স্পোর্টস ডেস্ক : টুর্নামেন্টে দুই দলের অবস্থাই শোচনীয়। পয়েন্ট টেবিলে সবার নিচে তিন ম্যাচে জয়ের দেখা না পাওয়া বেক্সিমকো ঢাকা। সমান ম্যাচে মাত্র এক জয় নিয়ে ঢাকার ঠিক ওপরে ফরচুন বরিশাল। এ দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ের ম্যাচে প্রথম ইনিংসটিতে আধিপত্য বিস্তার করেছে ঢাকা।

নিজেদের চতুর্থ ম্যাচে ঢাকার স্পিনারদের বিপক্ষে কোন জবাবই খুঁজে পায়নি বরিশালের ব্যাটসম্যানরা। অনিয়মিত স্পিনার রবিউল ইসলাম রবি একাই নিয়েছেন ৪ উইকেট, কিপটে বোলিং করেছেন অফস্পিনার নাইম হাসান। দুই পেসার রুবেল হোসেন ও শফিকুল ইসলামও দিয়েছেন যোগ্য সঙ্গে।

যার ফলে নির্ধারিত ২০ ওভার খেলে ৮ উইকেট হারিয়ে ১০৮ রানের বেশি করতে পারেনি বরিশাল। আসরে নিজেদের প্রথম জয় পেতে মুশফিকুর রহীমের দলকে করতে হবে ১০৯ রান।

ঢাকার আমন্ত্রণে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দেখেশুনে সাবধানী শুরু করেছিলেন বরিশালের দুই ওপেনার সাইফ হাসান ও তামিম ইকবাল। ইনিংসের প্রথম বলেই চার দিয়ে শুরু করেন তামিম। তবে পরের ওভারগুলোতে রয়েসয়েই খেলেন দুই ওপেনার। প্রথম ৪ ওভারে বরিশালের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ২৬ রান।

পঞ্চম ওভারে রবিউল ইসলাম রবির হাতে বল তুলে দেন মুশফিক। নিজের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলেই সাইফকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন রবি। আউট হওয়ার আগে ১৪ বলে ৯ রান করেন সাইফ। ঠিক পরের বলেই ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে গোল্ডেন ডাক নিয়ে সাজঘরে ফেরেন পারভেজ হোসেন ইমন। মিডঅন ও লংঅনের মাঝামাঝি জায়গায় তার ক্যাচ ধরেন তানজিদ হাসান তামিম।

এক ওভার পর ফের আঘাত হানেন রবি। এবার তার শিকারে পরিণত হন আফিফ হোসেন ধ্রুব। ছয় বল খেলেও রানের খাতা খুলতে ব্যর্থ হওয়া আফিফ, মুখোমুখি সপ্তম বলে চেষ্টা করেছিলেন উইকেট ছেড়ে ছক্কা হাঁকাতে। কিন্তু পারেননি সীমানা পার করতে। ধরা পড়ে যান লংঅফে দাঁড়ানো নাসুম আহমেদের হাতে, রানের খাতা খোলা হয়নি আফিফের।

অপরপ্রান্তে একের পর এক উইকেট পড়লেও অধিনায়ক তামিম আগলে রাখেন আরেক প্রান্ত। পাঁচ নম্বরে নামা তৌহিদ হৃদয় চাপ কমাতে হাত খুলে খেলার চেষ্টা করেন। রবির তৃতীয় ওভারে পরপর দুই বলে হাঁকান ছক্কা ও চার। তবু রানের গতি বাড়েনি বরিশালের। দশম ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেটে ৫২ রান।

ইনিংসের ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে লং অফ দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যক্তিগত ২৫ থেকে ৩১ রানে পৌঁছে যান তামিম। আর এতেই পূরণ হয় তামিমের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ৬ হাজার রান। ক্যারিয়ারের ২১৩তম ম্যাচের ২১২তম ইনিংসটি খেলতে নেমে এ মাইলফলকে পৌঁছলেন ফরচুন বরিশালের হয়ে খেলতে নামা তামিম।

আর এতেই তিনি হয়ে গেছেন কুড়ি ওভারের ফরম্যাটে ৬ হাজার রান করাদের মধ্যে বিশ্বের দশম দ্রুততম ব্যাটসম্যান। তার সামনে রয়েছেন ক্রিস গেইল, বিরাট কোহলি, ডেভিড ওয়ার্নার, ব্রেন্ডন ম্যাককালামরা। তবে তার পেছনে রয়েছেন রোহিত শর্মা, এবি ডি ভিলিয়ার্স, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, কুমার সাঙ্গাকারা, মহেন্দ্র সিং ধোনিদের মতো ব্যাটসম্যানরা।

চলতি বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপ শুরুর আগে তামিমের ক্যারিয়ার সংগ্রহ ছিল ৫৮৪৯ রান। প্রথম ম্যাচে ১৫ রানে আউট হওয়ার পর দ্বিতীয়টিতে তিনি খেলেন ৭৭ রানের ম্যাচ জেতানো ইনিংস। পরে তৃতীয় ম্যাচে ৩২ রানে আউট হলে আজ (বুধবার) তার ৬ হাজারের জন্য বাকি থাকে ২৭ রান। যা পূরণ করতে সম্ভাব্য সেরা পথ অর্থাৎ ছক্কাই হাঁকান তামিম। তবে এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেননি।

ক্যারিয়ারের ৬ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছে এক বল পরেই সাজঘরে ফিরে যান তামিম। রবিউল ইসলাম রবির শর্ট লেন্থের ডেলিভারি বড় শট হাঁকাতে গিয়ে মিডউইকেটে মুক্তার আলির হাতে ধরা পড়েন ৩১ বলে ৩১ রান করা তামিম। অধিনায়কের বিদায়ের পর দায়িত্ব নেন তৌহিদ হৃদয়। কিন্তু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের মারকাটারি রুপ দেখাতে পারেননি তিনিও।

তৌহিদ আউট হন ১৯তম ওভারে। শফিকুলের শিকারে পরিণত হওয়ার আগে ২ চার ও ১ ছয়ের মারে ৩৩ বলে ঠিক ৩৩ রান করেন তৌহিদ। একই ওভারে সাজঘরে ফেরেন ১৯ বলে ১২ রান করা মেহেদি মিরাজও। সেই ওভারটিতে কোনো রান খরচ করেননি শফিক অর্থাৎ ১৯তম ওভারে ডাবল উইকেট মেইডেন তিনি।

তৌহিদ-মিরাজের আরও একবার হতাশ করেন ইরফান শুক্কুর। প্রেসিডেন্টস কাপ মাতানো এ ব্যাটসম্যান করেন ৮ বলে ৩ রান। ইনিংসের একদম শেষ বলে তাসকিন আহমেদের ছক্কায় দলীয় সংগ্রহ পৌঁছায় ১০৮ রানে। যা তাড়া করতে পারলেই ঢাকা পাবে আসরে নিজেদের প্রথম জয়।

বল হাতে ৪ ওভারে ১ মেইডেনসহ মাত্র ৮ রান খরচায় ১ উইকেট নিয়েছেন নাইম হাসান। শফিকুল মেইডেন করেছেন ২ ওভার। তার ৩ ওভারে ১০ রান খরচায় এসেছে জোড়া উইকেট। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন রবিউল রবি। তার ৪ ওভারে ২০ রানের বিনিময়ে এসেছে ৪টি উইকেট।

(ওএস/এসপি/ডিসেম্বর ০২, ২০২০)