আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : প্রায় ছয় হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে দুই বার প্রতারণার মাধ্যমে ৬০ কোটি টাকা আত্মসাত করার পর এবার তৃতীয় দফায় প্রতারনার মাধ্যমে ৬০ কোটি টাকার প্রাপ্তি স্বীকারপত্র আদায় করে নিয়েছেন যুবক হাউজিং এন্ড রিয়েল স্টেট ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের কর্মকর্তারা।

তৃতীয় দফায় প্রতারিত হয়ে নিরুপায় প্রতারিত গ্রাহকরা যুবকের চেয়ারম্যানসহ চারজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। বরিশালের বিজ্ঞ প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে সকল আসামির বিরুদ্ধে সমন জারি করেছেন।

মঙ্গলবার সকালে আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলার আসামিরা হচ্ছেন-যুবক হাউজিংয়ের চেয়ারম্যান হোসাইন আল মাসুম, ভাইস চেয়ারম্যান মো. মনির উদ্দিন, পরিচালক সৈয়দ রাশেদুল হুদা চৌধুুরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ লোকমান হোসেন।

প্রায় ছয় হাজার প্রতারিত গ্রাহকের পক্ষে গত ৮ নভেম্বর শেষ কার্যদিবসে আদালতে মামলাটি (যার নম্বর ০৫/২০২০) দায়ের করেন শেয়ার হোল্ডার মো. আনিছুর রহমান, আব্দুল কাদের তালুকদার, শামসুজ্জামান টুটুল, মাহমুদা বেগম, জাহেদুল আলম তুহিন ও সালমা পারভীন গং।

এজাহারে জানা গেছে, ২০০১ সালের শুরু থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সারাদেশের ন্যায় যুবক বরিশাল জেলার বিভিন্ন থানার সহজ সরল বেকার যুবক-যুবতীদের কাজে লাগিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়। ২০০৬ সালের পর যুবকের কার্যক্রম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে সাধারণ গ্রাহকরা যুবকের কাছে তাদের পাওনা টাকা দাবি করেন। এসময় পাওনা টাকা পরিশোধ না করে কৌশলে নতুন করে জমি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে আরও টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়।

একপর্যায়ে যুবক হাউজিংয়ের গ্রাহকরা উপায়অন্তু না পেয়ে যুবক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেন। ওইসব মামলায় আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে যুবকের পরিচালকগণ বেরিয়ে যায়। পরবর্তীতে বরিশালের গ্রাহকরা তাদের পাওনা টাকা আদায়ের জন্য ২০১৪ সালের শুরুতে যুবক হাউজিং কর্তৃপক্ষের সাথে বরিশাল এবং ঢাকার বিভিন্নস্থানে টাকা উদ্ধারের জন্য বৈঠক করেন। যুবক হাউজিং কর্তৃপক্ষ গ্রাহকদের নগদ টাকা দেওয়ার মতো কোন সামর্থ্য তাদের নেই বলে জানিয়ে দেন। এরপর ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় পাওনাদাররা কোন উপায় না পেয়ে বরিশালের হেমায়েত উদ্দিন রোডে যুবকের ক্রয়কৃত ভেনাস শপিং সেন্টারের ১৮.৫ শতক জমি ও তার উপর দ্বিতল ভবনসহ সকল স্থাপনা বরিশালের ক্ষতিগ্রস্থ সদস্যদের পাওনার বিপরীতে দেওয়ার জন্য যুবক কর্তৃপক্ষ প্রস্তাব করেন।

সে মোতাবেক বরিশালের পাওনাদারদের ৬০ কোটি টাকার ডিড-ডকুমেন্ট যুবক হাউজিং কর্তৃপক্ষের কাছে প্রদান করা হয়। যুবকের চেয়ারম্যান বরিশালের শেয়ার হোল্ডার প্রতিনিধিদেরকে ৬০ কোটি টাকার প্রাপ্তি স্বীকার পত্র প্রদান করেন।

পরবর্তীতে যুবক হাউজিংয়ের চেয়ারম্যানসহ কর্তৃপক্ষ ২০১৮ সালের ১০ আগস্ট মার্কেটটি হস্তান্তরের উদ্দেশ্যে মিরপুর সাব রেজিস্ট্রার অফিসের যথাযথ কর্তৃপক্ষের সামনে স্ব-শরীরে হাজির হয়ে পাওনাদার প্রতিনিধি ৬০ জনের নামে একটি অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তারনামা দলিল সম্পাদন করে দেন। যা বরিশাল সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে রেজিস্ট্রি করার জন্য দাখিল করলে সাব রেজিস্ট্রার দলিল রেজিস্ট্রি করতে অসম্মতি জানায়।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, যুবকের ভেনাস মার্কেটের বিপরীতে বরিশাল জজকোটে দুইটি মামলা চলমান রয়েছে। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ভেনাস মার্কেট বিক্রি বা হস্তান্তর করা যাবে না। এ সংক্রান্ত আদালতের একটি নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে।

সূত্রে আরও জানা গেছে, আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে গ্রাহকদের সাথে তৃতীয় দফায় প্রতারণা করে যুবক কর্তৃপক্ষ গ্রাহকের কাছ থেকে নেয়া ৬০ কোটি টাকার প্রাপ্তি স্বীকারোক্তি আদায় করে নিয়েছেন। এমনকি তারা (গ্রাহক) পাওয়ার দলিল বা কোন প্রকার হস্তান্তর দলিল যাহাতে রেজিষ্ট্রি করতে না পারে সেজন্য যুবক কর্তৃপক্ষ রেজিষ্ট্রি অফিসে আবেদন করেছেন। একথা জানার পরে হতাশাগ্রস্থ যুবকের পাওয়ার গ্রহিতারা মামলা দায়ের করেছেন।

(টিবি/এসপি/নভেম্বর ১০, ২০২০)