আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য নওরোজ হিরা সিকদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রলোভনে একাধিক মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই সকল মেয়েদের ভিডিওচিত্র ধারণ করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে গত চার বছর ধরে ধর্ষন করে আসছে হিরা সিকদার।

এদের মধ্যে দুই নির্যাতিতার ভিডিওচিত্র দেখে তাদের তালাক দেয় স্বামী। হিরা সিকদারের মোবাইলে ১১ মেয়ে ধর্ষণের ভিডিওচিত্র উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। হিরা সিকদার ফরিদপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ফরিদপুর গ্রামের আব্দুল খালেক সিকদারের ছেলে এবং কাকরধা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। ঘটনা প্রকাশের পর থেকে পলাতক রয়েছে হিরা।

এ ঘটনায় (২৮ অক্টোবর) বুধবার রাতে এক নির্যাতিতা মাদ্রাসার ছাত্রী বাদী হয়ে বাকেরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছে। সেখানে হিরা সিকদারসহ দুইজনকে আসামী করা হয়। এছাড়া ২৫ অক্টোবর শেখ ইমরান হোসেন নামের এক ব্যক্তি ১১ নির্যাতিতার পক্ষে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন থানায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ১৯ অক্টোবর তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফরিদপুর গ্রামের সিকদার বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় হিরা সিকদারকে মারধর করা হয়। এ সময় হিরার পকেট থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল পড়ে যায়। পরবর্তীতে ওই গ্রামের এক ব্যক্তি মোবাইল পেয়ে তার ভিতর বিভিন্ন মেয়েদের সাথে হিরার অশ্লীল ভিডিও দেখতে পান। তার মধ্যে তার মেয়ের ছবিও রয়েছে। এরপর এক এক করে গ্রামের বেশীরভাগ ব্যক্তির মোবাইলে ওই ভিডিও চলে যায়।

১১ নির্যাতিতার পক্ষে থানায় অভিযোগ দেয়া শেখ ইমরান হোসেন জানান, হিরা সিকদার বিভিন্ন সময় গ্রামের মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের সাথে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করে আসছে। এর মধ্যে যে সকল মেয়ে তিনি (হিরা) যে স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য সেই স্কুলের শিক্ষার্থী হলে তাকে ফেল থেকে পাশ করিয়ে দেয়া এবং ভালো ফলাফলের গ্যারান্টি দিতো।

আবার কাউকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেয়া, বিয়ে করে সংসার করা, ভালো ছেলের নিকট বিয়ে দেয়াসহ বিভিন্ন ধরনের প্রলোভনে দেখিয়ে তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্কে রাজী করাতো। ২০১৫ সালের ২০ জানুয়ারী থেকে বর্তমান বছরের ১৯ অক্টোবর পর্যন্ত হিরা ১১টি মেয়ের সাথে শারীরিক সম্পর্ক করেছে। এদের বয়স ১২ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। শারীরিক সম্পর্কের সময় ওই সকল মেয়েদের অগোচরে হিরা তা মোবাইলে ধারন করতো। পরবর্তীতে ওই মোবাইলের ভিডিওচিত্র দেখিয়ে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করে আসছিল।

এদের মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ের পর তাদের শ্বশুরবাড়ির লোকজন ওই ভিডিওচিত্র দেখানোর ফলে তাদের তালাক দেয়া হয়। তার লালসার শিকার হয়েছে একই পরিবারের তিন বোন এবং দুই বোন। কিন্তু ভিডিওর জন্য তারা কারো কাছে কোন অভিযোগ করতে পারেনি। ১১ নির্যাতিতার মধ্যে একজনের সাথে অভিযোগকারীর কথা হয়েছে। এছাড়া ভিডিওচিত্র দেখে অপর মেয়েদের সে সনাক্ত করে। যারা ওই গ্রামেরই বাসিন্দা। কিন্তু হিরার ভয়ে তারা মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না।

হিরার ঘনিষ্ট এক স্বজন নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানিয়েছেন, হিরা বিবাহিত। সে তার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতো। ওই সময় তার স্ত্রীর অনুপস্থিতিতে হিরা এক ছেলেকে বলৎকার করে। ঘটনায় এলাকাবাসী দেখে ফেললে হিরার মাথার চুল থেকে শুরু করে ভ্রু পর্যন্ত ফেলে দিয়ে তাকে তাড়িয়ে দেয়। এ ঘটনার পর হিরাকে তালাক দেয় তার স্ত্রী। এরপর থেকে হিরা গ্রামের বাড়িতে থাকা শুরু করে।

এ ব্যাপারে কাকরধা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মীর মহিসন বলেন, আমি হিরা সিকদারের বিচার চাই। তার বিরুদ্ধে ধর্ষনের মামলার বিষয়টি আমি জানি। আমরাও তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহন করবো।

বাকেরগঞ্জ থানার ওসি আবুল কালাম মামলা দায়ের ও অভিযোগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। হিরা সিকদারের বিরুদ্ধে আরো নারী নির্যাতনের প্রমান মিলেছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে ২৯অক্টোবর সকালে ধর্ষক নওরোজ হিরা সিকদারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কাকরধা বাজারে বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র ও যুব সমাজ। বাজারের মসজিদ মোর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কাকরধা স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা সভা। বক্তারা ধর্ষণকারী হিরা সিকদারকে দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেফতারসহ কঠোর শাস্তির দাবি জানান।

(টিবি/এসপি/নভেম্বর ০২, ২০২০)