আবীর আহাদ


ধর্মীয় চিন্তার বৈপরীত্য থাকতেই পারে । কারণ, ধর্মের জন্য মানুষ নয়, মানুষের জন্য ধর্ম । অপরদিকে কোনো ধর্ম স্রষ্টার সৃষ্টি----এমন কোনো নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না । স্রষ্টার ধর্ম বলতে যদি কোনো ধর্ম থাকতো তাহলে পৃথিবীতে এতো ধর্মের আবির্ভাব না ঘটে একটি মাত্র ধর্ম থাকতো । মূলত: মানুষই ধর্ম সৃষ্টি করেছে । আর মানুষ মাত্রই ভুল করে । সে-নিরিখে মানুষের সৃষ্ট ধর্মের মধ্যে ভুল থাকতেই পারে । সে-জন্যে জ্ঞান ও বিবেক দ্বারা পরিচালিত হয়ে কে কোন ধর্ম পালন করবে কি করবে না সেটা যার যার নিজস্ব বিশ্বাসের বিষয় । তাই ধর্ম নিয়ে দ্বন্দ্ব সংঘাত হিংসা বিদ্বেষ ও জবরদস্তির কোনো স্থান নেই । এসব বিষয়ের প্রেক্ষিতে পবিত্র কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে : যার যার ধর্ম তার তার কাছে, ধর্মের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি নেই । অনুরূপ কথা অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের মধ্যেও রয়েছে । সুতরাং ধর্মকে কেন্দ্র করে জঙ্গিপনা বা অপরের ধর্মের ওপর আঘাত হেনে কারো ধর্মমত কারো ওপরে চাপিয়ে দেয়ার লক্ষ্যে জবরদস্তিমূলক কর্মকান্ডসহ রক্তপাত ঘটানোর কোনো অবকাশ নেই ।

ধর্ম একটি বিশ্বাস । একটি অনুভূতি । পৃথিবীতে যেমন বহু মানুষের বাস, তেমনি তাদের বিশ্বাস ও অনুভূতিও হেরফের হতে বাধ্য । বিষয়টি এমন যে, আপনার কাছে যা বর্জনীয়, আমার কাছে তা গ্রহণীয় । আপনার কাছে যা পছন্দনীয় আমার কাছে তা অপছন্দীয় । আপনার কাছে যা সত্য আমার কাছে তা মিথ্যা । আপনার কাছে যা হারাম আমার কাছে তা হালাল । এভাবেই পৃথিবীর মানব সমাজের বিশ্বাসের ভিন্ন ভিন্ন প্রকৃতি গড়ে উঠেছে । তাই আপনি হলফ করে বলতে পারেন না যে, আপনি যা ভাবছেন, সেটিই সত্য । আসলে সবকিছুই আপেক্ষিক । হ্যাঁ না, সত্য মিথ্যা----এ নিয়েই মানব মনের চিন্তার বৈপরীত্য গড়ে উঠলেও তাদেরকে একই সমাজে বসবাস করতে হচ্ছে । এর মূলে রয়েছে পারস্পরিক সহাবস্থানের মানবিক দর্শন ।

কোনো মানুষ মানবিক দৃষ্টিকোণ ও যার যার মনোভাব থেকে অন্য মানুষকে মূল্যায়ন করলে কোনো সমস্যা সৃষ্টি হয় না । সমাজে প্রচলিত বহু ধর্মের শান্তিপূর্ণ অবস্থানসহ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মেলবন্ধনের মাধ্যমে বসবাস করা সুমানুষের কর্তব্য হওয়া উচিত । তাই ধর্ম নিয়ে আর কোনো হানাহানি হিংসা দ্বন্দ্ব ও সংঘাত নয়, ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শের ভিত্তিতেই কেবল আন্ত:ধর্ম সমন্বয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতিতে সমাজ দেশ ও পৃথিবী পরিচালিত হতে পারে । এটাই হোক সব মানুষের চিন্তাচেতনা ।

লেখক : চেয়ারম্যান, একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।