স্পোর্টস ডেস্ক : কাগজে-কলমে টুর্নামেন্টের অন্যতম শক্তিশালী দল জেমকন খুলনা। সে তুলনায় বেশ পিছিয়েই রয়েছে তারুণ্যনির্ভর মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। কিন্তু মাঠের খেলায় এতসব হিসেবের সুযোগ নেই। ব্যাটে-বলের লড়াইয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেই খুলনাকে হারিয়ে দিলো রাজশাহী। এ জয়ে তারা এককভাবে উঠে গেছে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে।

বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের উদ্বোধনী ম্যাচে জোড়া ছক্কা হাঁকিয়ে সবেমাত্র ছন্দে ফেরার আভাস দিচ্ছিলেন রাজশাহী অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু আউট হয়ে যান সে ওভারেই। তবে আজ আর ভুল করেননি শান্ত। তার অশান্ত ব্যাটিংয়ে খুব সহজেই খুলনার করা ১৪৬ রান তাড়া করার ভিত পেয়েছে রাজশাহী।

অধিনায়ক শান্ত ঝড়ো ফিফটির সঙ্গে ফজলে রাব্বি, রনি তালুকদার ও মোহাম্মদ আশরাফুলদের কার্যকরী ইনিংসে সহজেই খুলনাকে হারিয়ে দিয়েছে রাজশাহী। আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ১৪৬ রান করেছিল খুলনা। জবাবে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ১৬ বল হাতে রেখেই ম্যাচ জিতে নিয়েছে শান্তর দল। ৬ উইকেটের জয়ে এখন এককভাবে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে তারা।

রান তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকেন শান্ত। সাকিব আল হাসানের করা প্রথম ওভারে মাত্র ২ রান আসলেও, পেসারদের করা পরের দুই ওভারে আরও ২৩ রান নিয়ে নেয় রাজশাহী। তবে ইনিংসের তৃতীয় ওভারের পঞ্চম বলে আউট হন ডানহাতি ওপেনার আনিসুল ইসলাম ইমন। আগের ম্যাচে উড়ন্ত শুরু করলেও এ ম্যাচে ৫ বলে ২ রান করতে সক্ষম হন ইমন।

দ্বিতীয় উইকেটে পাল্লা দিয়ে রান করেন শান্ত ও রনি। দুজনের জুটিতে আসে ৪৭ রান। ইনিংসের নবম ওভারের শেষ বলে ২০ বলে ২৬ রান করে ফেরেন রনি। আউট হওয়ার আগে তিন চারের সঙ্গে একটি ছক্কাও হাঁকান তিনি। রনির বিদায়ে উইকেটে আসেন মোহাম্মদ আশরাফুল, যিনি শেষপর্যন্ত দলকে জিতিয়ে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়েন।

শুরু থেকে আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা নাজমুল শান্ত নিজের ফিফটি পূরণ করেন ১১তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে। পরের বলে মারেন চার। কিন্তু সে ওভারেই তার বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দেন রিশাদ হোসেন। রাজশাহী অধিনায়কের ব্যাট থেকে আসে ৬ চার ও ৩ ছয়ের মারে ৩৪ বলে ৫৫ রানের ইনিংস। শান্তর বিদায়ের সময় ৫৭ বলে মাত্র ৬০ রান প্রয়োজন থাকে রাজশাহীর।

যা তুলে নিতে কোনো সমস্যাই হয়নি আশরাফুল, ফজলে রাব্বি ও নুরুল সোহানদের। আগের ম্যাচে কোনো বল খেলার আগেই রানআউট হওয়া ফজলে রাব্বি এদিন শুরু থেকেই হাত খুলে খেলতে থাকেন। দলীয় ১২০ রানের মাথায় আউট হওয়ার আগে ২টি করে চার-ছক্কার মারে ১৬ বলে ২৪ রান করেন তিনি। বাকি কাজ সারেন আশরাফুল ও সোহান।

সাকিব আল হাসানের করা ১৬তম ওভারে জোড়া চার হাঁকানোর পর শামীম পাটোয়ারির বোলিংয়ে লেট কাটে চার মেরে দলের জয় নিশ্চিত করেন আশরাফুল। তিনি অপরাজিত থাকেন ২২ বলে ২৫ রানে, হাঁকান তিনটি বাউন্ডারি। অপরপ্রান্তে ১ ছয়ের মারে ৭ বলে ১১ রান করেন উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান সোহান।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে আরও একবার ব্যর্থতার গল্প লিখেছে খুলনার তারকাখচিত টপঅর্ডার ব্যাটিং লাইনআপ। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে তিন বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরে যান বাঁহাতি ওপেনার ইমরুল কায়েস। মঙ্গলবার প্রথম ম্যাচে দুই বল খেলে শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন তিনি।

ইমরুলের মতোই প্রথম ম্যাচের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন তিন নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান। প্রথম ম্যাচে ১৩ বলে ১৫ রান করা সাকিব, রাজশাহীর বিপক্ষে আউট হয়েছেন ৯ বলে দুই চারের মারে ১২ রান করে। যার ফলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে পাঁচ হাজারের মাইলফলকে পৌঁছার অপেক্ষা আরও দীর্ঘায়িত হলো সাকিবের, দরকার আরও ৩ রান।

প্রথম পাওয়ার প্লে'র মধ্যে সাকিব-ইমরুলকে হারালেও, অপরপ্রান্তে রয়েসয়ে খেলে যাচ্ছিলেন আরেক ওপেনার এনামুল হক বিজয়। কিন্তু বেশিক্ষণ টেনে নিতে পারেননি তিনি। ইনিংসের অষ্টম ওভারেই ধরেন সাজঘরের পথ। তার নামের পাশে তখন ৩ চার ও ১ ছয়ের মারে ২৪ বলে ২৬ রানের ইনিংস। আগের ম্যাচে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করা জহুরুল পারেননি এবার, আউট হওয়ার আগে করেছেন ৩ বলে ১ রান।

মাত্র ৪৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন কঠিন চাপে খুলনা। দলের বিপদ আরও বাড়িয়ে দলীয় ৫১ রানের মাথায় আরাফাত সানির ওভারে ফিরতি ক্যাচ তুলে দেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (১৩ বলে ৭)। এরপরই যেন শুরু হয় খুলনার আসল ব্যাটিং, চাপ অনুভব শুরু করে রাজশাহী।

ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন আগের ম্যাচের নায়ক আরিফুল হক ও তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান শামীম পাটোয়ারি। যেখানে বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন শামীমই। মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই মিড উইকেট দিয়ে হাঁকান বাউন্ডারি। মুকিদুল মুগ্ধকে পরপর দুই বলে হাঁকান ছক্কা ও চার। একইভাবে এবাদতকে চারের পরে মারেন বিশাল এক ছক্কা।

কিন্তু আক্রমণাত্মক ব্যাটিং বেশিক্ষণ চালিয়ে নিতে পারেননি শামীম। এবাদতের প্রথম দুই বলে চার ও ছক্কা হাঁকানোর পর পঞ্চম বলে থার্ডম্যানে খেলতে গিয়ে উইকেটকিপারের হাতে ধরা পড়েন তিনি। আউট হওয়ার আগে ২৫ বলে ৩৫ রান করেন শামীম। তার বিদায়ে ভাঙে ৩৯ বলে ৪৯ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি।

খুলনার ইনিংসের বাকি পথটা সাজান আগের ম্যাচের নায়ক আরিফুলই। ম্যাচে দারুণ বোলিং করা মুকিদুল মুগ্ধর করা ১৯তম ওভারে দুই ছক্কায় তুলে নেন ১৭ রান। শেষ ওভারে ফরহাদ রেজার ফুলটস ডেলিভারিকে ছক্কা হাঁকাতে ব্যর্থ হন আরিফুল। মিড উইকেটে তার ক্যাচ ছেড়ে দেন শেখ মেহেদি হাসান। শেষ দুই বলে চার মেরে দলকে ১৪৬ রানে পৌঁছে দেন শহীদুল ইসলাম।

রাজশাহীর পক্ষে বল হাতে ২ উইকেট নিয়েছেন ৪৪ রান খরচ করা মুকিদুল মুগ্ধ। এছাড়া ১টি করে উইকেট গেছে এবাদত, মেহেদি ও আরাফাত সানির ঝুলিতে।

(ওএস/এসপি/নভেম্বর ২৬, ২০২০)