নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা চরপাড়া গ্রামের কৃষক হাবিবুর রহমান। তার সম্বল আট বিঘা জমি। মশিন্দা বাজারের বীজ বিক্রেতা আব্দুল খালেকের কাছ থেকে ব্রি-৪৮জাতের বীজ কিনে রোপন করেছিলেন তিন মাস আগে। সেচ-সার কীটনাশক, নিরানি দিয়ে পরিচার্যাও করেছিলেন। ধানের গাছগুলো বড় হয়েছে।  কিন্তু ধানে শীষ বের হয়নি। অথচ তার পাশের জমিতে রোপন করা একইজাতের ধান কেটে ঘরে তুলেছে অন্য কৃষক।

কৃষক হাবিবুর রহমান অভিযোগ করেন, তিনি বীজ বিক্রেতা খালেকের ‘হাসি এন্টারপ্রাইজ’ থেকে ব্রি-৪৮জাতের বীজ কিনে জমিতে রোপন করেছিলেন। কিন্তু তাকে ব্রি-৪৮জাতের বীজ না দিয়ে ২৯ জাতের বীজ দিয়ে প্রতারিত করেছেন। অসময়ে ওই বীজ রোপন করায় ধানে শীষ গজায়নি। ফলনও হয়নি। এরকম প্রতারণার শিকার কৃষক হাবিবুর একা নয়। ওই এলাকার অন্তত পক্ষে ৩০ জন কৃষকের ৫০ বিঘা জমিতে ভেজাল বীজ রোপন করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন।। ভুক্তভোগীরা প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
এব্যাপারে অভিযুক্ত বীজ বিক্রেতা আব্দুল খালেক দাবী করেন,- তিনি আসল বীজই বিক্রি করেছেন। সঠিক পরিচর্যার অভাবে অভিযোগকারী কৃষকরা ফসল ফলাতে পারেনি। এখন তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
সোমবার সকালে সরেজমিন ক্ষতিগ্রস্থ মাঠে গিয়ে দেখা গেছে, মশিন্দা বাজারের উত্তরের চরমশিন্দা মাঠে ধানের গাছগুলোতে সবুজ হয়ে উঠেছে। কিন্ত ধান গাছের বয়স তিনমাস অতিক্রম হলেও থোর আসেনি। এই ধানগাছগুলো কেবলই শোভা বর্ধন করছে। অথচ ওই জমির পাশেই সানাউল্লাহ নামে একজন কৃষক একই জাতের (বি-৪৮) ধান রোপন করায় সেগুলো পেকে সোনালী হাসি ছড়াচ্ছে।
ভুক্তভোগী বর্গাচাষি শরিফ জানান,-তিনি এক বিঘা জমি বর্গা নিয়ে বি-৪৮জাতের ধান রোপন করেছেন। কিন্তু ফলন হয়নি। তার আশা ছিল-এই ধান কেটে একই জমিতে আরেকটি ফসল ফলিয়ে কিছুটা লাভবান হবেন। কিন্তু বীজ কিনে প্রতারিত হওয়ায় তার সে আশা ভঙ্গ হয়েছে। তার মত অবস্থা বর্গাচাষি সাবেদ,রশিদ, শহিদুল ইসলাম,হাকি ও জয়নালের।
কৃষক জমশের বলেন,- তিনি বীজ বিক্রেতা খালেকের দোকান থেকে প্রতি কেজি বীজ ২১০ কেজি দরে কেজি বীজ কিনেছিলেন। জমি তৈরি, নিরানি, সার, কীটনাশকসহ প্রতি বিঘা জমিতে তার প্রায় ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বীজ ভেজাল হওয়ায় তার সব টাকাই গচ্ছা গেছে। এখন সংসার চলাই তার কঠিন হয়ে পড়েছে।
কৃষক হাবিবুর রহমানে বলেন,- আট বিঘা জমিতে পাট করলে তার ১৫০মন পাট উৎপাদন হতো। কিন্তু বীজ বিক্রেতা খালেকের পরামর্শে ধান রোপন করে এখন সবই শেষ। অথচ এই আবাদ করতে গিয়ে তিনি প্রায় দেড় লাখ টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। তার এই আর্থিক ক্ষতির কথা বলতে গিয়ে এখন বীজ বিক্রেতা খালেকের হুমকী শুনতে হচ্ছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,- বীজ বিক্রেতা আব্দুল খালেক অনুমোদিত ডিলার নয়। উপজেলা কৃষি বিভাগের নজর এড়িয়ে বীজ বিক্রি করে আসছেন। এতে গ্রামের সহজ-সরল কৃষক প্রতারণার শিকার হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, কৃষকের অভিযোগ পাওয়ার পর কৃষি বিভাগের উপসহকারি কর্মকর্তারা (বিএস) মাঠে গিয়ে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন। ওই ঘটনার পর থেকে বীজ বিক্রেতা আব্দুল খালেক আত্মগোপনে রয়েছেন।। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবারের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না দিলে বীজ বিক্রেতা আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ব্যস্ততার কারনে তিনি পদক্ষেপ নিতে পারেননি। তবে আজ মঙ্গলবার ভুক্তভোগী কৃষকদের ডেকে শুনানী গ্রহন শেষে অভিযুক্ত বীজ বিক্রেতা আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন।
(এমআর/এএস/আগস্ট ১৮, ২০১৪)