স্টাফ রিপোর্টার : ফারমার্স ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে করা মামলায় চার আসামির জামিন কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড) ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফল হক, একই ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, টাঙ্গাইলের মো. শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা।

আদালতে এদিন দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা ও আন্না খানম কলি।

গত ১৮ আগস্ট ঢাকার চতুর্থ বিশেষ জজ আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেছিলেন। এর আগে জালিয়াতির মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংক থেকে চার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাতের মামলায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ ১১ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হয়েছে ।

দুদকের এই মামলায় অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে গত ৫ জানুয়ারি সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত।

বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতি দুর্নীতিতে অভিযুক্ত হলেন। তাকে পলাতক দেখিয়েই এ মামলার বিচার কাজ চলছে।

দুদক কর্মকর্তা বেনজির আহমেদ ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ১১ জনকে আসামি করে এ মামলার অভিযোগপত্র দেন। তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনে এস কে সিনহার ব্যাংক হিসাবের চার কোটি টাকা জব্দ করা হয়।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকে ভুয়া ঋণ সৃষ্টি করে সেই টাকা বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর, উত্তোলন ও পাচার করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

নানা নাটকীয় ঘটনার মধ্যে বিচারপতি সিনহা তিন বছর আগে বিদেশে পাড়ি জমানোর পর দুদক অভিযোগ পায়, তিনি ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ব্যবসায়ী পরিচয়ে দুই ব্যক্তির নেয়া ঋণের চার কোটি টাকা নিজের অ্যাকাউন্টে নিয়েছিলেন।

ওই বছরই তদন্তে নামে দুদক। দীর্ঘ তদন্তে পর গত বছরের ১০ জুলাই সিনহাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন।

মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় আলাদা দুইটি অ্যাকাউন্ট খোলেন। ব্যবসা বাড়ানোর জন্য পরদিন তারা ওই ব্যাংক থেকে দুই কোটি টাকা করে মোট চার কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন।

তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।

ঋণের জামানত হিসেবে আসামি রনজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয় ঋণের আবেদনে। ওই দম্পতি এস কে সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।

দুদক বলছে, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি এ কে এম শামীম কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই ব্যাংকের নিয়ম-নীতি না মেনে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দুটি অনুমোদন করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর ‘অস্বাভাবিক দ্রুততার’ সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন মোট চার কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় এস কে সিনহার নামে। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয়।

পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে ২ কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর।

এজাহারে বলা হয়, ‘আসামি রনজিৎ চন্দ্র ঋণ দ্রুত অনুমোদনের জন্য প্রধান বিচারপতির প্রভাব ব্যবহার করেন। রনজিৎ চন্দ্রের ভাতিজা হলেন ঋণ গ্রহীতা নিরঞ্জন এবং অপর ঋণ গ্রহীতা শাহজাহান ও রনজিৎ ছোটবেলার বন্ধু। দুজন ঋণগ্রহীতাই অত্যন্ত গরিব ও দুস্থ। তারা কখনও ব্যবসা-বাণিজ্য করেননি।’

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০২০)