স্টাফ রিপোর্টার : কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের অধীনে ২০১৩ সালে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে তথা দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (সিবিআইইউ) অনুমােদন দেয় সরকার। প্রতিষ্ঠার সাত বছর পর সম্প্রতি ট্রাস্টের সালাহউদ্দিন আহমদ নামের একজন সদস্য সব প্রতিষ্ঠাতা সদস্যকে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ নতুন একটি ট্রাস্ট রেজিষ্ট্রেশন (ডিড নং: ৩১৫০, ১২ অক্টোবর ২০২০, কক্সবাজার) করে নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন।

পেশীশক্তি ব্যবহার করে নিয়ােগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্ম করছেন। এমনকি এ জবরদখল ও লুটতরাজের ক্ষেত্রে
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নাম ভাঙ্গাচ্ছে সালাহউদ্দিন আহমদের। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যদিও প্রতিষ্ঠাকালীন প্রপােজাল বুক, ট্রাস্ট ডীড় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়-বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী
কমিশনের (ইউজিসি) বিভিন্ন নথিপত্রে এ বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।

বুধবার সকাল ১১টায় বাংলাদেশ ক্রাইম রিপাের্টার্স অ্যাসােসিয়েশন (ক্র্যাব) মিলনায়তনে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের আয়ােজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মাহবুবা সুলতানা।

এ সময় আরাে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টের সেক্রেটারি ও সিবিআইইউ প্রতিষ্ঠাতা লায়ন মাে. মুজিবুর রহমান, ট্রাস্টি সদস্য আবদুস সবুর ও ট্রাস্টি সদস্য আবদুল মাবুদ।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২ জুন ২০২০ ইং তারিখে ট্রাস্টের সম্মানিত সেক্রেটারি ও সিবিআইইউ প্রতিষ্ঠাতা
লায়ন মাে. মুজিবুর রহমানের নামে একটি মিথ্যা মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে ট্রাস্টের সদস্য ও প্রাক্তন চেয়ারম্যান
সালাহ উদ্দীন আহমদ বৈশ্বিক মহামারিজনিত লকডাউন চলাকালে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যােগসাজশে
অন্যায়ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব কায়েম করেন। এরপর তিনি ট্রাস্টকে পাশ কাটিয়ে নিজেকে
বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা দাবি করে অনেক শিক্ষক-কর্মকর্তাকে অব্যাহতি দিয়ে নিয়ােগ বাণিজ্য শুরু
করেন।

অপকর্মের প্রতিবাদ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা পুনঃনির্ধারণের জন্য গত ০৭জুন
তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাত বছর পর এ ধরনের অপচেষ্টা
হাস্যকর ও ষড়যন্ত্রমূলক। যদিও প্রপােজাল বুক ও অনুমােদনপত্র অনুযায়ী সিবিআইইউ-এর প্রতিষ্ঠাতা লায়ন মাে. মুজিবুর রহমান।

বিশ্ববিদ্যালয় অনুমােদনকালে ইউজিসি কর্তৃক গঠিত পরিদর্শক দল কক্সবাজারে এসে সরেজমিনে পরিদর্শনপূর্বক যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন তাতেও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে সবচেয়ে বেশি অবদান ছিল মাে. মুজিবুর রহমানের। তাঁর দেওয়া আর্থিক অনুদানসহ সবকিছুর বিশদ বিবরণ রয়েছে। ফলশ্রুতিতে বিগত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ইং তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক এবং ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৩ ইং তারিখ ইউজিসি কর্তৃক লায়ন মাে. মুজিবুর রহমানকে উদ্যোক্তা করে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমােদনের চিঠি পাঠানাে হয়। এরপর গত ৭ বছর যাবত শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি থেকে লায়ন মাে. মুজিবুর রহমানকে প্রতিষ্ঠাতা/উদ্যোক্তা সন্বোধন করে বিভিন্ন সময়ে পত্র আদান-প্রদান হয়।

সংবাদ সম্মেলনে আরাে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তার বিষয়টি দিনের আলাের মতাে পরিষ্কার
হলেও সালাহউদ্দিন আহমদের হাস্যকর আবেদনের প্রেক্ষিতে অজানা কারণে ইউজিসিকে তদন্ত করার জন্য চিঠি
দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে চিঠির আলােকে ইউজিসির সম্মানিত সদস্য ড. দিল আফরােজা বেগমকে আহবায়ক করে
একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়। ওই তদন্ত কমিটি আমাদের কারাে সাক্ষাৎকার না নিয়ে একটি খসড়া প্রতিবেদন
তৈরি করে। বিষয়টি জানতে পেরে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শহীদুল্লাহ বরাবর একটি চিঠি প্রেরণ করা
হয়।

পরবর্তীতে আমাদের অভিযােগের ভিত্তিতে সম্মানিত ইউজিসি চেয়ারম্যান স্যারের হস্তক্ষেপে ওই তদন্ত কমিটি
পুনর্গঠন করা হয়। তাদের তদন্ত কার্যক্রম বর্তমানে চলমান। সালাহ উদ্দীন আহমদ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে
কোন ধরনের অবদান না রেখে তিনটি মিথ্যা কথার আশ্রয় নিয়ে কতিপয় দৃস্কৃতিকারীর সহযােগিতায় দীর্ঘ ৭ বছর
পর নতুন করে উদ্যোক্তা নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয়ে একটি রহস্যজনক আবেদন পত্র জমা দেন।

আবেদনপত্রে সালাহ উদ্দীন আহমদ বলেন,"২০১৩ সালে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার এক বিশাল জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাকে উদ্দেশ্য করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন- কথাটি সত্য হলেও
সালাহ উদ্দীন আহমদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে এক বিশাল প্রতারণা করেছেন। তিনি ২০১৩ সালের
কোন তারিখ, কোন মাস কিছুই উল্লেখ করেননি। কারণ তিনি ঘােলা পানিতে মাছ শিকার করতে পারদর্শী। উখিয়ার
ঐ জনসভার তারিখ ছিল ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৩। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় অনুমােদনের জন্য আবেদন করা হয় ২মে ২০১৩
সালে এবং ইউজিসির টিম আসেন একই বছরের ২৬ জুন সংবাদ সম্মেলনে লায়ন মাে. মুজিবুর রহমান বলেন, একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য একটি প্রপােজাল বুক
জমা দিতে হয়।

একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হয়। প্রপােজাল বুকে প্রতিষ্ঠাতার নাম ও জীবনবৃত্তান্ত বিস্তারিত দেয়া থাকে। ডীড় অব ট্রাস্টেও উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতার নাম স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় যে অর্থ ব্যয় হয়েছে সেটিও আমি করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন দেয়া ইউজিসির পরিদর্শন প্রতিবেদনে এগুলাের প্রমাণ রয়েছে। গত সাত বছরে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সব চিঠি উদ্যোক্তা হিসেবে আমার নামেই এসেছে। সুতরাং এ বিষয়ে কোনাে বিতের্কের সুযােগ নেই। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা, প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা। সালাহউদ্দিন আহমদ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি করায় তাকে সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

এমনকি তার আগ্রহের কারণেই ট্রাস্টের চেয়ারম্যানও করা হয়। তবে তিনি অর্থ সংস্থান থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক কর্মকান্ডে কোনাে ধরনের সহযােগিতা না করায় ট্রাস্টিদের মতামতের ভিত্তিতে নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়েছে। এখন তিনি সেটা মেনে নিতে না পেরে অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দখলের অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন।

এর অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় অনুমােদনের সাত বছর পর এর উদ্যোক্তা পুনরায় নির্ধারণের জন্য মন্ত্রণালয়ে
আবেদন করেছেন, যা হাস্যকর। এমনকি ট্রাস্টিদের ঐকমত্যের ভিত্তিতে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পরও
নির্লজ্জের মতাে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে নিজেকে বিওটি চেয়ারম্যান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা বলে পরিচয় দিয়ে
বেড়াচ্ছেন।

ভূয়া প্রতিষ্ঠাতা দাবিদার সালাহউদ্দিন আহমেদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ইউজিসি এ বিষয়ে তদন্ত করছে। এখন আমাদের প্রশ্ন হলাে- প্রতিষ্ঠার সাত বছর পর কোনাে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা নতুন করে নির্ধারণের সুযােগ রয়েছে কি না।

(জেজে/এসপি/ডিসেম্বর ০২, ২০২০)