চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : স্থানীয় রাজনীতির অন্তর্কোন্দলের জের ধরে ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নকল করে প্রত্যায়ন পত্র প্রদানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এমন ঘটনায় সম্মানহানির শিকার হচ্ছেন এক প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। এ নিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা চলছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলাধীন সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেযারম্যান মনির আহমেদ- এর স্বাক্ষর নকল করে সম্প্রতি কে বা কারা একটি প্রত্যয়ন পত্র ছবি তুলে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। আর সেই প্রত্যায়ন পত্রে একজন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে 'জামাত' পরিবার হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। তবে যার স্বাক্ষর নকল করে প্রত্যায়ন পত্র দেওয়া হয়েছে সেই ইউপি চেয়ারম্যান স্বাক্ষরটি তার নয় বলে দাবি করেছেন। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, কে বা কারা কোন অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এটি করেছে। এর সাথে আমি বা আমার ইউনিয়ন পরিষদের কেউ জড়িত নয়।

ঘটনার বিবরণীতে জানা যায়, সীতাকুণ্ড উপজেলার মুরাদপুর ইউনিয়নের প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা সুবেদার মেজর মোস্তফ কামাল - ১০০৭। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেন। মুক্তিযোদ্ধার সনদ নং- ম ১৩৪০১৮। তার মেয়ে সাজেদা বেগম এর বিয়ে হয় সোনাইছড়ির নিবাসী মরহুম শমসের আলমের পুত্র মরহুম শফিউল ইসলামের সাথে। তাদের সন্তান এস এম রিয়াদ জিলানী সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য ঘোষিত কমিটির সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মনির আহমেদ স্বাক্ষরিত এক প্রত্যায়ন পত্রে দাবি করা হয় - এস এম রিয়াদ জিলানী'র পরিবার জামাত সংশ্লিষ্ট পরিবার। এ প্রত্যায়ন পত্রটি কে বা কারা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলে এলাকায় তীব্র নিন্দার সৃষ্টি হয়। স্থানীয় রাজনীতি সংশ্লিষ্ট অনেকে মনে করছেন, স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবের জের ধরে এসএম রিয়াদ জিলানী- কে হেয় প্রতিপ্রন্ন করার জন্য এমন অপকৌশল নেওয়া হয়েছে। অবশ্য এ প্রত্যায়ন পত্রটি ভুঁয়া বলে দাবি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান মনির আহমেদ। তিনি বলেন, এ স্বাক্ষর আমার নয়। আমি এ ধরনের কোন প্রত্যায়ন পত্রে স্বাক্ষর করিনি।

সীতাকুণ্ড উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া বলেন, এসএম রিয়াদ জিলানী আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তার বাবা মরহুম শফিউল আলম শ্রমিক লীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত ছিলেন। স্থানীয় হাফিজ জুট মিলস- এ তিনি শ্রমিকলীগের প্যানেল থেকে সিবিএ সাধারন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল বাকের ভুঁইয়া আরো বলেন, এসএম রিয়াদ জিলানী স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়। ইতোপূর্বে সে উপজেলা ছাত্রলীগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছে। ২০১৩ সালে জামাত বিএনপি'র জ্বালাও পোড়াও আন্দোলের বিরুদ্ধে তার সাহসী ভূমিকা ছিল।

সোনাইছড়ি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বেলাল উদ্দিন এ প্রতিবেদককে বলেন, এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য। এস এম রিয়াদ জিলানী'র পরিবার সবসময় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাস করে। তার বাবা মরহুম শফিউল ইসলাম হাফিজ জুট মিলস - শ্রমিক লীগের রাজনীতি করতেন এবং সিবিএ - সাধারন সম্পাদক ছিলেন।

তিনি আরো বলেন, এসএম রিয়াদ জিলানী স্কুল জীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয় ভাবে জড়িত। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে নিজ কেন্দ্র ঘোড়ামারা ফকিরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী দিদারুল আলমকে নৌকা প্রতীকে বিজয়ী করার জন্য দিনরাত শ্রম দিয়েছে।

এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপ হয় সোনাইছড়ি তিন নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সভাপতি জহুরুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক খায়ের হোসেন। তারা দু'জনেই স্বীকার করেন এস এম রিয়াদ জিলানী স্কুল জীবন থেকেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল ও দলের দুঃসময়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে।

কে কারা কারা ইউপি চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর নকল করল এবং মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে সম্মানহানির চেষ্টা চালাচ্ছে এমন দোষীদের চিহ্নিত করার দাবি জানিয়েছেন সীতাকুণ্ড উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

(জেজে/এসপি/নভেম্বর ২০, ২০২০)