শতাংশের।

পেনসিলভেনিয়া

দ্য হিল/হ্যারিসের করা সবশেষ এই জরিপে আরেক দোদুল্যমান রাজ্য পেনসিলভেনিয়াতেও বাইডেনের এগিয়ে থাকার আভাস মিলেছে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যটিরে ৫১ শতাংশ ভোটার জো বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে চান। আর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আরেকবার সুযোগ দিতে পান ৪৬ শতাংশ ভোটার।

তিন শতাংশ ভোটার এখনও নিশ্চিত নন যে তারা কাকে ভোট দেবেন। এদিকে বৃহস্পতিবার কুইননিপিয়াকের প্রকাশিত জরিপে দেখা যাচ্ছে, বাইডেনের প্রতি সমর্থন রয়েছে ৫১ শতাংশের। বিপরীতে ট্রাম্পকে পুননির্বাচিত করতে চান ৪৪ শতাংশ। রিয়াল ক্লিয়ার পলিটিক্সের জরিপে বাইডেন এগিয়ে আছেন ৪.৩ পয়েন্টে।

আসন্ন নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই রাজ্যে গত সোমবার সমাবেশ করেন ট্রাম্প। অর্থনীতি ও জ্বালানি ইস্যু নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন তিনি। গত নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছিল এই রাজ্য। এখানে মাত্র কয়েক হাজার ভোটে হেরেছিলেন সেবারের ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন।

রাজ্যটির শ্বেতাঙ্গ কর্মজীবীদের ভোট পাওয়ার জন্য বেশি সময় ব্যয় করেছে ট্রাম্পের প্রচারণা শিবির। অনেকে বলছেন, ডেমোক্র্যাটরা এটাকে ততটা গুরুত্ব দেয়নি। সবশেষ ব্যাটলগ্রাউন্ড জরিপে দেখা যাচ্ছে, এখানে ৫১ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ভোটার ট্রাম্পকে সমর্থন করেন। আর বাইডেনের প্রতি সমর্থন রয়েছে ৪৬ শতাংশের।

জনমত জরিপ বিশেষজ্ঞ মার্ক পেন এ রাজ্যটির ভোটারদের মানসিকতা প্রসঙ্গে বলছেন, ট্রাম্পের প্রতি পেনসিলভেনিয়ার গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জোরালো সমর্থন রয়েছে। তবে শহরতলীগুলোতে বাইডেনের সমর্থক বেশি। ডেমোক্র্যাটরা বিশাল ব্যবধানে হয়তো এখানে এগিয়ে থাকতে পারেন বলেই মনে করছেন তিনি।

নর্থ ক্যারোলাইনা

আসন্ন মার্কিন নির্বাচনের আরেক দোদুল্যমান রাজ্য হলো দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় নর্থ ক্যারোলাইনা। এ রাজ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও জো বাইডেনের ব্যবধান সামান্যই। সবশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, রাজ্যটিতে বাইডেনের প্রতি ৪৯ শতাংশ নিবন্ধিতে ভোটারের সমর্থন রয়েছে। অপরদিকে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন ৪৮ শতাংশের।

অন্যান্য জরিপগুলোতেও উভয়ের মধ্যে সামান্য ব্যবধানের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। রিয়াল ক্লিয়ার পলিটিক্সের জরিপে তো এখানে ট্রাম্পের চেয়ে গড়ে মাত্র ০ দশমিক ৬ পয়েন্টে এগিয়ে আছেন বাইডেন। রাজ্যটিতে শ্বেতাঙ্গ এবং কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে যে ব্যাপক মাত্রায় বিভাজন রয়েছে তার চিত্র ফুটে উঠেছে জরিপে।

জরিপে দেখা যাচ্ছে, নিবন্ধিত ৬০ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ ভোটার বলছেন তারা ট্রাম্পকে ভোট দেবেন। অপরদিকে বাইডেনের পক্ষে রয়েছেন ৩৮ শতাংশ। অপরদিকে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ৯১ শতাংশ বলছেন তারা বাইডেনকে ভোট দেবেন। এদিকে ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন মাত্র ৬ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ ভোটার।

মার্ক পেন বলছেন, ‘নর্থ ক্যারোলাইনায় কৃষ্ণাঙ্গদের এবং শহরতলীর মানুষের ভোট খুবই অল্প থেকে একেবারে নাও পেতে পারেন। কিন্তু তার জয়ের জন্য এসব ভোট পাওয়াটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’ ফলে আগামী ৩ নভেম্বরের নির্বাচনে বাইডেন এখান থেকে যে জয় পেতে যাচ্ছেন তার পক্ষেই মত পাওয়া যাচ্ছে বিশেষজ্ঞদের।

শুধু কৃষ্ণাঙ্গ নয় এই রাজ্যে লাতিন ভোটারদের মধ্যেও বাইডেনের সমর্থন বেশি। সবশেষ জরিপে দেখা যাচ্ছে, নর্থ ক্যারোলাইনায় লাতিনোদের মধ্যে ৫২ শতাংশ বাইডেনকে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন। বিপরীতে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন রয়েছে ৪২ শতাংশের। ফলে এই জনগোষ্ঠীর ভোটও বাইডেনের জয়ে ভূমিকা রাখতে পারে।

ফ্লোরিডার ১ হাজার ১৪৮, নর্থ ক্যারোলাইনার ৯০৩ এবং পেনসিলভেনিয়ার ৯০১ জন নিবন্ধিত ভোটারের মত নেয়ার মাধ্যমে গত ২৬ থেকে ১৯ অক্টোবর এই জরিপটি চালায় দ্যা হিল ও হ্যারিস। এদের মধ্যে লিঙ্গ, অঞ্চল, বর্ণ/নৃ-তত্ত্ব, আয়, শিক্ষা, রাজনৈতিক দল ও ভাবাদার্শ বিবেচনা করে তাদের বাছাই করা হয়।

(ওএস/এসপি/অক্টোবর ৩০, ২০২০)